কারিগর! : তন্ময় সিংহ রায়।

সালটা ছিল ১৯০০, বিহারের রাঁচি’র অন্ধকার জেলখানায় ৯-ই জুন খাদ্যে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে, চুড়ান্ত তাচ্ছিল্য এবং অবহেলিতভাবে
যে জীবন্ত কোহিনুরটি অকালে হারিয়ে গিয়েছিল চিরতরে!…
তার যন্ত্রণাবিদ্ধ ঐতিহাসিক মন্তব্যটি ছিল এরূপ… ‘আমি বিরসা নই, আমি ধরতি আবা… এই পৃথিবী আমার সন্তান! আমি মুন্ডাদের নতুন ধর্ম শিখাব। আমি তোদের কোলে নিয়ে ভুলাব না, দুলাব না। আমি মুন্ডাদের মরতে আর মারতে শিখাব।’

মাত্র ২০-র অনুন্নত ও দারিদ্র পীড়িত এক গ্রাম্য আদিবাসীর নির্ভিক ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যার অবিক্রীত, মহৎ ও অমূল্য আদর্শ আজ শুধু মুখস্থ করা হয় নিজেদের জ্ঞানের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠার স্বার্থে!
জ্ঞান প্রাপ্ত হলে জ্ঞানী আর প্রতিষ্ঠা তার পূর্ণতা অর্জন করলেই মনের জরায়ুতে জন্ম নেয় একমাত্র মহামন্ত্রের ভ্রূণ…
”আমি নিজে ও আমার পরিবার, এই আমার এ গ্রহ!”
আর সেই আদিবাসীটি?
গভীর মনোযোগে অর্থ উপার্জনের মূল্যবান চাপে ও নানা ব্যস্ততার গহীন জঙ্গলে কোথায় যেন হারিয়ে যায়!
এভাবেই গড়িয়ে চলছে উন্নত প্রজন্মের ব্যাসযুক্ত চাকা, এভাবেই গুম হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার আদর্শের মৃত লাশগুলো!
অন্যায়কে আলিঙ্গন ও আপোষ না করা এবং নিজের জীবনকে কম মূল্যবান/প্রায় মূল্যহীন প্রমাণিত করা এই অদম্য ও অকুতোভয় বীর সন্তানের জন্মগর্ভ আজ ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের ঠিক নিচে ব্যাকটেরিয়াগুলোর সাথে অসহায় সহাবস্থানে!

এশিয়ান পেইন্টস/বার্জারের তলদেশে অবস্থিত সিংহভাগ সমাজসংষ্কারকের প্রভাবে, বাতাসে ক্লোরোফ্লুওরো কার্বন(CFC)-এর পরিমাণ আজ ক্রমবর্ধমান!
আজও আদর্শ বেঁচে আছে তবে, তাকে সপাটে জড়িয়ে ধরে আছে ‘স্বার্থ’ নামক একমাত্র জীবনসাথি/প্রেমিকা!
এ আদর্শে মৃত্যু হয়েছে ‘অ’-এর।
বর্তমানে ৫/- টাকায় পাওয়া যায় প্রায় ৬০০ গ্রাম টাটকা আদর্শ!
এ আদর্শের টুকরোগুলোর গর্ভে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে শত শত শিশু আদর্শ!
আবার গর্ভ, আবার শিশু…
অবিরত চলছে এই প্রক্রিয়া…
নিপুণ দক্ষতার মাধ্যমে আদর্শ অভিনয়ে যে যত বেশি দিতে পারবে পারদর্শিতা’র পরিচয়, তার অ্যাকাউন্টে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বল ততটাই হবে প্রযুক্ত!!

অভিভাবকদের অভিধানে বর্তমানের সন্তান ‘মানুষ’ করা বলতে বোধ করি কম বেশি ইংরিজি জানা, বাহ্যিকভাবে সুন্দর, স্মার্ট ও সুপ্রতিষ্ঠিত/তা এবং আত্মকেন্দ্রিক এক সন্তানের রূপান্তরকে বোঝায়।
এক্ষেত্রে প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তোলায় বদ্ধপরিকর অভিভাবকের অবস্থান আজ টাইটানিকের ভগ্নাবশেষের ঠিক পাশেই।
আম্র বীজের গর্ভে জন্ম নেয় ছোট্ট আম গাছ, স্বাভাবিকভাবেই অনুরূপ বিশ্লেষণ এটাই হওয়া বোধকরি যুক্তিসংগত যে, আত্মকেন্দ্রিকতা জন্ম দেয় ছোট্ট আত্মকেন্দ্রিকতার!
এবং ক্রমে তা পরিণত হয় প্রাপ্তবয়স্কে।
তবে ব্যতিক্রম নেই বলাটা একদমই যুক্তিসংগত নয়।
প্রশ্ন এখানেই যে, কবে শুরু হবে প্রকৃত মানুষ গড়ার কাজ?
এই প্রতিবন্ধী ও অসহায় সমাজে, মুখ্য কারিগরের নির্ভেজাল ভূমিকায় প্রকৃত অভিভাবক ও প্রকৃত শিক্ষকদের অধিক সক্রিয়তা আজ ক্রমশই হয়ে পড়ছে অত্যাবশ্যক!

আমি সমাজ বলছি….

”ফাঁকা আওয়াজের বজ্রপাতে চতুর্দিকের আকাশ জুড়ে আজ আলোর ঘনঘটা,,
শুধু বৃষ্টিই নিরুত্তর!!”

(ব্যতিক্রম অবশ্যই স্বীকার্য ও
ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *