ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়….!
ওঁ অজ্ঞানতিমিরান্ধ্যস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া ।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ ।।
প্রাচীনকালে হতে আমাদের সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে সমাজে গুরু-শিষ্য সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্ব পেত। সেই কারণে একটা দিন গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গুরুচরণে নিবেদন করত সকল ভক্ত ও শিষ্যগণ। গুরুর প্রতি শিষ্যের শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসাবে উদযাপন করা হয় এই দিন। বৈদিক মতে, প্রতি বছর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পড়ে এই দিন। সংস্কৃতে ‘গু’ শব্দের অর্থ অন্ধকার। ‘রু’ শব্দের অর্থ অন্ধকার দূরীকরণ। গুরু শব্দের অর্থ, যিনি শিষ্যদের অন্ধকার বা অজ্ঞতা থেকে আলোর দিশা দেখান সেই ব্যক্তি গুরু।
পুরাণ মতে, ভগবান শিব বা দেবাদিদেব মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি হলেন তাঁর প্রথম শিষ্য – অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি এবং ক্রতু। শিব বা মহাদেব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন এবং এই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথিকে গুরু পূর্ণিমা আখ্যা দেওয়া হয়। এই তিথিতেই পরাশর মুনি ও সত্যবতীর ঘরে ব্যাসদেবের জন্ম হয়। জন্মের পরে তাকে ত্যাগ করেন সত্যবতী। পরবর্তীকালে নিজের যোগ্যতায় মহর্ষি হয়ে ওঠেন ব্যাসদেব। চতুর্বেদের সম্পাদনা ছাড়াও ১৮টি পুরাণ তিনি রচনা করেন। মহান এই ঋষির হাত থেকেই মহাকাব্য মহাভারতের রচনা। বেদের ব্যাখা ও বিন্যাস ঘটিয়েছেন বলেই মহর্ষিকে বেদব্যাস ও বলা হয়। মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি ব্যাসদেবের জন্মজয়ন্তী পালন করা হয় এই দিন। তাই, এই দিনটি গুরু এবং জ্ঞান প্রকাশের স্মরণে পালিত হয় এবং ব্যাসদেবের সম্মানে “ব্যাস পূর্ণিমা” হিসাবেও পরিচিত। বোধিজ্ঞান লাভের পর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় প্রথম সকলকে উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। সেই কারণে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছেও।
যিনি অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যান তিনিই গুরু। গুরু আমাদের মনের সব সংশয়, সন্দেহ, অন্ধকার দূর করেন এবং নতুন পথের দিশা দেখান। সকল ভক্ত ও শিষ্যগণ এই দিনে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রাচীনকাল থেকেই এই দেশে গুরুদের সম্মানজনক স্থান দেওয়া হয়েছে। গুরুর দেখানো পথে চললে, কোনও ব্যক্তি শান্তি, আনন্দ ও মোক্ষ প্রাপ্ত করতে পারেন। তাই গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই গুরু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পূর্ণিমায় গুরুর পূজার্চনা করলে অক্ষয় আশীর্বাদ মেলে। তাই এই তিথিকে গুরু পূর্ণিমা আখ্যা দেওয়া হয়।
“ওঁ গুরুব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বর।
গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।”
এই শ্লোকের অর্থ- জীবনে গুরুই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। সেই গুরুর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাই। বর্তমানে শ্রীশ্রী গুরুপূর্ণিমা এক সর্বভারতীয় মহোৎসব, ভারতের প্রতিটি আশ্রম, মঠ, মন্দিরে, এইদিন মহাসমারোহ। নিজ নিজ রীতিনীতি অনুসারে সর্বত্র শ্রীশ্রীগুরুপূজার মহাধুম। এই দিন আনন্দ ও প্রীতির সহিত শ্রদ্ধা, ভক্তি, আনুগত্য, সেবা, আত্মনিবেদনের আবেদন সর্ব্বত্র সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। এইবছর আগামী ২৫ শে আষাঢ় বৃহস্পতিবার-১৪৩২, শ্রীশ্রী গুরুপূর্ণিমা তিথি(10.07.2025)। এইদিন সকলে নিষ্ঠার সঙ্গে গুরুপূর্ণিমা পালন করি। শ্রী শ্রী গুরু পূর্ণিমাতে জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোকএই প্রার্থনা করি…!
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।
স্বামী আত্মভোলানন্দ *পরিব্রাজক*
Leave a Reply