প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা কিশোরী বিজিবির হাতে আটক, এক বছর ৩ মাস পর ভারতে পাঠাল পুলিশ।

চুয়াডাঙ্গা, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  প্রেমের টানে অবৈধ পথে বাংলাদেশে এসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির হাতে আটক হওয়া ভারতীয় কিশোরী মনিরা খাতুন ওরফে আসমা বিশ্বাসকে (২০) তার নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় সীমান্ত পিলার ৭৬ নম্বরের কাছে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক হয়। তখন ওই কিশোরীকে ভারতীয় পুলিশ ও তার মা এবং মামার হাতে তুলে দেওয়া হয়। মনিরা খাতুন ভারতের নদীয়া জেলার ধানতলা থানার চাঁদপুর গ্রামের আইয়ুব আলী বিশ্বাসের মেয়ে।
এর আগে ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার সময় ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মাটিলা গ্রামের মহির উদ্দীনের মেহগনি বাগান থেকে ভারতীয় নাগরিক মনিরা খাতুন ওরফে আসমা বিশ্বাসকে আটক করে ৫৮ বিজিবির সদস্যরা। আটকের পর অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে মনিরা খাতুনকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করে বিজিবি। পরবর্তীতে ঝিনাইদহ শিশু আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) চাঁদ মোহাম্মদ আবদুল আলিম আল রাজ মনিরা খাতুনকে তিন মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে আজ বৃহস্পতিবার তাকে ভারতে ফেরৎ পাঠানো হলো।
মনিরা খাতুন জাগোনিউজকে জানান, তিনি নদিয়া জেলার বগুলা শ্রী কৃষ্ণ কলেজের বিএ প্রথম বর্ষে পড়া লেখা করছিলেন। আজ থেকে ৩ বছর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘পিজন মুন’ নামের একটি আউডি থেকে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের সরাফাত হোসেন নামে এক ছেলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রেমিকের টানেই এবং বিয়ের জন্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ওই কিশোরী। মনিরা খাতুন বাড়ি থেকে পালিয়ে ১৬ হাজার টাকার বিনিময়ে এক দালালের মাধ্যমে রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মেহগনি বাগানে অবস্থান করছিলেন তার প্রেমিকের জন্য। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাকে আটক করেন। তিনি আরও জানান, আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনে তিনি চরম ভুল করেছেন। তার মতো এ ভুল সিদ্ধান্ত যেনো আর কেও না করে সে ব্যাপারে কিশোরী মেয়েদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। মনিরা খাতুন জানান, তিনি জেলে থাকাকালীন সময়ে তার প্রেমিক কোনোদিন খোঁজও নেননি তার।
মনিরা খাতুনের মামা মো. আরজ ধাবক কান্না জড়িত কন্ঠে জাগোনিউজকে বলেন, ভাগনী মনিরা খাতুনের জন্য আমাদের পরিবারের সব সদস্য খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আজকে মনিরাকে কাছে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। মনে হচ্ছে আমরা আজ স্বর্গ হাতে পেলাম।
মনিরা খাতুনের হস্তান্তরের সময় পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দর্শনা ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুল আলিম, দর্শনা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নীতিশ বিশ্বাস, বিজিবির নায়েব সুবেদার মো. আলাউদ্দীন, ওয়েব ফাউন্ডেশন মানবাধিকার কর্মী মো. আতিয়ার রহমান। ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন গেদে ইমিগ্রেশন অফিসার ইন্সপেক্টর সন্দীপ তিওয়ারি, বিএসএফের গেদে কোম্পানি কমান্ডার সুনীল পায়েল, কৃষ্ণগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর বাবিন মুখার্জি এবং মানবাধিকার সংস্থার চিত্ত রঞ্জন দে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *