আমাদের মূল্যবান মানব জীবনের বৈরাগ্য হল সংস্কৃত শব্দ (সংস্কৃত: वैराग्य), বিশেষ্য পদ, যা দর্শনে ব্যবহৃত হয় যা মোটামুটিভাবে বৈরাগ্য, বিচ্ছিন্নতা বা ত্যাগ, বিশেষ করে অস্থায়ী বস্তু জগতের বেদনা এবং আনন্দ থেকে ত্যাগ। বৈরাগ্য হল সংসারে বা বিষয়ভোগে অনাসক্তি, ঔদাসীন্য, বাসনা রহিত। ত্যাগ কি ? ত্যাগ হল সংস্কৃত শব্দ (সংস্কৃত: त्याग) যার অর্থ উদারতায় ত্যাগ করা, পরিত্যাগ করা, ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী ত্যাগ হল বর্জন, পরিহার, বিসর্জন, নিক্ষেপ, বৈরাগ্য ও নিরাসক্তি। বৈরাগ্য ও ত্যাগ এইদুটি জীবনে মোক্ষ অর্জনের একটি পথ বা উপায়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুনকে বৈরাগ্যের জ্ঞানও দেন । সেখানে তিনি অর্জুনকে বলেন, যদি এই মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাও, তাহলে অভ্যাস ও বৈরাগ্য— এই দুই তলোয়ার দিয়ে মনকে প্রহার করতে হবে। জ্ঞানই মানুষের হৃদয়ে বৈরাগ্যের জন্ম দেয়। সেই সত্যিকারের জ্ঞানই আমি তোমাকে প্রদান করছি অর্জুন।
জগৎগুরু আদি শংকরাচার্য বলছেন:-ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ” “ব্রহ্মই সত্য, জগৎ মিথ্যা, জীব ব্রহ্মই, ব্রহ্ম ব্যতীত অপর কিছু নহে।”
সমস্ত জগৎ বাস্তবে মিথ্যা, নশ্বর। মায়ার প্রভাবে তা সত্য মনে হয়। সর্বেশ্বরবাদী অনুসারে, মানুষের সত্যিকারের সত্ত্বা আত্মা ও ব্রহ্ম হলো শুদ্ধ চৈতন্য, এবং এ বিষয়ে উপনিষদ গুলিতে সামগ্রিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। অদ্বৈত বেদান্তের প্রধান ব্যাখ্যাকর্তা হলেন আদি শঙ্কর। তবে তিনি এই মতের প্রবর্তক নন। পূর্বপ্রচলচিত অদ্বৈতবাদী মতগুলিকে তিনি সুসংবদ্ধ করেছিলেন। প্রধান উপনিষদ,ভগবদ্গীতা এবং ব্রহ্মসূত্র হল বেদান্তের মূল ধর্মগ্রন্থ। বেদান্তের সমস্ত ঐতিহ্য এই গ্রন্থগুলির একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়, যাকে সম্মিলিতভাবে প্রস্থানত্রয়ী বলা হয়। বেদান্ত দর্শনের মূল ভিত্তি হলো উপনিষদ। বেদান্ত শব্দের অর্থ হলো “বেদের অন্ত বা শেষভাগ”। অন্যভাবে বলতে গেলে বেদের সর্বশেষ সিদ্বান্তই হলো বেদান্ত।
এই পরম সত্য-জ্ঞান বিশ্বাস হয়ে গেলেই বৈরাগ্য সম্ভব। তাই, যে মানুষের মধ্যে ত্যাগের প্রাবল্য যত বেশী, তিনি ততই ব্যক্তিত্ববান মানুষ। যে মানুষ যত বেশি ত্যাগী, তিনি ততই ব্যক্তিত্ববান। ত্যাগীর সাথে পেরে ওঠা খুব মুশকিল। ত্যাগীকে বশে আনা খুব মুশকিল। ত্যাগীর ত্যাগ ষড়যন্ত্রকারীর সব ষড়যন্ত্রকে মুহূর্তে নস্যাৎ করে দিতে পারে। মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের চাবিকাঠি ত্যাগ। তাই, দেহ নয়, নিজের মনকে সন্যাসী বানাও, মোহের বন্ধন ত্যাগ কর। নিজের কর্তব্যের ওপর মনোনিবেশ কর। তোমার ধর্ম অনুযায়ী কর্ম কর।
জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ ও বলছেন “বৈরাগ্যই সর্বপ্রকার বাসনাকে নাশ করিয়া মানুষকে প্রকৃত মুক্তির পথে লইয়া যায়।” তিনি আরও বলছেন:- ধর্ম কি ? ধর্ম হল:- ত্যাগ, সংযম, সত্য ও ব্রহ্মচর্য। অর্থাৎ ধর্মের চারটি ধাপের মধ্যে প্রথম ধাপই হচ্ছে ত্যাগ। তিনি ধর্মের প্রথম ধাপই বলছেন ত্যাগ। তাই, সারকথা হল ত্যাগ ও বৈরাগ্য মানুষকে অনন্ত মুক্তির পথে লইয়া যায়। জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের শিরে বর্ষিত হোক, এই প্রার্থনা করি। তার শ্রীপাদপদ্মে আমার অনন্ত কোটি প্রণাম নিবেদন করি।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …..।
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)