Skip to content
  • Wednesday, 21 May 2025
  • 11:11:04 AM
  • Follow Us
Sob Khabar

Sob Khabar

  • হোম
  • রাজ্য
    • উত্তর বাংলা
      • আলিপুরদুয়ার
      • কোচবিহার
      • দক্ষিণ দিনাজপুর
    • দক্ষিণ বাংলা
      • পশ্চিম মেদিনীপুর
      • পুরুলিয়া
      • পূর্ব মেদিনীপুর
      • ২৪পরগনা
        • গোসাবা
  • কলকাতা
  • দেশ
  • বিদেশ
  • ওপার বাংলা
  • খেলা
  • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • সাক্ষাৎকার
  • লাইফস্টাইল
  • স্বাস্থ্য
  • সাহিত্য
  • রেসিপি
  • সম্পাদকীয়
  • Home
  • উচ্ছ্বাস : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।
Featured সাহিত্য

উচ্ছ্বাস : দিলীপ রায় (+৯১ ৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

sobkhabaradmin Sep 18, 2021 0

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শিখা । নিজেকে দেখছে । কোমর পর্যন্ত ঘন কালো লম্বা চুল । লম্বা চুলটা শিখার গর্ব । এজন্য তার চুলের যত্ন সর্বক্ষণ । চেহারাটা স্লীম । গায়ের রঙ ফর্সা । তবে সংসারের যাঁতাকলে পড়ে গায়ের রঙ কিছুটা ম্লান । তবুও নিঃসন্দেহে বলা চলে তার আকর্ষণীয় শারীরিক স্থিতি । লম্বা মেয়েই খোঁজ করছিল তন্ময় । শিখা পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা । গুপ্তিপাড়ার অন্যান্য বৌদের মধ্যে শিখা একমাত্র লম্বা । তন্ময় লম্বা মেয়ে বিয়ে করতে পেরে বন্ধু বান্ধবদের কাছে গর্বিত । ছোট সংসার । তন্ময় ও তার দুটি বোন । বোন দুটির বিয়ে হয়ে গেছে । তারা নিজেদের পছন্দমতো পাত্র জুটিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে । তন্ময়কে বোনদের বিয়ে দেওয়ার জন্য বেশী কসরত করতে হয়নি । তারা ঘর সংসার নিয়ে শান্তিতে আছে । বোনদের ঠিক মতো বিয়ে হওয়ায় তন্ময় খুব খুশী ।
কলকাতার ডালহৌসিতে নিক্কো বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি একটি বড় বেসরকারি অফিসে তন্ময়ের চাকরি । সকাল বেলায় অফিসে বেরিয়ে যায়, ফিরতে ফিরতে রাত্রি প্রায় ন’টা । ফার্স্ট কাটোয়া লোকাল গুপ্তিপাড়ায় ৭টা ২০মিনিটে । তন্ময় প্রতিদিন ফার্স্ট কাটোয়া লোকাল ধরে ঠিক সাড়ে নয়টার মধ্যে তন্ময় অফিসে পৌঁছায় । মাইনে ভালই । তাদের সংসারের পক্ষে যথেষ্ট । তন্ময় যখন চাকরির তদ্বির তদারকিতে ব্যস্ত, সেই সময় তার বাবা ও মা পর পর ইহলোক ছেড়ে চলে যান । যার জন্য নিজেকে দাঁড় করাতে তন্ময়কে বেশ বেগ পেতে হয়েছে । তারপর শিখার সঙ্গে বিয়ে । সে সবে গ্রাজুয়েট । তার দিকে গাঁয়ের ছেলেপুলের চাহনী যখন বাড়তির দিকে, ঠিক সেই সময় তন্ময়ের শিখাকে বিয়ের প্রস্তাব । চার মেয়ের বিয়ে দেওয়ার তাগিদে শিখার বাবা পাত্র হাত ছাড়া করতে চাননি । মাত্র বাইশ বছর বয়সে শিখা তন্ময়ের জীবনসঙ্গিনী ।
তারপর দেখতে দেখতে তাদের বিবাহিত জীবনের ন’টি বছর অতিক্রান্ত । আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী । শুক্রবার, ১লা অগ্রহায়ন । অফিস যাওয়ার সময় তন্ময় জোর দিয়ে বলে গেছে, সে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে । বাড়িতে ক্ষুদ্র আয়োজন । তন্ময়ের মোট ছজন বন্ধুকে সপরিবারে নিমন্ত্রণ । রান্নার ঢঙি মাসি একজন হেল্পার নিয়ে সে রান্নায় ব্যস্ত । ফ্রায়েড রাইস, পম্প্‌লেট তন্দুরি, দই কাতলা, মাটন কষা, চাটনি, পাপড়, জল ভড়া সন্দেশ, রসগোল্লা । তা ছাড়া শিখার জীবনে আরও একটা বড় খুশীর খবর । অনেক ডাক্তার, বৈদ্যি, করার পরে দীর্ঘ নয় বছরের মাথায় তার পেটে সন্তানের খবর । গতকাল খবর পাওয়ার পর থেকে শিখা খুশীর আনন্দে আত্নহারা । সারারাত আনন্দে বিহ্বল হয়ে তার ঘুম হয়নি । তাই দুপুরের এই অলস মুহূর্তে শিখার বিছানায় গড়াগড়ি ।
নির্দ্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান শেষ !
তারপর নির্দ্দিষ্ট দিনে শিখার কোলে কন্যা সন্তানের আবির্ভাব । বাড়িতে খুশীর আবহাওয়া । তন্ময়ের দুই বোন এসে হাজির । তারা দাদার কন্যা সন্তানের খবরে উচ্ছ্বসিত । পাড়ার লোকেরা এতদিন যারা শিখাকে আড়ালে আবডালে বাঁজা মহিলা হিসাবে অপমান করতো ও দু-কথা শোনাতো, তাদের মুখ এখন ভোঁতা । অবশেষে সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় শিখার দীর্ঘ নয় বছরের অপেক্ষার অবসান ।
মেয়ের নাম রাখল তিয়াসা । তন্ময়ের পছন্দ করা নাম । ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে তিয়াসা । শিখা তন্ময়কে মনে করিয়ে দিলো তিয়াসার মুখে ভাত দেওয়ার কথা । অর্থাৎ হিন্দুদের প্রথা অনুযায়ি অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠান । আট মাসের মাথায় তিয়াসার মুখে ভাত অনুষ্ঠান জাঁকজমকভাবে মিটলো । তিয়াসা যতো বড় হচ্ছে তার দুষ্টুমি ততো বাড়ছে । এখন মুখে কথার খই ফুটেছে । এক বছর আট মাস । পুরোমাত্রায় তার হাঁটা চলা, খিল খিল হাসি, সারা বাড়ি পরিক্রমা, নিত্যনৈমিত্তিক । শিখা মেয়েকে নিয়ে সর্বক্ষণ ব্যতিব্যস্ত ।
পাঁচ কাঠা জায়গার উপর তাদের এক তলা বাড়ি । তন্ময়ের বাবা বাড়িটা বানিয়ে রেখে গেছেন । গুপ্তিপাড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটার ঠিক পাশে । তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে আসাম রোড । রাস্তা দিয়ে হরকদম গাড়ি ঘোড়া । এইজন্য শিখাকে সবসময় সজাগ থাকতে হয় । মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখতে হয় । কোনো কারণে বাড়ির বাইরে চলে গেলে বিপদের সম্ভাবনা । অনেক মেহনত করে সে কন্যা সন্তানের মা হয়েছে । সেইজন্য মেয়েকে নিয়ে শিখার দুশ্চিন্তার শেষ নেই ।
সেদিন সোমবার । তন্ময় যথাসময়ে অফিস বেরিয়ে গেছে । সকালবেলায় তন্ময় এখন চা জল-খাবার খেয়ে অফিসে ছোটে । মেয়েকে নিয়ে শিখা এখন সকালে ডাল, সবজি ভাত বানিয়ে দিতে পারছে না । যার জন্য কোনোদিন রুটি-সবজি, কোনোদিন পাউরুটি ডিমের ওমলেট, ইত্যাদির সাথে স্নানের পর চা খেয়ে তন্ময় স্টেশনে ছোটে । ফার্স্ট কাটোয়া লোকাল একদম নির্দ্দিষ্ট সময়ে প্লাটফর্মে ঢোকে । সোমবার দিন তন্ময় বের হয়ে যাওয়ার পর শিখা জামা কাপড় সার্ফের জলে ভিজালো । সেগুলো ধুয়ে উঠতে বেলা এগারোটা । ঘর মোছার কাজের মাসি এগারোটার পরে ঢোকে । সেদিন তারও অনেক দেরী । বারোটা নাগাদ ঢুকেছে । যেহেতু দেরীতে ঢুকেছে, সেইজন্য তাড়াহুড়োর মাথায় প্রাচীরের গেট ও ঘরের মেন গেট লাগাতে ভুলে গেছে । দরজা খোলা পেয়ে তিয়াসা বেরিয়ে সোজা বড় রাস্তায় । রাস্তার উল্টোদিকে শিমুল গাছ তলায় খগেন কাঁসা পিতলের বাসনের ঝুড়ি নামিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল । শিমুলডাঙার খগেন ঝুড়িতে কাঁসা পিতল নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে । বাচ্চাটাকে ছুটতে দেখে খগেন উঠে দাঁড়ালো । রাস্তার উল্টোদিক থেকে তিয়াসা খগেনকে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি তাঁর দিকেই ছুটছে । বাচ্চাটা দেখে খগেনের অন্তর মায়ায় ভরে গেল । খগেন তাড়াতাড়ি বাচ্চাটাকে ধরার জন্য এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় একটি লড়ি প্রচণ্ড বেগে তিয়াসার দিকেই ধেয়ে আসছে । অবস্থা বেগতিক দেখে খগেন উদ্বিগ্নতায় ভীষণ উতলা । কালবিলম্ব না করে ছুটে বাচ্চাটাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো । কয়েক সেকেণ্ড এদিক ওদিক হলে তিয়াসাকে বাঁচানো ভগবানেরও অসাধ্য ছিল । অন্যদিকে তিয়াসা খগেনের কোলে উঠে তার প্রাণখোলা হাসি ! শিমুল গাছ তলায় পৌঁছে বাচ্চাটাকে কোলের মধ্যে নিয়ে খগেনের খুব আদর । তারপর তাকে শিমুল গাছ তলায় নামিয়ে পকেট থেকে লজেন্স হাতে ধরিয়ে দিলো । তিয়াসা লজেন্স পেয়ে খুব খুশী । মুখে ঢুকিয়ে নিমেষের মধ্যে তার লজেন্স শেষ ।
তিয়াসা এবার খগেনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তোমার নাম কী ?”
আমি লজেন্স কাকু ।
তুমি খুব ভাল কাকু ।
তিয়াসার মুখে মিষ্টি মধুর স্বরে “তুমি ভাল কাকু” কথাটা শুনে আবার তিয়াসাকে খগেনের অনেক আদর !
সেই সময় শিখার তীব্র চিৎকার, “তিয়াসা, তুই কোথায় ?’
শিমুল গাছ তলায় তিয়াসা খগেনকে হাত তালি শেখাতে ব্যস্ত । মা তাকে ডাকছে তাতে তিয়াসার ভ্রূক্ষেপ নেই । এমনকি খগেনও তিয়াসার মায়ের ডাক শুনতে পায়নি । সে তখন তিয়াসার সঙ্গে খেলায় মত্ত । শিখা খগেনের কাছ থেকে তিয়াসাকে হেচকি টান দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে সোজা বাড়ি । মায়ের কোলে চেপে তিয়াসা পেছন ফিরে তাকিয়ে খগেনের দিকে হাত নেড়ে বলল, “টা- টা লজেন্স কাকু ।“
ছলছল চোখে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকল খগেন !
খগেন কাঁসা পিতলের বাসনপত্র নিয়ে অন্য গ্রামে বিক্রির উদ্দেশে থাকায় পর পর দুদিন গুপ্তিপাড়ায় আসতে পারল না । কিন্তু মেয়েটাকে দেখার জন্য তাঁর মন ছটফট । একদিনেই মেয়েটার প্রতি খগেনের দুর্বলতা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে । তিনদিন পরে খগেন কাঁসা পিতলের ঝুড়ি স্টেশনে রেখে আবার শিমুল গাছ তলায় । একশ টাকা দামের চকলেট হাতে নিয়ে শিমুল গাছ তলায় বসে রইল খগেন । তিয়াসাকে লজেন্সটা দিতে পারলে তার শান্তি । তেমনি লজেন্স পেলে মেয়েটাও খুব খুশী হত । খগেন ঐ বাড়ির বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইল । জানালায় দাঁড়িয়ে তিয়াসা খগেনকে দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশী । প্রথমে ডান হাত দিয়ে ফ্লাইং কিস । তারপর তিয়াসা ডান হাত দিয়ে খগেনকে ইশারা করে ডাকল জানালার কাছে যাওয়ার জন্যে ।
