নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রামঃ- গত ২০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার, সকাল থেকে শুরু কুড়মিদের আন্দোলন। আর, ওই দিন থেকেই ৬ নং জাতীয় সড়কে আটকে আছে হাজার হাজার মালবাহী ট্রাক। চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ভিন রাজ্যের ট্রাক চালকরা। একদিকে, ৬ নং জাতীয় সড়কের উপর খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলি থেকে কলাইকুন্ডা পর্যন্ত কয়েকশো ট্রাক দাঁড়িয়ে; অপরপ্রান্তে চৌরঙ্গী থেকে প্রায় ডেবরা অবধি কয়েক হাজার ট্রাক দাঁড়িয়ে! চালক ও খালাসি মিলিয়ে প্রায় দশ হাজারের ও বেশি মানুষ মঙ্গলবার থেকে দিন কাটছে চরম অসহায়তার মধ্যে। ভিন রাজ্যের ট্রাক চালকের সংখ্যাই বেশি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা বলেন, না আছে খাওয়ার জল, না আছে স্নান বা শৌচকর্ম করার জল! প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার দূর থেকে এক বালতি জল নিয়ে আসতে হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দিয়ে! খাবার অযোগ্য ভাত-রুটি কিনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা দিয়ে। বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার থেকে কেউ কেউ স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না শুরু করলেন ৩-৪ কিলোমিটার বা আরও দূর থেকে চড়া দামে জিনিসপত্র কিনে এনে। পথের ধারে বসেই রান্নার জোগাড়যন্ত্র করলেন ঠিকই, তবে জলের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়! গত ৪৮ ঘন্টায় কারুর সাহায্য মেলেনি। বৃহস্পতিবার প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার তরফে সামান্য কিছু জলের পাউচ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে, তাতে কি আর এই গরমে পিপাসা মেটে! এদিকে, তিনদিন ভালো করে স্নান, শোচকর্মও করতে পারেননি বিহার, উত্তর প্রদেশ থেকে আসা পাপ্পু যাদব, সতীশ কুমার, নভনীত কুমার-রা! তার উপর সঙ্গে থাকা টাকাকড়িও শেষের পথে! চরম দুঃশ্চিন্তা আর নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে তাঁদের। দুর্গা পুজোর আগেই এই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে পড়ে, অবরোধ তুলে নেওয়ার কাতর আবেদন জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীদের কাছে! বিহারের বাসিন্দা সতীশ কুমার বললেন, “কবে বাড়ি ফিরতে পারব কে জানে! টাকাপয়সাও শেষ হয়ে গেছে। মালিক কাল টাকা পাঠালে ভালো, নাহলে না খেয়ে মরতে হবে। এমনিতেই, এক বালতি জল ৩০-৪০ টাকা দিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে। ৩০ টাকার বোতলের জল নেওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা!”
অন্যদিকে, আন্দোলনকারী কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট বার্তা না আসা পর্যন্ত, এই আন্দোলন চলবে। রাজ্যের প্রতিনিধিদল আলোচনায় বসতে চাইলেও, তাঁরা যে নিজেদের দাবিতে অনড় তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মেমোরেণ্ডাম সহ সঠিক কমেন্ট ও জাস্টিফিকেশন পাঠানোর প্রতিলিপি দেখানো হবে, ততক্ষণ এই অবরোধ-আন্দোলন চলবে। উল্লেখ্য যে, কুড়মিদের এসটি বা তপশিলি উপজাতি ঘোষণা, কুড়মালি ভাষাকে অষ্টম তফশিলে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সারনা ধর্মের সরকারি কোড চালু করার দাবিতে গত ২০ সে সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা-তে কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালানো হচ্ছে। শুক্রবারও অবরোধ আন্দোলন অব্যাহত থাকায় অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম একেবারে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
জল নেই, খাওয়ার নেই, টাকাও শেষ! না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, এক পোশাকেই ৮৫ ঘন্টা কেটে গেল জাতীয় সড়কের উপর; পুজোর আগে অপেক্ষায় প্রিয়জনেরা।

Leave a Reply