তৃণ্ময় বেরা , ঝাড়গ্রাম: বাড়িতে গিয়ে গিয়ে প্রতিষেধক দেওয়ার পর জেলায় ৯১ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯ শতাংশ এখনও প্রতিষেধক পায়নি। এই ৯ শতাংশ মানুষকে খুঁজতে হিমসিম খাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তবে প্রথম ডোজ ৯১ শতাংশ নিলেও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে মাত্র ৪৩ শতাংশ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক মানুষের অনীহা রয়েছে। এক্ষেত্রে ‘ডিউ’র সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে জেলাজুড়ে প্রায় ৭০ হাজার ৫৫৬ জনের মানুষের প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ বকেয়া রয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘আশাদের দিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে ৯ শতাংশ বাকি রয়েছে, তারমধ্যে অনেকে অন্য জায়গা থেকে নিয়েছেন। আবার অনেকে ভিন জেলা বা রাজ্যে গিয়ে প্রতিষেধক নিয়েছেন। তবে এখনও যাঁরা নেননি তাঁরা হাসপাতাল বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেওয়া হবে।’’
জানা গিয়েছে, জেলায় মোট ৯ লক্ষ ১১ হাজার ৬৫৪ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রথম ডোজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এজন্য গ্রামীণ এলাকায় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছিল। এমনকি প্রতিষেধক দানে জোর বাড়াতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও দেখা গিয়েছে জেলাজুড়ে ৮ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের প্রথম ডোজ নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জেলাজুড়ে ৯১ শতাংশ মানুষের প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩ লক্ষ ৪৬ হাজার ১৬৬ জন। তবে ৯ শতাংশ মানুষজন খুঁজে বের করতে আশা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। ওই সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, এ জেলার ৫২ হাজার ২৪৫ জন ভিন রাজ্যে বা ভিন জেলায় রয়েছেন। জেলায় ১ হাজার ৭৭০ জন মানুষ প্রতিষেধক নিতে আগ্রহী নন। ৮ হাজার ২৬৮ জন মানুষ অসুস্থ থাকার কারনে প্রতিষেধক নেননি। তবে প্রতিষেধক দানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে সাঁকরাইল ব্লক। সাঁকরাইল ব্লকে ৯৮.৮ শতাংশ, নয়াগ্রাম ব্লকে ৯৮.২ শতাংশ, লালগড় ব্লকে ৯১.১ শতাংশ, জামবনি ব্লকে ৮৭.৬ শতাংশ, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে ৮৫ শতাংশ, বেলপাহাড়ি ব্লকে ৮১.৫ শতাংশ, ঝাড়গ্রাম গ্রামীণে ৭৮.২ শতাংশ,বেলিয়াবেড়া ব্লকে ৭৭.৬ শতাংশ মানুষকে প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে চিন্তিত রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, দিনের পর প্রতিষেধকের ‘ডিউ’র সংখ্যা বাড়ছে। কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজের পরে ১২-১৬ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। ১২ সপ্তাহ হয়ে গেলে তাকে ‘ডিউ’ এবং ১৬ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়াকে ‘ওভারডিউ’ বলা হয়ে। কোভ্যক্সিনের ক্ষেত্রে ২৮ থেকে ৪২ দিন ডিউ। ৪২ দিনের বেশি হয়ে গেলে ‘ওভারডিউ’। কিন্তু দিনের পর দিন ডিউ এবং ওভারডিউর সংখ্যা বাড়ছে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন। কিন্তু দশ হাজার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার কথা। দ্বিতীয় ডোজে অনীহার কথা স্বীকার করছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন না। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ না নিলে প্রতিষেধক কাজ করবে না।’’