তিয়াসা জানালার গ্রিলে হাত ঢুকিয়ে খগেনের কাছ থেকে লজেন্স নিজের হাতে নিলো । তারপর লজেন্সটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে অবাক ! এত বড় লজেন্স ! ঠিক সেই মুহূর্তে শিখা এসে উপস্থিত । তিয়াসাকে জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে সোজা ঘরে । তিয়াসার হাতের চকলেট ছিনিয়ে নিয়ে শিখা রাগে এমনভাবে বাইরে ছুড়লো, সেই চকলেট অবশেষে গিয়ে খগেনের মাথায় ! খগেন তাতে রাগ করল না। পুনরায় আরও কিছুক্ষণ শিমুল গাছ তলায় বসে রইল খগেন । তারপর মেয়েটাকে না দেখতে পেয়ে মনোকষ্টে স্টেশনে ফিরে গেল ।
তিয়াসার প্রতি খগেনের টান ক্রমশ বাড়ছে । গুপ্তিপাড়ায় ঢুকলেই খগেন শিমুল গাছ তলায় দাঁড়িয়ে বাচ্চাকে দেখার জন্য উঁকিঝুঁকি । তিয়াসা খগেনকে দেখতে পেলে লজেন্স কাকুর কোলে ওঠবার জন্য তেমনি ছটফট । তাকে থামানো ভীষণ কষ্ট । শিখা ব্যাপারটাকে আর মেনে নিতে পারছে না । এতদিন সে তন্ময়কে ঘটনাটা জানায়নি । পাছে মেয়ের জন্য অযথা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবে, তাই শিখা চুপচাপ ছিল । কিন্তু লোকটার রকমসকম দেখে শিখার মনে কু-গাইছে । বিপদের অশনি সঙ্কেত বুঝতে পারছে । তা ছাড়া লোকটা কেমন যেন দেখতে । মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি । চুলগুলি এবড়ো-খেবড়ো । কিম্ভূতকিমাকার চেহারা । শিখা ভয়ে সংকুচিত । তার মনে বারংবার কু-গাইছে, “লোকটা ছেলে-ধরা নয় তো ?” তিয়াসাকে লজেন্স খাইয়ে বেহুঁশ করে নিয়ে পালাবার ধান্দা কিনা ? তিয়াসার কিছু একটা হয়ে গেলে শিখা আর বাঁচবে না । ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে উঠছে শিখা । শিমুল গাছ তলায় বসে বিশ্রিভাবে তাকিয়ে থাকে । হাত দিয়ে কীসব ইঙ্গিত করে । শিখা রীতিমতো ধন্দে, লোকটার আসল মতলব কী ? সে কী তিয়াসাকে কিডন্যাপ করার ধান্দায় ওত পেতে রয়েছে, নাকি তাকে শ্লীলতাহানি লোকটার আসল উদ্দেশ্য ? শিখা ভাবতে পারছে না । এবার তন্ময়কে জানিয়ে ব্যাপারটার নিস্পত্তি দরকার । প্রয়োজনে লোকটাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া । তারপর পুলিশ যা ভাল বুঝবে সেটাই করবে ।
সেদিন রবিবার । তন্ময়কে সব খুলে বলল শিখা । তন্ময় লোকটার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল । রাগে অগ্নিশর্মা । পারলে তখনই খগেনকে হাজতে ঢোকায় । তন্ময় নিজে কিছু করতে চায় না । তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা ! সেই কারণে তন্ময় থানায় ছুটল । থানার বড় বাবু ছিলেন না । শেষে থানার মেজ বাবুকে সবিস্তারে শিমুল গাছ তলায় বসে থাকা লোকটার কথা জানাল । মেজ বাবু সব শুনে বললেন, “এবার আগন্তুক লোকটা শিমুল গাছ তলায় বসলে আমাদের খবর দেবেন । আমরা লোকটাকে পুলিশ ভ্যানে তুলে হাজতে ভরে দেব ।“
এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে রইল তন্ময় ।
রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, খগেন কাঁসা পিতলের বাসনপত্র বিক্রি করতে গুপ্তিপাড়ায় ঢুকল না । বৃহস্পতিবার ঠিক বেলা বারোটার সময় খগেন শিমুল গাছ তলায় বসল । এই সময়টায় তাঁর ফুরসত মেলে । কাসর ঘন্টা বাজিয়ে কাঁসা পিতলের বাসনপত্রের ঝুড়ি মাথায় নিয়ে হাকতে থাকে, “কাঁসা পিতলের বাসন চাই । থালা, হাতা, খুন্তি, বালতি, জগ, ছোট কলসী, নেবেন গো ।“ একবার গ্রামে চক্কর খাওয়া হয়ে গেলে ঝুড়িটা অন্যত্র রেখে গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে শিমুল গাছ তলায় এসে বসে । বৃহস্পতিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি । তাই ঠিক বেলা বারোটার সময় গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে শিমুল গাছের নীচে এসে বসল । তাকে দেখে তিয়াসার কী চিৎকার, “আমি লজেন্স কাকুর কাছে যাব !”
সঙ্গে সঙ্গে থানা থেকে পুলিশ ভ্যান এসে হাজির ।
পুলিশ জোরপূর্বক খগেনকে তুলে নিয়ে সোজা থানায় । খগেন বার বার জানতে চাইছে, “আমার কী অপরাধ ? আমাকে অ্যারেস্ট করার কারণ ?”
থানার মেজবাবু কোনো কথা শুনতে নারাজ । তাকে নিয়ে এসে থানার লক-আপে খগেনকে ঢুকিয়ে দিলেন । তারপর থানার বড়বাবু সব শুনে মেজবাবুকে বললেন, “আপনি সত্বর বাচ্চাকে নিয়ে তার মা-বাবাকে থানায় আসতে বলুন । তাদের লিখিত অভিযোগ চাই । এভাবে কোনো ডকুমেন্টারি এভিডেন্স ছাড়া বা লিখিত অভিযোগ ছাড়া কাউকে মুখের কথায় অ্যারেস্ট করা যায় না । মিডিয়ায় ফাঁস হলে আর রক্ষা থাকবে না । হেড কোয়ার্টার পর্যন্ত খবর পৌঁছে যাবে । তারপর কী ফল দাঁড়াবে আপনি আন্দাজ করতে পারছেন ! তাই এক্ষুনি তাদের ডেকে পাঠান ।“
মেজবাবুর ডাক পেয়ে তিয়াসাকে নিয়ে তন্ময় ও শিখা থানায় উপস্থিত । বড়বাবু খগেনকে লক আপ থেকে তাঁর চেম্বারে ডাকলেন । খগেন আসার সাথে সাথে তিয়াসা ছুটে খগেনের গলা জড়িয়ে ধরল । বড়বাবু তিয়াসা ও খগেনের দৃশ্য দেখতেই ব্যস্ত । খগেনের স্নেহ-ভালবাসায় তিয়াসা কতখানি সুরক্ষিত সেটা দেখে তাজ্জব বনে গেলেন । তারপর বড়বাবু শান্ত গলায় খগেনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কেন রোজ তিয়াসাকে উত্ত্যক্ত করো ?“
হাউ হাউ করে কেঁদে দিলো খগেন । তাঁর চোখের জল মাটিতে গড়িয়ে পড়ল ।
বড়বাবু আবার বললেন, “তোমার ভয় নেই । তুমি নিশ্চিন্তে সত্যি কথা বলো ?”
তখনও খগেন কেঁদেই যাচ্ছে । কান্নাভেজা গলায় বলল, “স্যার, তিয়াসার মতো তাঁর একটি মেয়ে ছিল । মাত্র দুবছর বয়সে নদীর জলে ডুবে মারা যায় । তার মেয়েটা ঠিক তিয়াসার মতো । তিয়াসাকে দেখলে তাঁর মরা মেয়েটার মুখ অন্তরে ভেসে ওঠার কারণেই তিয়াসের প্রতি দুর্বলতা । তিয়াসার মধ্যে আমি নিজের মেয়েটাকে দেখতে পাই ।“ তারপর বড়বাবুর পা জড়িয়ে ধরে খগেন বলল, “আমি গরীব মানুষ । কাঁসা পিতল ফেরী করি । আমাকে জেলে দেবেন না বড়বাবু ।“
তিয়াসা খগেনের চোখের জল মুছিয়ে বললো, “আমার লজেন্স ?”
এক ঝিলিক ঠোটের কোনে হাসি দিয়ে একশ টাকা দামের চকলেট বের করে তিয়াসার হাতে ধরিয়ে দিয়ে খগেনের কী কান্না !
“থ্যাঙ্ক ইউ” বলে তিয়াসা খগেনের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ল ।
————-০————–

