৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস পালন যখন দেশজুড়ে ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা, বন্দেমাতরম’ মন্ত্রে মুখরিত হচ্ছে সেদিনই অকস্মাৎ ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অন্যতম সেরা স্তম্ভ আমাদের সকলের প্রিয় ধোনির অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থকদের হতাশ করল নিঃসন্দেহে।অপর এক অন্যতম ভরসা যোগ্য ক্রিকেটার রায়নাও অবসর নিলেন কিন্তু ধোনিকে নিয়ে দেশের সীমা ছাড়িয়েও যেভাবে আবেগ স্রোত আছড়ে পড়লো এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
যদিও কয়েক বছর ধরেই অবসর নিয়ে জল্পনা চলছিল মাহির। এরপর করোনা পরিস্থিতি সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে যায় বিশ্ব জুড়ে, তাই ক্রিকেট ময়দানে সকল ভক্তদের সামনে শেষ খেলায় অবসর নেওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টির সম্ভাবনা কমে আসছিল।তবুও কেউ কিন্তু ভাবি নি সবাইকে অবাক করে নীরবে সরে যাবেন আমাদের প্রিয় অন্যতম ক্রিকেটার ধোনি।ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক কে নিয়ে আমার আলাদা করে প্রশংসা করার কিছু নেই। ধীর-স্থির কঠোর অনুশাসন, লক্ষ্যে অবিচল মানুষটি কেমন ধোনির ক্যারিয়ারই তার বড়ো প্রমান। বিশ্ব ক্রিকেটের মহাতারকা ক্রিকেটারগণ ধোনির প্রশংসা করে এটা অন্তত বুঝছেন আর একটা ধোনি পাওয়া বেশ দুস্কর।সকলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই একটা কথা আমার মনে হচ্ছে যে সবাই আজ আমরা মাহির অবদান,শূন্যতা অনুভব করছি এটা তো হতেই পারতো যদি পিছিয়ে পড়া রাজ্যের এই প্রতিভাবান ছেলেটি কোয়ালিটি থাকা সত্ত্বেও সেদিন সুযোগ না পেতো! সে যদি এই বৃহৎ মঞ্চে সুযোগ না পেতো তাহলে অচিরেই হয়তো ঝরে পড়তো যেমন অনেক প্রতিভা তলিয়ে গেছে বা এখনো যাচ্ছে ঘৃণ্য রাজনীতিতে।তাহলে সত্যিই এটা ভীষণ রকম দুঃখজনক হতো আর আমরা কিছু বুঝতেই পারতাম না,ধোনিকেও পেতাম না!
তখন থাকতাম দিল্লির আনন্দ পর্বত এলাকার এক বাঙালি মেসে।রুমমেট জামশেদপুরের ছেলে অমিতাভের মুখেই বার কয়েকবার শুনেছি লম্বা চুলের এক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রাজ্য ক্রিকেটে নাকি অসাধারণ খেলছে।তার কিছুদিন পরেই ইন্ডিয়া ক্রিকেট টিমে ধোনির সঙ্গে ভারতবাসীর পরিচিত হওয়া।এই অসম্ভব প্রতিভাধর ক্রিকেটারের নানা প্রশংসা,একেবারে ছয় লিটার দুধ খাওয়ার গল্প অসম্ভব এনার্জি ও প্রাণশক্তির কথা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল।এতক্ষণ স্রোতের টানে গা ভাসাচ্ছিলাম কিন্তু গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও অনেকের ভাগ্যাকাশে উপেক্ষিত হওয়ার ঘটনাও আকছাড় ঘটছে সন্দেহ নেই।প্রতিভাবানদের সুযোগ না দিয়ে উপেক্ষা বা কোনঠাসা করে দেওয়ার রাজনীতি এ দেশে নতুন নয় ।সম্প্রতি এই নিয়ে মিডিয়া জুড়ে শোরগোল চলছে যার তাজা উদাহরণ ধোনির ভূমিকায় অভিনয় করা এক প্রতিভাবান অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত।যেভাবে এই বুদ্ধিদৃপ্ত অভিনেতা,এক ব্রিলিয়ান্ট মানুষ নেপোটিজমের শিকার হয়ে ঝরে গেল বলা ভালো সরিয়ে দেওয়া হলো তা দেশবাসী মেনে নিতে পারেনি।সুশান্তের অনেক কিছু দেওয়ার ছিল দেশকে,অভিনয় জগতকে!লাগাতার মিডিয়ার লেগে থাকাতে কত কিছু খবর প্রকাশ্যে আসছে অবাক হচ্ছি-‘অবাক পৃথিবী অবাক করলে আরো’!
এর আগে বহু উঠতি নায়ক নায়িকা এভাবে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে কিছু নোংরা স্বার্থের কদর্যতায়।তাদের আসল রূপের প্রকাশ ঘটবে কিনা সেটা আগামীই বলবে।আমরা সত্যি কৃতজ্ঞ সেইসব নির্বাচকদের প্রতি সেই সময় ভারতীয় টিমে থাকা সতীর্থ খেলোয়ারগণ যারা ধোনী কে এগিয়ে চলার অভয় দিয়ে বিকশিত হতে পাশে দাঁড়িয়েছেন।বন্ধ হোক ছেঁটে ফেলার প্রবণতা,ঘৃণ্য রাজনীতি।কড়া শাস্তি পাক অপরাধীরা।ঘোষিত নীতি ফলপ্রসূ হোক,ফোকাস পাক যোগ্য প্রতিভাবান প্রতিভাময়ীরা দেশের কোনা কোনা থেকে।দেশের মুখ উজ্জ্বল এরাই করবে।এটা বুঝতে হবে জমি চাষ করতে বলদ প্রয়োজন,ছাগল বা ভেড়া অন্যকাজে লাগলেও লাঙ্গল টানতে বলিষ্ঠ মোষ বা বলদই সেরা।সর্বত্র এই প্রভাব বিরাজমান,
সরকারি অফিস হোক বা যেকোনো সুযোগ সুবিধা দেবার পেছনে পাইয়ে দেবার অন্য গন্ধ।কি দেখি আমরা অফিস গুলোতে?উঁচু পোস্ট দখল করে আছে যারা, স্রেফ টাকা দিয়ে ক্ষমতা দখল আর তাদের কাজ সামলাচ্ছে সামান্য বেতনের অস্থায়ী যোগ্য শিক্ষিত ব্যক্তি আর তাতেই অশিক্ষিত অযোগ্য পদাধিকারী ব্যক্তিদের কতই না রোয়াব!এর যে শিকড় গেঁথে আছে সমাজের গভীরে প্রতিবাদ করলে প্রতিফলিত হতে দেখি প্রতিহিংসা,পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার হুমকি, ক্ষমতার অপব্যবহার!তাই সবকিছুই আমরা জেনে বুঝেই বোবা হয়ে থাকি,আবার প্রতিবাদ করি,মোমবাতি জ্বালিয়ে স্মরণ সভা করে চোখের কোল ভেজাই। না জানি ধোনিকেও না কত বার পরীক্ষা দিতে হয়েছে টিকে থাকার জন্য,এ যেন সত্যিই এক মানসিক চাপ,সবাই পারে না সহ্য করতে ।আজ আমরা ধোনির জন্য জয়ধ্বনি করছি ভাগ্যিস সেদিন এই ছেলেটাকে বঞ্চিত করেনি তার ভাগ্য-প্রচেষ্টা।আফসোস হচ্ছে সুশান্ত সিং রাজপুতের জন্য,কে না বলতে পারতো আগামীতে সে নিশ্চয় সকলকে টপকে বলিউডে রাজ করতো কিন্তু পারলো না এটা আমাদের কাছে দুঃখের ও লজ্জার। যোগ্যতমের উদ্বর্তন ঘটুক তবেই সমাজ দেশ এগিয়ে চলবে প্রকৃত গুণীদের সংস্পর্শে।