সন্দীপ দেঃ-বর্তমান সময়ে গোটা বিশ্ব এক অজানা ভাইরাসের আতঙ্কে আতঙ্কিত। এই ভাইরাসের নাম নোভেল করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের কবলে রাজ্য, দেশ ও বিশ্ব দোলাচালে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষও এর বাইরে নয়। আমাদের দেশেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০০০ ছাপিয়ে গেছে। মৃত্যু ঘটেছে বেশ কিছু জনের। দিনের পর দিন করোনা আতঙ্ক আমাদের মনের মধ্যে বেশি করে গ্রাস করছে। আমরা প্রত্যেকেই আশঙ্কার অশনিসংকেত যেন দেখতে পাচ্ছি।
আবার বিশেষ করে হোয়াটস অ্যাপ থেকে ফেসবুক যেদিকেই তাকাই না কেন, সেদিকেই বিভিন্ন যা সব তথ্য উঠে আসছে যা সত্যিই ভয়ঙ্কর।সেখানে দেখা যাচ্ছে নানা মুনির নানা মত।কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই।নেট দুনিয়ার ভয়ঙ্কর সব তথ্য মানুষজনকে আতঙ্কিত, চিন্তাগ্রস্থ করে তুলছে।কিন্তু যেখানে সরকার বারবার আতঙ্ক মুক্ত থাকার কথা বলছেন, সেখানে মানুষজন আরও বেশি করে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। যার কারণে সরকারকে কড়া হাতে মোকাবিলা করার জন্য ভুয়ো খবর ছড়ানো ও বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে সর্তকতা বার্তা। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষজনকে ভুয়ো তথ্য আদান প্রদানের জন্য গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস কি? ইহা কিভাবে সংক্রামিত হয়? কিভাবে এর প্রতিরোধ করা সম্ভব? লকডাউন কেন জরুরী? বাড়িতে বসে কি এর সংক্রমণ আটকানো সম্ভব? কাদের শরীরে সংক্রমনের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি? এই সমস্ত প্রশ্ন দানা বাঁধছে মানুষের মনে। কিন্তু মিলছে না সঠিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের জবাব। ফলে মানুষের মনে সৃষ্টি হচ্ছে ভ্রান্ত ধারণার, ছড়াচ্ছে গুজব।
এই সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়ো তথ্য ছড়ানো রোধ করতে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে, সঠিক প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানতে, এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে এগিয়ে এসেছে টিম অ্যাপোলেনিয়াস। যার কান্ডারী এক বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার যিনি খড়গপুর আইআইটির প্রাক্তনী। নাম সৌভ মজুমদার।সৌভ মজুমদার জানান, তিনি এবং তাঁর কয়েকজন সহকারি ইঞ্জিনিয়ার মিলে তৈরি করেছেন পৃথিবীর সর্বপ্রথম দ্বিভাষিক ‘ভয়েসবট’।এটি একটি কৃত্রিম মেধাসম্পন্ন যান্ত্রিক মানব। তিনি জানান ওয়েবসাইটের নাম www.denguebot.in। কেবলমাত্র মোবাইল বা ল্যাপটপ এর মাধ্যমে অপেরা মিনি ব্রাউজার এর মাধ্যমে এই ওয়েবসাইট খুলে প্রশ্ন করলেই মিলবে এ ভাইরাস সম্বন্ধে নানা প্রশ্নের উত্তর। শুধু তাই নয় প্রশ্ন লিখতে হবে না, শুধু মুখে বললেই কন্ঠস্বরের মাধ্যমে লিখিত আকারে জবাব দেবে এই ‘ভয়েসবট’। বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় প্রশ্ন করা যাবে। এবং উত্তর মিলবে দুই ভাষাতেই। তিনি আরো জানান এই ‘ভয়েসবট’ এর সমস্ত তথ্য whoএর ম্যানুয়েল মেনেই তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরো জানান এই ওয়েবসাইটে আছে প্রচুর তথ্য ভান্ডার যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট এর সাথে যুক্ত।তিনি আরো জানান এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওয়েব সাইটে আপলোড হওয়া সমস্ত তথ্য এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।তিনি জানান এই ওয়েবসাইটে একই সাথে যুক্ত আছে হাভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর গবেষকদের গবেষণা পত্রের লিঙ্কও। এই ‘ভয়েসবট’ আরো একটি বিশেষত্ব হলো শুধু করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে উত্তর দিয়েই ক্ষান্ত নয়, এছাড়াও এই ভয়েসবট এর সাহায্যে কোন কোন হসপিটালে কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয়, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নাম্বার, চিকিৎসকদের বিস্তারিত তথ্যের পাশাপাশি মিলবে করোনা ভাইরাসের হেল্পলাইন নাম্বারও।
এই ‘ভয়েসবট’ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সাহায্য করেছে IBM USAএরThomas J Watson Lab এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত তথ্য সন্ধানে সাহায্য করেছেন চিকিৎসক অমিতাভ ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন ২০১৩ আইআইটি থেকে পাশ করার পর যখন ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত বেড়েছিল তখন ডেঙ্গুর মোকাবিলা করার জন্য চিকিৎসক অমিতাভ ভট্টাচার্যের পথনির্দেশ মেনেই প্রথম ডেঙ্গুর জন্যই এ সফটওয়্যার তৈরি করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে কোভিড-১৯ এর মোকাবিলা করার জন্য এই সফটওয়্যারকে আরো ডেভেলপ করেছি।
এরপরই তিনি বলেন,পৃথিবী এক বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন এই ‘ভয়েসবট’ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলবে,এবং সঠিক তথ্য পেতে সাহায্য করবে। এবং মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে দেশকে অনেকটাই সাহায্য করবে।