হাঁটু ভাঙ্গার হুমকির খেসারত কি দিতে উদয়নকে, চেয়ারম্যান পদ খোয়ানোর পরে জোর জল্পনা কোচবিহারে।

কোচবিহার, নিজস্ব সংবাদদাতা:- হাঁটু ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি কি কাল হল দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহর। গতকাল কোলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনে নতুন জেলা সভাপতির নাম ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থ প্রতিম রায়কে করা হয় দলের জেলা সভাপতি এবং চেয়ারম্যান করা বিদায়ী জেলা সভাপতি গিরীন্দ্রনাথ বর্মণকে। এর আগে ওই পদে ছিলেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। তাঁকে এভাবে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে, তা নিয়ে শুধু তৃণমূলের অন্দরেই নয়, পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করে আসা একাধিক সংগঠনেও চর্চা শুরু হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই হাঁটু ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি উদয়ন গুহের কাল হল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পুর ভোটের আগে তুফানগঞ্জে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে পৃথক রাজ্যের দাবিতে পথে নেমে আন্দোলন করলে হাঁটু আস্ত নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে না বলে উদয়ন বাবু হুমকি দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর পৃথক রাজ্যের দাবিদাররা কোচবিহার শহরের রাস্তায় মিছিল করে উদয়ন গুহের চামরা তুলে নেওয়ার পাল্টা হুমকি দিয়ে বসে। শুধু তাই নয়, জেলা শাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। তাঁর দিনহাটার বাড়ির সামনে পোস্টার দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। এই অবস্থায় পুর ভোটে প্রভাব না পড়লেও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয় তৃণমূলের এক শ্রেণীর নেতৃত্বের মধ্যে। আর তারপরেই জেলার সাংগঠনিক রদবদল করে উদয়ন গুহকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরেই কোচবিহার জুড়ে জোড় চর্চা শুরু হয়।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন উদয়ন বাবু। সেবারই তাঁকে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে জিতিয়ে নিয়ে আসে জোড়া ফুল শিবির। এরপর দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামাল দেন। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির নিশীথ প্রামাণিকের কাছে পরাজিত হন। পরে নিশীথ প্রামাণিক সাংসদ পদে থেকে যাওয়ার জন্য বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করলে ফের ওই কেন্দ্রে উপ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। ওই জয়ের পর তাঁকে মন্ত্রী করা হতে পারে বলে তাঁর অনুগামীদের মধ্যে প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনুগামীদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। উল্টে এবার তাঁর সাংগঠনিক চেয়রাম্যানের পদ চলে যাওয়ায় অনুগামীদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এনিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মত প্রকাশ করতে না চাইলেও তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কোচবিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রভাব উত্তরবঙ্গের একাধিক লোকসভা কেন্দ্রে পড়ে থাকে। ২০১৯ এর সেই প্রভাব উত্তরবঙ্গ থেকে কার্যত খালি হাতে ফিরিয়ে ছিল জোড়া ফুল শিবিরকে। আর তাই রাজবংশী ও কামতাপুরিদের উন্নয়নের কাজে জোর দেওয়ার পাশাপাশি অতি সম্প্রতি পৃথক রাজ্যের অন্যতম দাবিদার অনন্ত মহারাজ গোষ্ঠী গ্রেটার কোচবিহারের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানে উদয়নের উল্টো সুরের কারণেই হয়ত খেসারত দিতে হল বলে রাজনৈতিক মহলের ধারনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *