আধুনিকতার ছোঁয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর পাতার ত্যালায়।

নিজস্বসংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর:- গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হাতে তৈরি খেজুর পাতার পাটি। এক সময় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মানুষের কাছে খেজুর পাতার পাটির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় তা বিলুপ্তির পথে।

৮০ থেকে ৯০ দশকে খেজুর পাতার পাটি জেলার সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার হতো। খেজুর পাটিতে ধান শুকানোর কাজ করত অনেকে। সন্ধ্যেবেলায় আড্ডা কিংবা ছোট ছোট শিশুদের বই পড়ার কাজে খেজুর পাতার ছোট ত্যালায় ছিল অন্যতম মাধ্যম। এছাড়াও খেজুর পাতার পাখাও বেশ জনপ্রিয় ছিলো এক সময়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনের ফলে হারিয়ে গেছে খেজুর পাটি।

মানুষের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণ ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটির স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক শীতলপাটি, নলপাটি, পেপসি পাটি, চট-কার্পেট, মোটা পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরণের উপকরণ। এ উপকরণগুলো সহজেই বাজারে পাওয়া যাওয়ায় মানুষ খেজুর পাতার পাটির পরিবর্তে এসব আধুনিক উপকরণ ব্যবহারে দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে হারিয়ে গেছে খেজুর পাটির কদর।

গড়বেতার বড়ডাবচার টিয়া সার জানান, একসময় নিজ হাতে খেজুর পাতার পাটি বানাতাম। নিজেদের ব্যবহার ছাড়াও বিক্রি করে বাড়তি আয় হত। যুগের পরিবর্তনে খেজুর পাতার ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। আগের মত চোখে দেখিনা, না হয় এখনও বানাতে মন চায় খেজুর পাতার পাটি ও পাখা। কিন্তু চাহিদা না থাকায় তাছাড়া প্লাস্টিকের মাদুর সহজলভ্য হওয়ায় আর বানানো হয়ে ওঠে না।

লাপুড়িয়ার রিমা পাল জানিয়েছেন, এক সময় এ অঞ্চলে খেজুরপাতার পাটিসহ অন্যান্য সামগ্রীর ব্যাপক ব্যবহার ছিলো। কিন্তু বর্তমানে এটি নেই বললেই চলে। এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে সরকার খেজুর গাছ লাগানোর জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা উচিৎ, এক দিকে যেমন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খেজুর গাছ রক্ষা পাবে। অপরদিকে পাটি তৈরির সাথে জড়িত হয়ে অনেকের কর্মস্থানের সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরও জানান প্রতিটি মানুষের উচিৎ নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করা। আধুনিকতার উপর নির্ভর হওয়ায় আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় বহুল ব্যবহৃত খেজুর পাতার পাটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ ছিলো। এখন তা আর নেই বললেই চলে।

ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া এই খেজুর পাতার ত্যালায় এর প্রতি মানুষের কি নতুন করে আকর্ষণ তৈরি হবে। সংরক্ষিত হবে আমাদের বাংলার এই মূল্যবান সংস্কৃতির এক ঐতিহ্য সেটাই এখন দেখার।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *