ফেরিওয়ালা ছোটন কর্মকার,আজ খড়গপুর আইআইটির ছাত্র।

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ ফিতা,চুড়ি,খেলনা নেবে গো’ ডাক দিয়ে গ্র্রামের পর গ্ৰাম ঘুরে বিক্রি করা ছেলেটা আজ সর্বভারতীয় স্তরের আইআইটি খড়গপুরের ছাত্র।হ্যাঁ শুনে অবাক হচ্ছেন তো?বাস্তব জীবনের ফেরিওয়ালা কিভাবে তাঁর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হল ?। গ্রামের পথে ফেরি করতে করতে সে কিভাবে যে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে
ফেলল সেটি আজ তার নিজেরও অজানা। জেনিথ ইনস্টিটিউটের কর্ণধার চিন্ময় মুখার্জী ছোটন কর্মকারের joint Entrance পরীক্ষার কোচিং বিনামূল্যে ব্যবস্থা করেন।যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আই টি তে ভর্তি ফি ২০০০০ টাকা ছিল না বলে এই সুযোগ হাতছাড়া হয়। এই খবর পেয়ে বাঁকুড়ার বিশিষ্ট সমাজসেবী শান্তব্রত সেনের উদ্যোগে আলোর দিশা ও শুভানুধ্যায়ীদের সাহায্যে ৩৫০০০ টাকা যোগাড় হয়।
বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম হল পাবড়া, আর সেখানেই বসবাস ছোটন কর্মকারের ।বাবা কানাই কর্মকার তিনি নিজেও একজন ফেরিওয়ালা। তার বাড়ির সদস্য বলতে তার মা বাবা দাদা ও ছোটন।সংসারের হাল ধরতে বাবার পথেই পথিক হয়েছিলেন ছোটন।সর্বভারতীয় স্তরে এন্টাস পরীক্ষায় সে সাফল্য পায় এবং সন্ধ্যায় সে পৌঁছয় আইআইটি খড়্গপুরে। পিঠে ভারি ব্যাগ,অগোছালো চুল,চোখমুখে ভয়ের রেস এইসব নিয়ে তাকে ইতস্তত অবস্থায় ঘুরতে দেখেন খড়গপুর আইআইটির কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীরা। তড়িঘড়ি নিরাপত্তা কর্মীরা তার পথ আটকায়,সে তাদের জানায় গত বৃহস্পতিবার তাকে ভর্তির জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে, বৈধ নথিপত্র দেখে স-সন্মানে তাকে গেট ছেড়ে দেয় নিরাপত্তা কর্মীরা। ছাপোষা পরিবারের সদস্য হওয়ায় গ্রামেরই সরকারি মাধ্যম স্কুল থেকে তার পড়াশুনো। মাঝে মধ্যে বাবার সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে চুড়ি মালা ফেরি করে বেড়াত, এই ছেলে কিনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি টেক এ ভর্তি, তাও আই আই টির মতো সর্বভারতীয় একটা প্রতিষ্ঠানে! এ যেন গল্প হলেও সত্যি। ছোটনের বাবা কানাই বাবু আইআইটি কি জিনিস তা না বুঝলেও ছেলের সাফল্যে সে বেজায় খুশি।
এ গল্পে ছোটন যেন প্রান্তিক গ্রামের ‘হার মানা হারের’ এক অনন্য গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *