পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। আর এই উৎসবকে ঘিরে চরম উন্মাদনার লক্ষ্য করা যায় সকল বাঙালির মধ্যে, শুধু বাঙালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এই উৎসবে মেতে ওঠে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ,আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বছর ধরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কঠোর প্রস্তুতি চালিয়ে যায় রাজ্যের বিভিন্ন মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পীরা, সারা রাজ্যের পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমারের মালাকার পাড়ার ডাকের সাজ প্রস্তুতকার শিল্পীরা।এইবছর পুজোর বাকি হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন। ফলে এই কদিন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই তাঁদের। মৃৎশিল্পীদের থেকে বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মালাকার পাড়ার মানুষজনেরা। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরী হয় রকমারী শোলার গয়নার সেট ও ডাকের সাজ। এখনও প্রাচীন বাড়ির পুজোগুলিতে কোথাও কোথাও সোনার গহনা পরানো হলেও বেশির ভাগ প্রতিমার সাজ হিসেবে শোলার গহনার কদর দিন দিন বেড়েছে। প্রতিমার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে শোলার গয়না তাৎপর্য পূর্ণ ভুমিকা গ্রহন করে। বাপ ঠাকুরদার হাত ধরে শোলার গহনা ও ডাকের সাজে হাত পাকিয়েছেন নন্দকুমার ব্লকের মান্দারজাছিয়া গ্রামের ১৫/২০ টি পরিবারের সদস্যরা।
পিতৃ পুরুষের সময় থেকে আজ পর্যন্ত শোলার কাজ মুলত ডাকের সাজ তৈরি করা এই পরিবারগুলির প্রধান জীবিকা। শোলার গহনা দিয়ে বাংলাদেশের ঢাকার ঢাকেশ্বরী দেবীকে সাজানো হত। সেই জন্য শোলার এই গহনাকে বলা হত ঢাকের সাজ। যা পরবর্তীতে ডাকের সাজ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ডাকের সাজ সাধারনত দুই ধরনের হয়।একটি শোলার কাজ, অন্যটি জরির কাজ। ডাকের সাজ তৈরি করতে লাগে শোলা ও জরি।
ডাকের সাজের মধ্যে তৈরি হয় প্রতিমার মুকুট, আঁচলা, চালি, বুক চেলি, ঘাড় বেণী, কলকা ও কান মোগর প্রভৃতি। এছাড়ও শোলার গয়নার মধ্যে তৈরী হয় কানের দুল, মালা, গলার চিক, হাতের বাজু ও ছুড়ি এবং পায়ের নূপুর।
শোলার কাজের অর্ডার আসে জেলা সহ ভিন জেলার শিল্পীদের কাছ থেকে। গত দুবছর করোনার কারনে সেইভাবে অর্ডার পাওয়া না গেলেও এবার অর্ডার এসেছে মালাকার পাড়ায়। তাই পরিবারের মহিলারা রাতদিন এক করে কাজ করে চলেছে।গত দুবছর খুব কষ্টের মধ্যে তাদের কেটেছে বলেও জানান তারা। তবে এবছর একটু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। কলকাতার একাধিক পুজো উদ্যোগতারা ডাকের সাজের অর্ডার দিয়েছেন। ফলে জেলার ও কলকাতার পুজো উদ্যোগতাদের চাহিদা পুরনের জন্য জোর কদমে কাজ করে চলেছে মালাকার পাড়ার পুরুষ মূলত মহিলারা।
বছর ৬১ সবিতা মালাকার জানান,দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে আসছি। আগে প্রচুর কাজের অর্ডার আসতো, তবে গত দুবছর সেই ভাবে অর্ডার পাওয়া যায়নি। এবার আবার অর্ডার বেড়েছে। তাই রাতদিন নাওয়াখাওয়া ভুলে বৌমা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কাজ করে চলেছি।
এইধরনের কাজ মূলত পরিবারের মহিলারা করে থাকেন। আর বাড়ির পুরুষরা জিনিস পত্র অর্থাৎ সোলা,জরি, আঠা সহ প্রয়োজনীয় জিনিস জোড় করে। তাদের তৈরি ডাকের সাজ যখন মায়ের অঙ্গে ওঠে তাতে তারা ভীষন খুশি হয় বলে জানান করবী মালাকার।
দুর্গা মায়ের সাজ তৈরিতে ব্যাস্ত ওঁরা,ভালো লাভের আশার আলো দেখছে মালাকার পাড়া।

Leave a Reply