ইউরোপ থেকে : রাজাদিত্য ব্যানার্জী।

0
5100

সুদূর রোমানিয়া থেকে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কারো এসেছিল দেখা করতে। সম্প্রতি এসেছে ফিনল্যান্ডে।

রোমানিয়ার সবচেয়ে বড় শহর ও রাজধানী বুখারেস্টের রাস্তায় মাইনাস ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অর্ধমৃত কারোকে উদ্ধার করে আমার ফিনিশ বন্ধু মিকা ও তার স্ত্রী ফ্লোরিয়া। যাদের ভরসা করেছিল কারো, তারাই তার বিশ্বাস ভাঙে। হয়তো সেদিন সে ভেবেছিল মানুষ চেনা বড় দায়।

হ্যাঁ, ত্যাগ করেছিল তারা কারোকে। প্রবল শীতে তার অসহায় দু’টি চোখ যখন আশ্রয় খুঁজেছিল, তারা ফেলে দিয়ে এসেছিল তাকে। বুখারেস্টের রাস্তায় একা। বরফ-হাওয়াকে সঙ্গী করে অজানা বিপদের আশঙ্কায় ঠকঠক করে কেঁপেছিল কারো।

আজও মাঝে মধ্যে কারো ভয়ে কাঁপে। খুব কাছে গেলেই ভয় পেয়ে যায়। ডাক্তাররা বলেছেন, ট্রমা কাটতে অনেক অনেক দিন সময় লাগবে ওর। ভয় ঠাণ্ডা রক্তের মতো জমাট বেঁধে গেছে ওর হৃদয়ে।

যারা ওর বিশ্বাসটাকে খুন করেছিল সেদিন রাতে, তাদের অভিনন্দন। নিজেদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দ্বিপদ প্রাণী হিসেবে দাবি করে আসা আমরা মানুষরা এর চেয়ে বেশি আর কি করতে পারি?
মার্ক টোয়েন সাধে বলেছিলেন
” The more I learn about people, the more I like my dog ”

দাদার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর, অভিমানী চোখে তাকালো। মনে হলো জিজ্ঞেস করলো: ভবঘুরে আর কত পালিয়ে বেড়াবে? হারিয়ে যেয়ো না কিন্তু!

হিংসে আর বেইমানি দেখে দেখে আমার চোখ অভ্যস্ত। হঠাৎ সেই চোখে দেখা গেল জলের ধারা। অবলা প্রাণীর অবুঝ মনও কাঁদে। তাতে মুখোশ নেই, আছে বিশ্বাসভঙ্গের বেদনা।

আমার বাড়ির সারমেয় গুন্ডার কথা মনে পড়ল। দাদা চলে যাওয়ার পর ও সিঁড়িতে অপেক্ষা করতো: কখন দাদা নামবে!

এক অন্তহীন অপেক্ষা। দাদা আর নামেনি, গুন্ডাও অভিমানে তারা হয়ে গেল|

ভাগ্যিস কারো, ভোম্বল (আমার আর এক বন্ধু, গোল্ডেন রিট্রিভার) আছে। তাই বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে।

হেলসিঙ্কি। ফিনল্যাণ্ড।
০১ ডিসেম্বর ২০১৮
১৮:০৯ মিনিট
কপিরাইট। রাজাদিত্য ব্যানার্জী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here