আমাদের মূল্যবান মানবদেহ কেবলমাত্র শারীরিক কাঠামো নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক তীর্থক্ষেত্র, মানবদেহ কুম্ভরূপ একটি অপূর্ব তীর্থস্থান। *যা আছে ব্রহ্মাণ্ডে তা আছে দেহভাণ্ডে*। আধ্যাত্মিক জগতে দেহরূপ কুম্ভে ত্রিবেণী সঙ্গম হল এক অসীম জ্ঞান এবং জীবনের পরম লক্ষ্যের প্রতীক। কুম্ভস্নানে সরাসরি পুণ্যও পাওয়া যায় না, মোক্ষও পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় অমৃত। আর এই অমৃতই মানুষকে দেয় যথাক্রমে পুণ্য এবং মোক্ষ। অমৃত কি? যা মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, তাই-ই অমৃত। সুতরাং জ্ঞানই হল অমৃত। কারণ জ্ঞানই মানুষকে মৃত্যু-রহিত করে, অমর করে।
আমাদের যদি চেতনা থাকে, তো কুম্ভে গিয়ে আমরা অবশ্যই এমন কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারবো, যা আমাদের জীবনীশক্তি বাড়িয়ে দেবে, যা আমাদেরকে অমর করে দিলেও করে দিতে পারে। তাই, দুর্লভ মনুষ্য জন্ম লাভ করে ডুব দিন আপন হৃদয়ের অন্তস্থলে, নিজের অন্তরে। নিজস্ব গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে, যেখানে পরম জ্ঞানের মহা অমৃতভান্ড লুকোনো আছে। আপন হৃদয় গঙ্গা যমুনা সরস্বতীর মিলনক্ষেত্র, সেই অমৃতের খোঁজ যিনি পেয়েছেন তিনি নিজেই এক তীর্থক্ষেত্র। কারণ, আধ্যাত্মিক মতে, গঙ্গা হলো জ্ঞানের প্রতীক। যমুনা হলো প্রেমের প্রতীক। সরস্বতী হলো প্রজ্ঞার প্রতীক। আমাদের মূল্যবান মানব হৃদয় গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গমস্থল।
তাই, জীবের জীবাত্মা, প্রাণ বা দেহী। দেহমাঝে প্রাণসঞ্চার কালে, এই প্রাণই *ব্রহ্ম*। জীবন কালে প্রতিপালনে এই প্রাণই *বিষ্ণু*। আবার মরণ কালে, এই প্রাণই *মহেশ্বর*। জীবদেহে প্রাণই শিব। নরদেহে প্রাণই নারায়ণ। তাই দেহ হতে *শিব* চলে গেলে *শব* হয়। আমাদের শরীরের ময়লা তো স্নান করলে ধোয়া যাবে, কিন্তু মনের ময়লা? মনের ময়লা ধুতে জ্ঞানরূপ অমৃতে ডুব দিতে হবে। জ্ঞানই হল অমৃত, তাই, আমাদের জ্ঞানরূপ অমৃতে ডুব দিতে হবে। আমাদের সকলের জ্ঞানচক্ষুর উন্মেষ হোক। মা গঙ্গা যমুনা সরস্বতী আমাদের সকলের জ্ঞানচক্ষু খুলে দিক, আমাদের মনস্কামনা পূরণ করুক। এটাই হল প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভের সারতত্ত্ব। ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ …..।
Leave a Reply