sobkhabaradmin

Website:

Related Story
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
বিভিন্ন অভিনেতাদের হুবাহু ডায়লগ ও বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে গান গেয়ে চলেছেন গঙ্গারামপুর শহরের ২নম্বর ওয়ার্ডের কালিতলার বাসিন্দা টোটো চালক যুবক সত্যজিৎ।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পশ্চিম মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
মোটর বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত ৩ আশঙ্খাজনক ২।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পূর্ব মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য
পর্যটক অপরদিকে মৎস্যজীবীদের সতর্ক বার্তা দিলেন রামনগর ব্লক প্রশাসন।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured উত্তর বাংলা কোচবিহার দেশ বিবিধ রাজ্য
সারা রাজ্যের সঙ্গে মাথাভাঙাতেও থানার সামনে বিক্ষোভ দেখালো এসইউসিআই।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured দেশ রাজ্য লাইফস্টাইল সম্পাদকীয় সাহিত্য
আজ আন্তর্জাতিক চা দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং দিনটির ইতিহাস।।।।।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured কলকাতা দক্ষিণ বাংলা দেশ রাজ্য সাহিত্য
স্মরণে বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী।।।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured কলকাতা দেশ বিনোদন বিবিধ রাজ্য সম্পাদকীয় সাহিত্য
কিংবদন্তি বাঙালি অভিনেত্রী সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured দেশ বিবিধ সম্পাদকীয় সাহিত্য
আজ ২১ মে, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured আলিপুরদুয়ার উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ রাজ্য
ফালাকাটা :চিতা বাঘ খাঁচাবন্দি করতে পাতা হয় লোহার খাঁচা,আর সেই খাঁচায় চিতাবাঘ নয়,বন্দি হলো তিন তিনটি কুকুর।
sobkhabaradmin May 20, 2025
Featured উত্তর বাংলা কোচবিহার দেশ বিবিধ রাজ্য
সামসেরগঞ্জে আগ্নেয়াস্ত্র সহ বাবা ও ছেলে গ্রেপ্তার!
sobkhabaradmin May 20, 2025

Leave a Reply
Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

YOU MAY HAVE MISSED
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
বিভিন্ন অভিনেতাদের হুবাহু ডায়লগ ও বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে গান গেয়ে চলেছেন গঙ্গারামপুর শহরের ২নম্বর ওয়ার্ডের কালিতলার বাসিন্দা টোটো চালক যুবক সত্যজিৎ।
sobkhabaradmin May 21, 2025
দক্ষিণ বাংলা দেশ বাঁকুড়া বিবিধ রাজ্য
জঙ্গলমহলে নাম নেই আবাসে, মাটির বাড়িতেই বেঘোরে মৃত্যু! ‘পাকা বাড়ি থাকলে ওকে হারাতে হত না’, আক্ষেপ আহত বাবার।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পশ্চিম মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
মোটর বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত ৩ আশঙ্খাজনক ২।
sobkhabaradmin May 21, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ পূর্ব মেদিনীপুর বিবিধ রাজ্য
পর্যটক অপরদিকে মৎস্যজীবীদের সতর্ক বার্তা দিলেন রামনগর ব্লক প্রশাসন।
sobkhabaradmin May 21, 2025

Copyright © 2025 | Powered by WordPress | Newsio by ThemeArile