বই লেখেন সুন্দরবনের অসহায় দুঃস্থদের জন্য।

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের করুণ দুঃখ দূর্দশার কথা জেনেছিলেন এবং স্বচোক্ষে তা উপভোগ করেছিলেন।সেই বিরল দৃশ্য তাঁর হৃদয়ে ছাপ ফেলেছিল। তিনি একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ। সিদ্ধান্ত নিলেন প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।বিজ্ঞান থেকে সাহিত্যে পদার্পণ।একের পর এক গ্রন্থ লিখতে শুরু করলেন। যার আয়ের সবটাই ব্যয় হয় সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের সাহায্যে। এক বিরল উদ্যোগ আর অভিনব প্রয়াসে
১৩ টি গ্রন্থ বিক্রির দশ লক্ষাধিক টাকা সম্পুর্ন জনকল্যান কাজে দান করলেন।সুন্দরবনের মানুষের কল্যাণে এমন এক অভাবনীয় কাজে নিজেকে উৎসর্গিত করে চলেছেন অশিতিপর এক প্রবীণ কলকাতার বেহালা অঞ্চলের বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ শুভ্রেন্দু রায়চৌধুরী। নিভৃতে নিঃশব্দে সম্পুর্ন এক বিপরীত ধর্মী কাজ করে চলেছেন যা কিনা সুন্দরবনের বুকে বিরল। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে কম্পিউটারের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রেখে বিশ্বের কয়েকটি দেশে সাফল্যের সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ্যাকে অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন ।ছাত্রজীবনের গুচ্ছের ক্ষ্যাপামি আর উচ্ছ্বাস … গল্প লেখার পাগলামি, সেগুলো পত্র পত্রিকায় পাঠানোর উদ্দীপনা, বন্ধুবান্ধব মিলে পত্রিকা প্রকাশের ঔদ্ধত্য, বই পড়ার নিরবিচ্ছিন্ন নেশা থাকলেও কর্মজীবনে যোগদানের পর .বাংলা বা ইংরাজী সাহিত্যের সঙ্গে ছিল না তেমন নিবিড় যোগসুত্র। তথাপি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করার পর জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে পুরোপুরি সাহিত্য সাধনায় নিজেকে উতসর্গিত করে দিলেন ।প্রথমদিকে একটা দুশ্চিন্তা ছিল কে কিনবেন বা কে পড়বেন তাঁর বই,আর কেই বা পড়বেন তার বই ।হঠাৎ তিনি এবং তাঁর শিক্ষিকা স্ত্রী যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন পুস্তক বিক্রির সমস্ত অর্থ পিছিয়ে পড়া ,দুঃস্থ অবহেলিত শ্রেনীর শিশুরদের জন্য ব্যয় করবেন।তাঁর এমন কর্মযজ্ঞে এগিয়ে এলেন দেশে বিদেশের অসংখ্য পরিচিত বন্ধুবান্ধব,এক সময়ের সহকর্মীরা,আত্মীয় স্বজন।তাঁর বই ক্রয় করে তাঁর এই মহান উদ্দেশ্যকে স্বাগত জানালেন সেই সঙ্গে বৃহৎ কর্মযজ্ঞে সামিল হলেন ।শুভ্রেন্দুবাবু একের পর এক সাহিত্য সৃষ্টি করতে শুরু করলেন আর তাঁর অর্থ চলে যেতে লাগল বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে শিশুদের সার্বিক উন্নয়নে। – ‘সম্পর্ক’ (২০০১) ‘অচেনা মানুষ’ (২০০২)’একটি আত্মা ও বুলডোজার (২০০৩)বই গুলির বিক্রিত অর্থ ব্যয়িত হোল আলিপুর অনুভবের মাধ্যমে , রম্যরচনা ‘মেরা ভারত মহান’ (২০০৭) এর অর্থ পোয়েটস ফাউন্ডেশন এবং আজকের কুন্তীরা’ (২০০৯) ‌ডি এন এ’ (২০১১) উপন্যাস ‘বিকেলে ভোরের আলো’ (২০১৩)এই তিনটি পুস্তক বিক্রির অর্থ গেল অনুভব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দক্ষিন কলকাতার বস্তি অধ্যুষিত এলাকার শিশু কল্যানের কাজে
– উপন্যাস ‘রূপকথা নয়’ (২০১৪)গল্পগ্রন্থ ‘ভাঙা কাপ’ (২০১৬ )উপন্যাস ‘চক্রব্যূহ’ (২০১৭) গল্পগ্রন্থ ‘ভুলভুলাইয়া থেকে নিজেরে খুঁজি’ (২০১৮)গল্পগ্রন্থ ‘হাজরা মোড়ের মেয়েটি ২০১৯) গল্পগ্রন্থ ‘প্রমীলা কথা’ (২০২১)।
উপরোক্ত ছয়টি বই বিক্রির প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা দান করেছেন সুন্দরবন অঞ্চলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অসংখ্য অপুষ্ট শিশুর পুষ্টিকরন,কম্পিউটার শিক্ষা,ডিজিটাল ক্লাসরুম স্থাপন আম্ফান ইয়াস ঝড়ে সম্পুর্ন বিধ্বস্ত দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বাসস্থান পুনর্নির্মাণ ,ভুগর্ভস্ত জল সংরক্ষন কর্মসুচী ইত্যাদি জনকল্যান মূলক কাজ ।এছাড়াও মহামারী কালে প্রতিদিন ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশী শিশুকে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিয়েছিলেন।এলাকার ১২টি বিদ্যালয়ে গড়ে তুলেছেন কম্পিউটার ল্যাব ও ডিজিটাল ক্লাসরুম। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে দুর্গত মানুষদের জন্য ত্রান বন্টন কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা তৎপরতার সাথে করেছিলেন ।জীবনের ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া কাটানো অনবদ্য অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেছেন অজানা পথ নামে ১৪ তম সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে।আগামী বাংলা ১৪২৯ সালের ১লা বৈশাখে প্রকাশিত হচ্ছে এই অমূল্য বইটি ।এই কাজে পুর্নভাবে পাশে থেকে প্রতিদিন উজ্জিবিত করে চলেছেন তাঁর স্ত্রী ঝর্না রায়চৌধুরী শেষ জীবনের সঞ্চিত অর্থের বেশিরভাগ তুলে দিয়ে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *