সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – সাপ কথা টি শুনলে যে কেউ একলাফে বাপরে বাপ বলে লাফিয়ে উঠবেন।সে বিষধর হোক কিংবা বিষহীন সাপ হোক।সেই সাপের বিষয়ে পুঙ্খানুপূঙ্খ জানতে ‘সাপ’কে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করার দাবী উঠলো।দাবী তুললেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক সহ ‘ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা’।উল্লেখ্য ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে দীর্ঘ প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে সাপ নিয়ে সচেতনতার কাজ করে চলেছে। আবার সাপের কামড় খেয়ে মৃতপ্রায় রোগীরা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে সুস্থ হয়েছেন।এমনকি ভিনজেলা থেকেও সাপে কামড়ানো রোগীরা ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আসেন চিকিৎসার জন্য।
অন্যদিকে সাপের কামড়ে বেশীরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সুন্দরবন এলাকায়।বিশেষ করে চিকিৎসা না করিয়ে ওঝার দ্বারস্থ হওয়ার জন্য মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তাছাড়াও কোন বিষধর সাপ এবং বিষহীন সাপ সে সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের ধারণা না থাকায় এমন প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে চলেছে।বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় যত সংখ্যক মানুষের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে তার সমস্তটাই প্রায় ‘কালাজ’ সাপে কামড়ে।
মূলতঃ কালাজ সাপ কামড় দিলে ক্ষতস্থানে দাগ প্রায় থাকেই না,জ্বালা যন্ত্রণা করে। ফলে বোঝা মুশকিল।কালাচ কামড়ের এর ক্ষেত্রে সাধারণত রোগীর পেট ব্যাথা,বমি বমি ভাব এবং চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।সাপের কামড় বুঝতে না পেরে বিভিন্ন ভাবে ওঝা-গুনীন দেখানো এবং পরে গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে ডাইরিয়ার চিকিৎসা এবং সর্বশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রোগী।ফলে সাপে কামড় দিলে কি কি লক্ষ্যন দেখে বোঝা যাবে সে সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের প্রায় ধারণা নেই বললেই চলে।
ফলে দিনের পর দিন এমন ঘটনা পরিলক্ষিত হওয়ায় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকরা এবং ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।‘সাপের কামড়ে আর একটিও মৃত্যু নয়’ এই স্লোগান বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তাঁরা প্রকাশ করেছেন ‘পকেটে সাপ’ নামক একটি পুস্তিকা।যে পুস্তিকা পড়ে সহজেই জানা যাবে সাপের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এবং কামড় দিলে তার চরিত্র এবং বিশেষ লক্ষ্যন।
পুস্তিকা প্রকাশের পাশাপাশি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের স্নেকবাইট ট্রেনিং হলে বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় এই পকেটে সাপ পুস্তিকা।উপস্থিত ছিলেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডাঃ অপূর্বলাল সরকার,সর্পবিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায়,চিত্তরঞ্জন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু নাথ,ক্যানিং যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার প্রধান বিজন ভট্টাচার্য,দেবাশীষ দত্ত সহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
পকেটে সাপ পুস্তিকা সম্পর্কে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সুপার ডাঃ অপূর্বলাল সরকার জানিয়েছেন ’স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা সাপ সম্পর্কে অবগত হলে আখেরে লাভ হবে সমাজের। কমবে সাপের কামড়ে প্রাণহানীর সংখ্যাও। এ ছাড়াও যদি সাপ সম্পর্কিত তথ্য পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে অচীরে সাপের কামড়ে আর কাউকে মৃত্যুর সম্মূখীন হতে হবে না। ’
অন্যদিকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক সমরেন্দ্র নাথ রায় জানিয়েছে ‘সাপ সম্পর্কিত তথ্য এবং ছবি পাঠ্যপুস্তক এ অর্ন্তভুক্ত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ একটা শিশু পাঠক্রম থেকে যদি সাপ সম্পর্কিত অভিঞ্জতা সঞ্চয় করতে পারে,তাহলে সে তার পরিবার কে সাপ সম্পর্কিত তথ্য জানিয়ে সচেতন করতে পারবে। এছাড়াও সাপ চিনতে পারলেই সাপের কামড়ের রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে দ্রুততার সাথে সুস্থ করে তোলা সম্ভব এবং সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার কমতে বাধ্য। ’