বনলতা সেন : সুরভি জাহাঙ্গীর।

বনলতা সেন! বনলতা সেন!তুমি কোথায়?
তোমার প্রাসাদে আজকের বনলতা এসেছে.. তোমায় জানতে, নিজেকে জানাতে।

আজকের বনলতা তোমায় কিছু বলতে চায়।
নাটোরের বনলতা সেন.. তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?

তখন তুমি কেমন ছিলে বনলতা সেন!
আজকের বনলতাই বা কেমন আছে?
তোমার প্রাসাদের দেওয়ালে হাত দিতেই..গভীর বেদনার চাপা কান্না শোনা যায়!
আমি এতো গভীর অন্তর্বেদনার কান্না আগে, কখনোই শুনিনি বনলতা সেন!

তোমাকে লিখে.. রূপের বর্ণনা করে এককালের কত কবি, আজো বিখ্যাত হয়ে আছে।
মেকি সুখের মেকাপে.. মুখেতে মেকি হাসির মোহতে..চোখেতে যাদুটান কাজলে,, আজো সবাই মুগ্ধতার গভীরতায় ডুবে যায়।

ছবি দেখে মনে হয়..খু্ব সাজতে তুমি!
কেন? কার লাগি এতো সাজ ছিলো তোমার?
ইতিহাস বলে, বসন্ত তোমায় কোন দিন কাছে ডাকেনি.. রাখেনি সন্ধান?
তবে কেন, সেদিন বসন্তের ফুলের মালা গলায় পড়েছিলে? কার তরে? কাহার লাগি বিনি সুতার মালা বিনুনিতে বেঁধেছিলে বনলতা সেন?

আবারো কিসের এতো কান্না!
তোমার ভিতর বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে দেয়ালে চাপাপড়া কান্নার করুণ সুরের আর্তনাদের নহর নীরব নিশীথে বয়ে যায়…কেন বনলতা সেন?

আজো স্মৃতির দেয়ালে কান দিতেই শোনা গেল.. সেদিনের সেই, ঝুমুরের শব্দ!বাহবার হততালি!
তারপর খিল খিল হাসিতে মিশে যায় রাত্রি !
ভোর হতেই ফূর্তি শেষে.. রাজা ঢুলু ঢুলু চোখে তোমার বিছানায় ফিরে !
বেদনার বালুচরে আজো প্রতিরাতের অপমান চিক্ চিক্ করে হাসে… তোমার ঐতিহাসিক দু’চোখে।
শুনেছি বড্ড মানে লেগেছিল ব্যথার নীল সমুদ্র বক্ষে!

বনলতা সেন তুমি কি জানতে.. কত শত প্রেমিক পুরুষ মানসপটে, তোমার ছবি এঁকে এঁকে.. রাতের ঘুমে হারাত?!

আচ্ছা বনলতা সেন, তুমি কি কোন কবিকে ভালোবেসেছিলে?
নাকি সেনাপতি সুরেন্দ্রকে?

সেন পদবির কঠিন চত্বরের নিয়মের কড়া শাসনের চাবুকের ভয়ে হয়ত সারা দাওনি? না কি ভীষণ গোপনে, মনে মনে মননে কিংবা লোকচক্ষুর আড়ালে, চোখে চোখে সারা দিয়েছিলে সেনাপতি সুরেন্দ্রকে?

সুরেন্দ্র কি সে ভাষা বুঝেছিল বনলতা সেন?

তাহলে কেন..কোন কারণে, অকস্মাৎ সেনাপতি সুরেন্দ্রের রাতের আধাঁরে গর্দান নেওয়া হল? আজো সেই সেনাপতি হত্যার কারণ সবার অজানা কালো ইতিহাসের রহস্যের পাথরে চাপা দেওয়া
কেন?
কেন? বনলতা সেন..আজ আমার উত্তর চাই?

আবারো কান্না?তুমি আমার স্মৃতির বনলতা সেন!?
তাহলে কি তাহাই সত্যি ছিল? সেনাপতি সুরেন্দ্রকেই তু– মি?

না থাক গোপনেই থাক! তোমার গোপন বক্ষের সুরেন্দ্রের প্রতি, মহাসমুদ্রের ভােলোবাসার ইতিহাসের উথাল-পাতাল ঢেউ !

আজো দেয়ালে তাকিয়ে দেখি, তোমার ছবির চোখের গভীর নির্বাক চাহনি ! সবুজ শেওলায় ভরে আছে তোমার
“পাখির বাসার মত দুটি চোখ”! তোমার প্রেম আজ গোপন ইতিহাসে গুমরে গুমরে কাঁদে !

বনলতা সেন! বিদায় বেলায়, তোমায় চুপি চুপি দুটি কথা বলে যায়!
আজকের বনলতাও তোমারই মত নির্বাক
বনলতা!
তাহার প্রেমও আজ ঘাস হয়ে হাসে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *