মানবিক শিক্ষার এবং আরম্বর হীন পঠন পাঠনের ২৫ টাকা বেতনের আদর্শ শিক্ষক ক্ষুদিরাম মাঝি ।

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ মঙ্গলবার শিক্ষক দিবস।২৫ টাকা বেতনের আদর্শ শিক্ষক ক্ষুদিরাম মাঝিকে আজ কেউ মনে রাখেনি।বর্তমানে বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়েছেন তিনি। ভালো শুনতে পাননা, চলন বলনেও বয়সের ছাপ স্পষ্ট, কথা বলতে গেলে হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি। যদিও এলাকার প্রত্যেকেরই তাঁকে আদর্শ শিক্ষক বলে চেনেন, জানেন। ১৯৩০ সালের ৯ ই মে তে জন্ম হয় ক্ষুদিরামের মাঝির। অভাবী সংসারে খুব কষ্ট করে তৎকালীন সময়ে ম্যাট্রিক পাশ করার পরে শিক্ষকতায় আসেন তিনি। খালি পায়ে কাদা জল পেরিয়ে ধুতি পাঞ্জাবি পরে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া শেখাতে যেতেন ক্ষুদিরাম। বাংলার ১৩৮৫ সাল, শিক্ষক ক্ষুদিরাম মাঝি মাত্র ২৫ টাকায় সাঁপুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। সেই সময়ে বন্যায় সব ধ্বংস হয়ে যায়, সর্বহারা হয়ে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের জাগলদ্বীপ গ্ৰামে বসবাস শুরু করেন তিনি।

সামান্য ২৫ টাকা মাহিনা থেকেই ক্ষুদিরাম বাবু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। নিজে সর্বহারা দরিদ্র ছিলেন, তবুও বিনা মূল্যে টিউশুনি পড়াতেন গ্রামের গরিব ছেলেমেয়েদের। শিক্ষক দিবসের আগেই বিভিন্ন বিশিষ্ট শিক্ষককে আমরা রাজ্যস্তরে এবং জাতীয় স্তরে বিভিন্ন সম্মান পেতে দেখি। বছর ৯৩ এর ক্ষুদিরাম মাঝি সেই সব সম্মান না পেলেও তিনি জীবনে যে সম্মান পেয়েছেন বর্তমানে উল্লিখিত সম্মানের মাপকাঠি নিরিখে কম কিছু নন। বর্তমান সমাজে যখন শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে আমরা দামি দামি বই, বেসরকারি নামী দামী বিদ্যালয়ের খরচ, সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই জবুথবু মানুষটার ভেঙে পড়া শরীর এবং ইন্দ্রিয় যেন তখনকার দিনের প্রকৃত মানবিক শিক্ষা ব্যাবস্থার মূর্ত প্রতীক। ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে ক্ষুদিরাম মাঝির পাঠশালার পঠন পাঠন আজ নেই, নেই শিক্ষকের শাসন, নেই গুরুকুলিয় আড়ম্বর হীন পঠন পাঠন। ওনার ছাত্র এবং প্রাক্তন শিক্ষক ৭৬ বছর বয়সী অজিত কুমার বেজ জানান “স্যারের পড়ানো মানে তার কোনো তুলনা হবে না, সেসব দিন ভোলার নয়”। ভুলেন নি বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের জাগলদ্বীপ সহ আশেপাশে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ, তারা এখনো ক্ষুদিরাম মাঝীল নাম শুনলে সশ্রদ্ধায় মাথা নত করেন। মানবিক শিক্ষার এবং আরম্বর হীন পঠন পাঠনের আদর্শ শিক্ষক ক্ষুদিরাম মাঝি বর্তমান সময়েও আলোচিত একটি নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *