গৃহকোণ : উজ্জ্বল সামন্ত।।

0
490

আজ কেমন যেন সানাইয়ের সুরটা লাগছে। দ্বিতীয় বার নতুন জীবনে প্রবেশ করতে চলেছে উষসী। মনে যেন দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভয় সঙ্গে কিছুটা আনন্দ রয়েছে। বিয়েতে বাবা নহবতের সানাই আনিয়ে ছেন ।

উষশীর গত সংসার জীবনে যেখানে ছন্দ‌ হারিয়েছিল একরাশ ভয় তিক্ততা ঘেন্না ও লজ্জায়। প্রেম করে বিয়ে করেছিল কলেজ ফ্রেন্ড ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতিকে উষসী । অর্ণব সুদর্শন , সুন্দর কথা বলতো । কলেজে সোশালে উষসীর প্রতি আকৃষ্ট হয় গান শুনে অর্ণব। অর্ণবের প্রেমের নিবেদন নাকচ করতে পারেনি উষসী। দু’বছর পর সম্পর্কটা বাড়িতে জানাজানি হয়। অনিশা উষসী বাড়িতে জানিয়ে দেয়। উষসী অনিশা র বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। হয়তো অর্ণব এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল অনিশা কিন্তু ও প্রপোজ করার আগেই অর্ণব উষসী কে প্রপোজ করে ওর সামনেই। অনিশা এটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তাই ভালোবাসার যন্ত্রণায় মনে রাগ পুষে ছিল। অনেক কিছু বলেছিল অর্নবের সম্বন্ধে যদি সম্পর্কটা ভেঙে যায়। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।

উষসীর বাড়িতে তুমুল অশান্তি। উষসী বাবা মেয়েকে বারবার সাবধান করেছিল ।কারণ তিনি প্রেম করে বিয়ে করবে একমাত্র মেয়ে এটা মেনে নিতে পারেননি। উষসীর বাবা কলিগের একমাত্র ছেলে সঙ্গে বিবাহ ঠিক করে। পাত্র একজন প্রখ্যাত ডাক্তার বিদেশে থাকেন। কিন্তু অর্থ প্রাচুর্য উষসীর প্রকৃতি কে নাড়াতে পারেনি। বাবার অমতে একদিন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে অর্নবের হাত ধরে। একটা চিঠি লিখে রাখে টেবিলের ওপর। বাপি আমাকে ক্ষমা করো। আমি ভালোবাসাকে বরণ করলাম।

জাঁকজমক হীন ভাবে মন্দিরেই সিঁদুর দান হয়। অর্ণব ওর বাবা-মা ও দিদি একটা দু কামরা ভাড়া বাড়িতে থাকত। যে বিলাস প্রাচুর্যে আভিজাত্যের পরিবেশে উষসী বড় হয়েছে, বর্তমানে তার শ্বশুরবাড়িতে সেরকম কিছুই নেই তবুও সে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিল। সন্ধ্যায় কোনরকমে বধূবরণ করে উষসী ঘরে তুলে নেন শাশুড়ি মা।
ফুলশয্যার সেই রাতে যা এক স্বামী-স্ত্রীর মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে অর্ণব সারারাত বন্ধুদের সঙ্গে ড্রিঙ্ক করে প্রায় ভোর বেলায় ঘরে ঢোকে । সারারাত স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে কখন বুঝি চোখ বুজে এসেছিল। অন্ধকার ঘরে কেউ যেন তার সর্বস্ব লুট করছে পশুর মত। একটা তীব্র উদ্ভট গন্ধ । উষসী চিৎকার করতে যায় কিন্তু পুরুষালী হাত তার মুখে বাধা দেয়। তার নরম উন্মুক্ত শরীর রক্তাক্ত পুরুষালী ছোবলে।যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে গোঙানী শুরু হয় কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। সকালে বিছানা থেকে উঠতে পারে না। কিন্তু এ কথা কাকে বলবে, কেউ আমল দেবেনা। হাসি ঠাট্টা তামাশা করবে। এইভাবে দু-তিন দিন যাওয়ার পর উষশী শরীর খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। দুদিন চিকিৎসার পর অষ্টমঙ্গলায় একেবারে বাড়ি ফেরে। বাবা হাসপাতলে গিয়েছিলে মেয়েকে দেখতে। মেয়ের শুকনো মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন। তাই মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিল কি হয়েছে। না বুঝতে পারেননি। অগত্যা ই একমাত্র মেয়ের ভুলকে ঠিক মেনে নিয়ে নেমন্তন্ন করে আসেন অষ্টমঙ্গলায় যাওয়ার জন্য।
বাপের বাড়িতে গিয়ে উষসী কান্নায় ভেঙে পড়ে। পীড়াপীড়ীতে মা কে কিছুটা জানায়। অর্ণব সঙ্গে আসেনি।

