বাংলাদেশের একটি অতি জনপ্রিয় ভ্রমন স্থান হলো হামহাম জলপ্রপাত। পাহাড় প্রেমীদের অন্যতম একটি তীর্থস্থান। অত্যন্ত দুর্গম আর গভীর জঙ্গলে অবস্থিত এই জলপ্রপাত পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রতি পদে পদে যেমন রয়েছে বিপদের ভয়, তেমনি রয়েছে রোমাঞ্চের হাতছানি। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত এই হামহাম ঝর্ণা। স্থানীয়ভাবে একে চিতা ঝর্ণা নামেও ডাকা হয়। এই ঝর্ণাটির উচ্চতা নিয়ে কিছুটা মতান্তর রয়েছে। ১৬০/১৭০ ফুট উঁচু এই ঝর্ণাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃত। হামহামের দেখা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে শ্রীমঙ্গল/মৌলভীবাজার, বাস/ট্রেন যেকোন টাতেই যাওয়া যায়। এরপর জীপ/সিএনজি নিয়ে যেতে হবে কলাবন পাড়া। পথে সবাই খুরমা ঘাটে নাস্তা সেরে নিতে পারেন। তবে সঙ্গে একজন গাইড নিতে ভুলবেননা যেন। অত্যন্ত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হামহাম পর্যন্ত তিনিই নিয়ে যেতে পারবেন আপনাকে। ভ্রমনটা আরও সহজ হবে৷
কুরমা বন বিট রাজকান্দি রেঞ্জ এখান থেকেই শুরু হবে পায়ে হেঁটে চলা। হামহাম যাওয়ার রাস্তা দুটো। একটা হচ্ছে ঝিরিপথ আরেকটা হচ্ছে পাহাড়ি পথ। যদিও আমরা দুপথেই বিচরন করেছি, বর্ষাকালে এই ঋতুতে যেতে চাইলে আপনাকে পাহাড়ী পথ ধরেই এগোতে হবে। এই পথে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ঘন জঙ্গল, ছোট বড় কয়েকটি পাহাড় আর ঝিরি।
বনে ঢুকতেই কানে আসবে হটাৎ অচেনা পাখির ডাক আর অবিরাম ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সময় গড়ানোর সাথে সাথে জঙ্গলও ঘন হতে থাকে। কলা বন, বাশঁ বন দেখে মনে হবে পৃথিবীর সব বাশঁ এখানেই জন্মায় দুচোখ যতদুর যায় বাশঁ আর বাশঁ৷ ঘন বাশঁ বনের ঝিরির পথটা ডেকে রেখেছে বাশেঁর ছাউনি দিয়ে৷ অনেকটা পথ হেটে যেতে হবে ঝিরির জল পথ দিয়ে, ঝিরিতে পিচ্ছিল পাথর, পড়ে থাকা বাশঁ দেখে না চল্লে কিছুটা বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
জলপ্রপাত পর্যন্ত পৌঁছতে ছোট বড় কয়েকটি পিচ্ছিল পাহাড়ও পাড়ি দিতে হয়। এই পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দাঁড়ালেও আসবে বিপদ। সেই বিপদ আর কিছুই না, দাঁড়ানো মাত্রই চারপাশ থেকে আপনাকে ঘিরে ধরবে অসংখ্য জোঁক। সবাই বলে হামহামের পথ হচ্ছে জোকদের রাজ্য। এর থেকে বাঁচতে চাইলে যতটুকু সম্ভব শরীর ঢাকা কাপড় পরুন। পায়ে জুতো বা উঁচু বুট পরলে ভালো। আর সাথে লবণ নিতে ভুলবেননা। সাবধানতা অবলম্বনের পরেও যদি জোঁক ধরে, তখন লবনই ভরসা। লবণ দিলেই সাথে সাথে ছেড়ে দেবে। তাই খুব বেশি না থেমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হেঁটে যাওয়াই ভালো। তবে তাড়াতাড়ি হাঁটলেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, পথ অনেক পিচ্ছিল ও খাঁড়া। পরে গেলে মারা যাওয়ার ভয় না থাকলেও নাক-মুখ বা হাত-পা ভাঙার সম্ভাবনা আছে। আর যেহেতু পাহাড়ী পথে চলার অভ্যাস নাই অনেকেরই তাই ছোট্ট একটু অসাবধনতাই হতে পারে বড় বিপদের কারণ।
ঝর্ণার ঠিক নীচেই রয়েছে গভীর খাদ। তাই সাঁতার না জানলে খুব কাছে না যাওয়াই ভালো। ঝর্ণার জলে যত ইচ্ছে লাফালাফি করলেও খেয়াল রাখবেন আপনাকে আবার সেই দূর্গম পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হবে। এই ঘন জঙ্গলে বিকেলের পর সূর্যের আলো পৌঁছায় না। আর অন্ধকারে এই পথ পাড়ি দেওয়ার কথা চিন্তা না করাই ভালো। হামহাম দর্শন আপনাকে মুগ্ধ করবে নিশ্চিৎ, দেবে অনাবিল সৌন্দর্যের অনুভূতি।
।।তথ্য : সংগৃহীত।।