আত্রেয়ী নদীর মাছের আঁশে নতুন আয়ের দিশা, বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে আঁশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট:- মাছ বাজারে ঢুকলেই চোখে পড়ে মাছের আঁশের বেহাল দশা—কোথাও নর্দমার জলে ভাসছে, কোথাও আবার ডোবায় পচে যাচ্ছে। এতদিন অবহেলিত এই আঁশই এখন বালুরঘাটের মৎস্যজীবীদের জীবিকার নতুন পথ খুলে দিচ্ছে। আত্রেয়ী নদীর পাড়ে এখন মাছের আঁশ শুকিয়ে রপ্তানির উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। সেগুলি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে—কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ফুড সাপ্লিমেন্ট, নেইল পেইন্ট, এমনকি বাহারি চুমকি তৈরির মতো শিল্পে। ফলে মাছের আঁশ থেকেই বাড়তি আয় করছেন এলাকার মৎস্যজীবীরা, আর মাছ বাজারও থাকছে অনেকটা পরিষ্কার।

জানা গিয়েছে, কলকাতা থেকে একাধিক উদ্যোগপতি নিয়মিত আসছেন আত্রেয়ী নদীর পাড়ে। তাঁরা এখানকার মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে কুইন্টাল কুইন্টাল মাছের আঁশ কিনে নিচ্ছেন। প্রক্রিয়াজাত করার পর সেই আঁশ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহারের জন্য।

এদিন নদীর ধারে মাছের আঁশ শুকোতে দেওয়ার কাজ করছিলেন স্থানীয় মৎস্যজীবী উত্তম সরকার। তাঁর কথায়, “এই কাজের মাধ্যমে এক বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন আয়ের রাস্তা খুঁজে পেয়েছি আমরা।” বর্তমানে প্রায় পাঁচজন মৎস্যজীবী এই কাজে নিয়োজিত। মূলত রুই ও কাতলা মাছের আঁশ শুকিয়ে সংরক্ষণ করছেন তাঁরা। যখন প্রায় ১০ কুইন্টাল আঁশ জমা হয়, তখন কলকাতা থেকে ক্রেতারা এসে সেগুলি ট্রাকে করে নিয়ে যান।

কলকাতায় গিয়ে সেই আঁশ গুঁড়ো করে, পালিশ করে কিংবা বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এরপর বিদেশে পাঠানো হয় জাহাজে করে। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় পুষ্টিকর ফুড সাপ্লিমেন্ট, সৌন্দর্য প্রসাধনী, চুমকি সহ একাধিক পণ্য। প্রতি কুইন্টাল আঁশের দাম মিলছে প্রায় চার হাজার টাকা, কখনও আরও বেশি।

মৎস্যজীবী শ্যামসুন্দর সরকারের কথায়, “এর ফলে শুধু আয়ই বাড়ছে না, মাছ বাজারও পরিষ্কার থাকছে। আগে যেগুলি ফেলেই দেওয়া হত, এখন সেগুলিই সম্পদ হয়ে উঠছে আমাদের কাছে।”

অবহেলিত মাছের আঁশকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই নতুন উদ্যোগ মৎস্যজীবীদের জীবনে এনেছে আশার আলো, খুলে দিয়েছে আয়ের নতুন দিগন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *