মাতৃ ভাষা বাংলা ও প্রাসঙ্গিকতা : কলমে রাণা চ্যাটার্জী।

0
626

আমরা বাঙালি,বাংলা সাহিত্য,বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের একটা ভাববেগ ভীষণ ভাবে কাজ করে।কাজের প্রয়োজনে অন্য ভাষার প্রতি আগ্রহ রাখতেই হয় সেটা যদিও আকর্ষণ  ঠিক বলে না প্রয়োজনের বাধ্যবাধকতা। সেটা কিছুটা কাজের তাগিদে বা রুটি রুজি সংগ্রহের জন্য অনেককেই  আমাদের করতে হয়। তবু আমরা যারা বাঙালি ,সেই আতা গাছে তোতা পাখি, সহজ পাঠের মন উদাস করা ছবিতে ভাবুক হওয়া শিখেছি,সরস্বতী পূজার মাদকতা মেখে হাতে খড়ি দিয়ে মা ঠাম্মার মুখে মুখে শেখানো বুলির মতো  অনর্গল কবিতা আউড়ে গেছি তারা কি করে ভুলে যেতে পারি মাতৃভাষা বাংলাকে ! বাংলা ভাষার মিঠাস,ভোলা সত্যিই সম্ভব নয়।বাংলা ভাষার সুমিষ্টতা কে প্রতি মুহূর্তে  তাই উপলব্ধি করি।নিজের ভাষাকে অচ্ছুৎ করে অন্য ভাষা নিয়ে গর্বে ছাতি ফোলানো কাম্য নয়। কখনো নিজের মাতৃভাষাকে হেয় প্রতিপন্ন করে বিদেশি ভাষাকে  বেশি সমৃদ্ধ প্রমাণ করতে চাওয়ার  হামেশাই দৃশ্য যুক্তি তর্ক  পরিবার সমাজ সংসারে দেখা যায় কিন্তু ওসব তাৎক্ষণিক আবেগ অভিমান সরিয়ে যদি দেখি সারা বিশ্বে অগণিত ভাষার মধ্যে  বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা প্রথম সারিতে এবং বাংলা কে নিয়ে প্রতিনিয়ত চর্চা করার প্রবণতার গ্রাফ বেশ ঊর্ধ্বমুখী।

প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি কে ভাষা শহীদ দিবস হিসাবে আপামর বাঙালিরা পালন করি।ইতিহাস ঘাঁটলে বুঝতে পারা যায় বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে ভাষা আন্দোলনের তীব্রতা,রক্তক্ষয়ী আন্দোলন কি ব্যাপক চেহারা নিয়েছিল।ঝরে ছিল কত তাজা প্রাণ!একদল তারুণ্য সালাম,বরকত, রফিক, শফিক,জব্বার, বায়ন্ননের রক্তে রাঙা হয়ে পেয়েছি আমরা কাঙ্খিত মাতৃভাষা।বাংলা অত্যন্ত শ্রুতিমধুর ও মিষ্টি ভাষা হিসাবে  সারা বিশ্বে পরিগণিত ।এই ভাষায় যে পরিমান জনসংখ্যার মানুষ কথা বলে সেই তথ্য আমাদের উৎসাহিত ও গর্বিত করে কারণ সেই দিক থেকে বাংলার স্থান ভাষা হিসাবে তৃতীয়,বাংলা ভাষা ব্যবহার কারীর সংখ্যা বিচারে।

তবু বাংলা ভাষা কে সংরক্ষণ,ব্যবহারিক ভাষা হিসাবে রক্ষা করার তাগিদ বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে খুব কম পরিলক্ষিত হয়। প্রবাসী বাঙালিরা বাংলা সাহিত্য,বাংলা ভাষা নিয়ে চর্চার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ প্রয়াস নেয় তা এখানকার বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে সেভাবে দেখা যায় না।এর পেছনে যে কারণ টা উঠে আসছে তা হলো অধিকাংশ অভিভাবক ই চাইছেন,বাংলা নয়,ইংরাজি,বিদেশি ভাষা শিখুক তার সন্তান নইলে আগামী অন্ধকার, পিছিয়ে পড়বে।পিছিয়ে পড়ার যুক্তি সর্ব ভারতীয় বিচারে   প্রতিষ্ঠা হওয়ার লক্ষ্যে অবশ্যই অন্য ভাষা শেখা যেতেই পারে কিন্তু নিজের মাতৃভাষাকে একদম সরিয়ে রাখা ,পড়তে সন্তানদের উৎসাহিত না করা এটা মোটেও ঠিক নয় বরং সময়ে সুযোগ মতো নিজ ভাষার গভীরতায় সমৃদ্ধ হতে সন্তানদের কাছে বাংলা সাহিত্য,বাংলা গান প্রভৃতি সহজলভ্য করা দরকার।এভাবেই সন্তান সন্ততি দের মধ্যে বাংলা ভাষার সমুদ্র সমান গভীরতা,মাদকতা বাংলা সাহিত্যিক,কবিদের অমর সৃষ্টিকে জানা,পড়ার ইচ্ছার বীজ সঞ্চারিত হোক অভিভাবকদের দায়িত্ব সচেতন কর্তব্যে।মাতৃভাষা কে নিয়ে মাতামাতি না হোক,তাবলে বাংলা লিখতে পড়তে শিখবে না সন্তান এটা সত্যিই বাংলা ভাষার পক্ষে অবমাননা।

দক্ষিণ ভারত যদি পারে,কেন আমরা পারবো না বাংলা কে অফিসিয়াল ভাষায় আনতে এ কোটি টাকার প্রশ্ন।তবু নিজেদের সচেষ্ট হতে হবে বাংলা সাহিত্যের বিপুল গভীরতাকে সন্তান দের পড়তে আগ্রহী করে বাঁচিয়ে রাখতে,তবেই না ভাষা আন্দোলনে শহীদ দের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।ক্যারিয়ারের স্বার্থে বৃহৎ প্রতিযোগিতার স্বার্থে অন্য ভাষায় পড়াশোনা হোক,রপ্ত করুক সন্তান সন্ততি ক্ষতি কি বরং এটা দরকার যুগের তালে তাল মিলিয়ে চলতে ।তবুও এর পাশাপাশি কিন্তু প্রাণের ভাষা মাতৃভাষা বাংলা সেটাও শিখুক তারা।বাংলা ভাষার যে বিপুল সাহিত্য সমৃদ্ধি,সাগরের মতো গভীর ব্যাপ্তি তা থেকে যেন অবিভাবক দের উন্নাসিকতায় সন্তানরা  তা থেকে বঞ্চিত না হয় এটাই কাম্য হওয়া উচিত।বাংলা সাহিত্য,বাংলা গানের জাদু মিঠাস সিডি ড্রাইভে ভরা থেকে কেবল যেন ড্রইং রুমের পেল্লাই ওয়াড্রব ঠাসা হোক তা চাইনা বরং সঞ্চারিত হোক বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের মধ্যে,তবেই বাচঁবে আমাদের বাংলা ভাষা।সার্থক হবে ভাষা দিবস ও বাংলা ভাষা কে যোগ্য সন্মান দিয়ে প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস।