কোচবিহার, নিজস্ব সংবাদদাতা:- ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল, শহীদ তর্পণ করতে করতে কেটে গেল ৩৫টি বছর। ভেজাল ভোজ্য তেল নিয়ে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে পথে নেমে মৃত্যু বরণ করেছিলেন যুব কংগ্রেস কর্মী রবীন-বিমান এবং হায়দার। সেই শহীদদের স্মরণ করতে শুক্রবার কোচবিহার সাগরদিঘীর পার্শ্ববর্তী কোচবিহার জেলা আদালতের পাশে ওই তিন শহীদের শহীদ বেদীতে ফুলমালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন এখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার শহর ব্লক সভাপতি দিলীপ সাহা,তৃণমূল যুব নেতা কমলেশ অধিকারী, রাকেশ চৌধুরী, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সায়নদ্বীপ গোস্বামী প্রমূখ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে গোটা রাজ্যে প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে এই ভোজ্য তেল কারবারীদের এবং তা মজুতকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে ক্রমশ। সরকার পরিবেশিত এই ভোজ্য তেল খেয়ে রাজ্যের বেহালা এলাকায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বেশ কয়েকজন শিশু। অসুস্থ হন অগণিত মানুষ। কার্যত মহামারীর চেহারা নেয় এই বেহালা এলাকা। ভোজ্য তেলের বিষক্রিয়ায় অনেক মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হন। এই পরিস্থিতিতে গোটা রাজ্য জুড়ে আন্দোলনে নামে যুব কংগ্রেস। সেই আন্দোলন কোচবিহার জেলায় কার্যত দাবানলের আকার নেয়।১৯৮৮সালের ৪ঠা আগস্ট আন্দোলনে পথে নামে যুব কংগ্রেস কর্মীরা। দাবি ছিল অবিলম্বে এই ভেজাল ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী এবং এই ভোজ্য তেল মজুত কারীদের গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে রাজ্য সরকারকে এবং এর পাশাপাশি এই ভোজ্যতেলের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত এবং অসুস্থ পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। কিন্তু যুব কংগ্রেসের এই দাবিকে কোনোভাবেই মেনে নেয়নি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এবং এর ফলে যুব কংগ্রেস কর্মীদের এই আন্দোলন কার্যত গণআন্দোলনে চেহারা নেয় কোচবিহার জেলায়। সেই গণ আন্দোলন আইন অমান্যের রূপ নেয় কোচবিহার জেলা শাসকের দপ্তর সংলগ্ন এলাকায়। এই সময় তৎকালীন রাজ্য সরকারের পুলিশ গুলি বর্ষণ করে আন্দোলনকারীদের ওপর এবং পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় যুব কংগ্রেস কর্মী রবীন এবং বিমানের শরীর। এর পাশাপাশি পুলিশের মারে শহীদের মৃত্যু বরণ করেন হায়দার। কোচবিহারের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। ১৯৮৮ সালের পর থেকে প্রতি বছরই এই দিনটিতে শহীদদের বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন কোচবিহারের সাধারন মানুষ সহ এই শহীদদের সহযোদ্ধারা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি বুক ভরা বেদনা আর অশ্রুসিক্ত নয়নে ফুলমালার সমাহারে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করা হলো তাদের বলে জানান তৃণমূল যুব নেতা রাকেশ চৌধুরী।
Leave a Reply