অষ্ট মঙ্গলার দিন কোনরকমে শ্বশুরবাড়িতে কাটিয়ে অর্ণব বাড়ি ফিরে যায়। দিন কয়েক পরে শশুর বাড়িতে ফেরে উষসী। শ্বশুরবাড়ি থেকে আর্থিক চাপ আসে পণের জন্য । কিন্তু উষসী সে কথা জানায় না বাপের বাড়ির কাউকে। শারীরিক অত্যাচার নিপীড়ন চলতে থাকে। অর্ণব একদিন উষসী কে বলে নেপাল যাবে ঘুরতে? উষসী কিছুটা অবাক হয় কিন্তু পরেই ভেবে রাজি হয় হয়তো ওর স্বামীর মন বদলে গেছে। দুজনে বেরিয়ে পড়ে দিন কয়েকের জন্য।

নেপালের হোটেলে পরের দিন রাত্রে উষসীকে জোর করে মদ্যপান করায় অর্ণব। পরদিন সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙে গানের আওয়াজে। উষসী দরজার বাইরে বেরিয়ে দেখে একজন পায়ে নূপুর বেজে নাচ গান করছে ও কয়েকজন মদ্যপ বাহ্ বাহ্ করছে। এ কোন জায়গায় এসে পরল উষসী? মনে মনে ভাবতে থাকে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে অর্ণব, ভালোবাসার এই পরিনাম অপেক্ষা করছিল তার জন্য। বুদ্ধি ও কৌশল খাটিয়ে তার পরদিনই ওখান থেকে পালিয়ে যায়। কিছুদিন পর শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে স্বামীর দিকে বন্দুক তাক করে এক রাউন্ড গুলি ফায়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অর্ণব। সেখান থেকে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। বিচারে কিছু বছর সাজা হয় উষসীর।

জেল থেকে যেদিন মুক্তি পায় উষসী সুশীল বাবু ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়। উষসী একটা এনজিও গঠন করেন। আশ্রয়ের নামে একটি অনাথ শিশুদের জন্য স্কুল খোলেন। সুশীল বাবুর বন্ধু ছেলে যিনি ডাক্তার দেশে ফিরেছেন। শুশীল বাবু ওকে একদিন চায়ের আমন্ত্রণ জানান। সৌমাল্য সোফায় বসে গল্প করছে। উষসী কফি নিয়ে আসে।
অর্ণব কফিতে চুমুক দিতে দিতে উষসী লক্ষ্য করে। চলে যাবার পর সৌমাল্য জানতে চায় উষশীর কথা। সুশীল বাবু মেয়ের জীবনের সব কথা সৌমাল্য কে জানায়। বর্তমানে এনজিও ও আশ্রয় নামে একটি অনাথ আশ্রম গড়েছে। সৌমাল্য খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। সুশীল বাবুর মেয়ের সঙ্গেই তো বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তারপর সৌমাল্য কে বাড়ি থেকে বলেছিল ওখানে বিয়ে হবে না। কেন জানতে চাইলে সৌমাল্য র বাবা কোন কারন বলতে চাননি। বিদেশে গবেষণায় ব্যস্ত ছিল সৌমাল্য তাই আর এই ব্যাপারটায় বেশি এগোয়নি।

সৌমাল্য বাড়ি ফিরে ওর বাবাকে জানায় নার্সিংহোম প্রাকটিস এর পাশাপাশি একটি অনাথ আশ্রম এ চিকিৎসার জন্য মাঝে মধ্যে আশ্রয়ের ওখানে যাবে আগামী সপ্তাহ থেকে।
সৌমাল্য আশ্রয়ের বাচ্চাদের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মিশে যায়। প্রতিদিন সপ্তাহে একদিন ওখানে চিকিৎসা পরিষেবা দেয়। উষসী সঙ্গে বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়। একদিন উষসী কে দেখে একটি বাচ্চার পা কেটে যাওয়ার ফাস্টেড করতে ব্যস্ত।আশ্রয়ের অনাথ বাচ্চাদের নিজের ছেলের মতোই যত্ন করে।
অনাথ আশ্রমের বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সৌমাল্য। অনুষ্ঠান শেষে ঐদিন ও উষসী কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। উষসী হতচকিত। উষসী বলল আমার একটা অতীত আছে। সৌমাল্য বলেছিল আমি জানি। তারপরও আপনি আমাকে গ্রহন করবেন? সমাজ সংসার কি বলবে? সৌমাল্য বলেছিল কোনো বাধাই আমার কাছে বাধা নয়। শুধু বলো তুমি রাজি কিনা? উষসী ভেবে দেখার জন্য সময় চায়।

সৌমাল্য একদিন বাবা মা কে নিয়ে উষসী বাড়িতে হাজির। সৌমাল্য বাবা-মা আলাপচারিতায় সুশীল বাবু হতচকিত হয়ে যান বিয়ের প্রস্তাবে সৌমাল্যর সঙ্গে উষসীর। উষসী কে ডেকে পাঠান। কফি টেবিলে রেখে উষসী কে বসতে বলেন। প্রস্তাবটা রাখেন উষসীর সামনে। উষশীর চোখে জল। সৌমাল্য র মা বলেন আর তুমি কোন দিন কাঁদবে না মা। এবার থেকে তুমি হাসবে প্রাণ খুলে।

মাসখানেক পর এক সন্ধ্যায় গোধূলিলগ্নে সৌমাল্য বরমালায় বরণ করে নেয় উষসী কে । নহবতের সানাইয়ের মধুর সুরে চারিদিক মুখরিত…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here