ছাত্রছাত্রীদের জন্য উদ্যোগ।।

0
988

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, নিজস্ব সংবাদদাতা:- অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথে আনে শিক্ষা। সেই শিক্ষার কারীগর পরিবারের বাবা-মা সহ শিক্ষক। প্রবাদেও আছে শিক্ষক জাতির মেরুদন্ড।যাঁরা কিনা সভ্য সমাজগড়ার মুল কারীগর।সেই শিক্ষক মহল এবার এগিয়ে এলেন দরিদ্র অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্যার্থে।
এ এক অভিনব বিরল উদ্যোগ যা জেলা তথা রাজ্যে প্রথম।
প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লক। অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এলাকা বলেই চিহ্নিত। তবে বর্তমানে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হলেও এখনও অসহায় দীনদরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েরা গভীর অন্ধকারে রয়েছে। শিক্ষার আলো সঠিক ভাবে পৌঁছাতে পারেনি প্রত্যন্ত প্রান্তিক এলাকায়।চাইলেই তো আর সম্ভব নয়!যাদের দিন কাটে নুন আনতে পান্তা ফুরায়,স্থায়ীভাবে মাথা গোঁজার ঠাই নেই!
তবে এমন কঠিন বাস্তব সত্য কে হার মানিয়ে শিক্ষার আলো কে প্রসারিত করার উদ্যোগ গ্রহন করেছেন এলাকার দুই প্রবাদ প্রতিম বিশিষ্ট শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত শিক্ষক বিবেকানন্দ পাল,নিমাই মালি।বিগত দিনে অসংখ্য স্কুলছুট পড়ুয়াকে স্কুলমুখী করতে সক্ষম হয়েছেন।বিন্তু গোল বাধে আম্ফান সাইক্লোনের পর।
একদিকে করোনার করাল গ্রাস আর অন্যদিকে ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় আম্ফানের ভয়াবহ আক্রমণে সুন্দরবনের মানুষ দিশেহারা। কাজ হারিয়ে খাদ্য কষ্টে কোন রকমে দিনযাপণ করছে।বেশকিছু দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীর বাসস্থান সাইক্লোনে তছনছ হয়ে গিয়েছে।প্রথমত দারিদ্রতা এবং দ্বিতীয়ত মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে আবারও স্কুল ছুট হওয়ার পথে এলাকার বেশকিছু পড়ুয়া।এমন হতে থাকলে অচীরে স্কুলছুট সংখ্যাটা ক্রমেই যে বাড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই।ছাত্র ছাত্রীদের এমন করুণ পরিস্থিতির কথা গভীর ভাবে রেখাপাত করে স্বহৃদয় দুই শিক্ষকের।উদ্যোগ নেন তাঁরা।যাতে করে বিকশিত হওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা অচির ভবিষ্যতে হারিয়ে না যায়। চিন্তায় পড়ে যায় দুই শিক্ষক।ইতিমধ্যে তাঁদের এমন উদ্যোগ কে বাস্তবায়িত করার জন্য হাত বাড়িয়েদেন কর্নেল ‘ভুপাল লাহিড়ি মেমোরিয়াল নিউট্রিশন এনহান্সমেন্ট’।দুই শিক্ষক বাসন্তীর নফরগঞ্জ এলাকার বিরিঞ্চিবাড়ী,ঠাকুরঘেরী এরপানখালি ,দক্ষিন গরানবোস,হিরন্ময়পুর চুনাখালী গ্রামে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য ফিনাইল হ্যান্ড স্যানিটাইজার মাস্ক নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। পরে এলাকার প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের হাতে সাহায্য তুলে দেয়। বিরিঞ্চিবাড়ি,ঠাকুরঘেরী ও চুনাখালি গ্রামে একদিক্রমে কুড়িদিন কমিউনিটি কিচেন সেন্টারও চালু করেন।সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ পরিবারের দুবেলারের ব্যবস্থা করেন। সাহিত্যিক শুভ্রেন্দু রায়চৌধুরী ও তাঁর সহধর্মিনী ঝর্না রায়চৌধুরী সহ তাঁদের দেশে বিদেশের একাধিক বন্ধুবান্ধব উদারহস্তে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষের খাদ্যের সমস্যা মিটলেও বহু পরিবারের মাথার উপর ছিল ছাদ।অসহনীয় অবস্থার মধ্যে খোলা আকাশের নীচে কোন রকমে বসবাস করতে থাকেন দুর্গতরা।গৃহহীন ছাত্রছাত্রীদের পুর্ন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির পুনঃনির্মানের কাজ শুরু করেন ।বিরিঞ্চিবাড়ী গ্রামের কামনা বেরা‘র বাড়ি পুনর্নির্মানের কাজ দিয়ে শুরু হয় পথচলা। আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীর গৃহ নির্মানের কাজ ।একে একে বিরিঞ্চিবারীর কামনা বেরার সঙ্গে সোমাশ্রী গায়েন ,শংকর সরদার ,নফরগঞ্জের কৃষ্ণেন্দু দাস,রেবতী সিং দীপক সর্দার এর বাড়ী ।মাত্র পনের মাসে নফরগঞ্জ ,বিরিঞ্চিবাড়ি,হিরন্ময়পুর ,চুনাখালি ,ভরতগড়, জয়গোপালপুর,রানীগড় প্রভৃতি গ্রামে পঞ্চাশ জন ছাত্রছাত্রীর বাড়ি নির্মিত হয়েছে।শিক্ষক সাহিত্যিকদ্বয়ের এমন মিলত প্রচেষ্টা কে আরো সুদূর প্রসারী করে অদুর ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরবর্তী সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কবি সুনীল করণ,প্রবাসী বাঙালী রণবীর দেব,হীরেণ সিংহরায়,পার্থ সরকার, সাহিত্যিক দুর্গাদাস মিদ্যা ,অরুন রায়চৌধুরী ,বিশ্বজিত সেন ,সমীর কবিরাজ,কর্নেল সৌম্য মজুমদার ,সঞ্জয় কুমার ,সন্দীপ কুমার অনির্বান ঘোষ সহ অন্যান্য বিশিষ্টররা।
অন্যদিকে বাসন্তীর চুনাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের রুনা পিয়াদা,নার্গিস মোল্লা,কাজলি মালিক,রাজদ্বীপ সর্দার,
শিক্ষক ও সাহিত্যিকদের কাছ যেকে এমন সহযোগিতা খুশি,তেমন ভাবে খুশি তাদের পরিবার পরিজনেরা।সম্মিলিত প্রচেষ্টা আগামী দিনে জোলাস্তরে পৌঁছে দিয়ে আরো বেশী সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে অঙ্গীকার বদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here