প্রয়াত হলেন ভারতবর্ষের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মরজগতের মায়া কাটিয়ে তিনি পাড়ি দিলেন অমৃতলোকের পথে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অবসান হল একটি যুগের, একটি বর্ণময় অধ্যায়ের।
প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতীয় রাজনীতির এক অনন্য মানুষ। সারাজীবনে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। তিনি হলেন প্রথম বাঙালী রাষ্ট্রপতি। সেই মানুষটির সঙ্গে আমাদের মহিষাদলের ছিল এক নিবিড় সম্পর্ক। তমলুক তথা মহিষাদলকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। অনেকেই জানেন আবার অনেকের জানা নেই, প্রণববাবুর রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি তমলুক তথা মহিষাদলে। শ্রদ্ধেয় সুশীলকুমার ধাড়ার বাংলা কংগ্রেসের হাত ধরেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পথচলা শুরু। বাংলা কংগ্রেস থেকেই তিনি প্রথমবার রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন। বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী সুশীলকুমার ধাড়াকে তিনি তাঁর রাজনৈতিক গুরু বলে মানতেন। তাঁকে তিনি গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন। সুশীলবাবুর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিল নিবিড় সম্পর্ক। ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি মারা যান শ্রদ্ধেয় সুশীলকুমার ধাড়া। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বাতিল করে দিল্লি থেকে মহিষাদলে এসেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। শেষকৃত্য পর্যন্ত তিনি এখানে কাটিয়েছিলেন। সেবার এই মানুষটিকে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
তার আগেও একবার তাঁকে দেখার সৌভগ্য হলদিয়ায় আইওসির একটি অনুষ্ঠানে। তখন প্রণববাবু ছিলেন ভারতবর্ষের অর্থমন্ত্রী। সাংবাদিকতা পেশাটির প্রতি আমার বরাবরের ঝোঁক। সেই নেশা থেকে স্থানীয় সংবাদপত্র ‘সকলের কথা’-র সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেবার প্রণববাবু এসেছিলেন হলদিয়ায় আইওসির একটি অনুষ্ঠানে। বর্তমান নিউজ-18 বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার সুজিত ভৌমিকের সহায়তায় সেই অনুষ্ঠানে থাকার সুযোগ হয়েছিল আমার। সামনে বসে দেখেছিলাম ভারতবর্ষের তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে। শুনেছিলাম তাঁর বক্তব্য। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে আরও কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। এরকম একজন বিশিষ্ট মানুষের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারাটা জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা।
আজ তিনি নেই। আজ খুব বেশি করে মনে পড়ছে সেই দিনগুলি। সারা দেশ হারাল এক মহান মানুষকে। আর আমরা, তমলুক তথা মহিষাদলের মানুষ হারালাম এক আপনজনকে।
ভারতবর্ষের এই মহান সন্তানের আত্মার চির শান্তি কামনা করি।