Skip to content
  • Monday, 19 May 2025
  • 5:34:10 PM
  • Follow Us
Sob Khabar

Sob Khabar

  • হোম
  • রাজ্য
    • উত্তর বাংলা
      • আলিপুরদুয়ার
      • কোচবিহার
      • দক্ষিণ দিনাজপুর
    • দক্ষিণ বাংলা
      • পশ্চিম মেদিনীপুর
      • পুরুলিয়া
      • পূর্ব মেদিনীপুর
      • ২৪পরগনা
        • গোসাবা
  • কলকাতা
  • দেশ
  • বিদেশ
  • ওপার বাংলা
  • খেলা
  • বিনোদন
    • ভ্রমণ
    • সাক্ষাৎকার
  • লাইফস্টাইল
  • স্বাস্থ্য
  • সাহিত্য
  • রেসিপি
  • সম্পাদকীয়
  • Home
  • চন্দ্রমুখীর ডলু ও ভলু : কলমে–চায়না খাতুন।
Featured সাহিত্য

চন্দ্রমুখীর ডলু ও ভলু : কলমে–চায়না খাতুন।

sobkhabaradmin Sep 30, 2021 0

সকালের দিকে মানান সই ঠান্ডা দেখে কে বলবে ঠা – ঠা রোদ্দুরের চৈত্র মাস।বেলা বাড়লে তবেই টেরটি পাওয়া যায়।
মনিকা বিছানায় শুয়েই শুনতে পাচ্ছে চন্দ্রমুখীর
যতো আব্দার তার মায়ের কাছে। মা কাজে যাবার আগে বোধহয় মাম খেতে চাইছে– মা দুদু এন (মা দুধ খাবো)।
হ্যাঁঞ তো জম কিদাম,নিঁতো দ্য আদো বাঙ (এই তো খেলি, এখন আর না)।
খাঁটি চুলুন জম এন (একটুখানি খাবো) ।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেয়ের আব্দার শোনার সময়টা বসুধার কমে আসে। সে কাজে যাবে এখুনি মহারাজের জমিতে। টিফিন কৌটা ভরে ভাত নিয়ে বলে– এ্যা মা, বুঢি ঠ্যে তাঁহে নাম (এ মা বুড়ির কাছে থাকবি)।
বসুধা ভালোই জানে শাশুড়ির কাছে থাকার কথা বললেও সকালের দিকে মেয়ে থাকে পাশের বাড়ির দিদিমণির কাছেই।
দিদি মণি স্কুল চলে গেলে মেয়ে সারাদিন খেলতে খেলতে ধূলোমাখা শরীর নিয়ে ঘুমে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। কতোদিন এমন দেখেছে মণিকা।মা থাকলেও কখনো কখনো এমনটাই করে চন্দ্র। ওর মা সেসব দেখতে পেয়েও থাকে নির্বিকার।
মনিকা চন্দ্রকে ধুলোয় পড়ে থাকতে দেখে একদিন বসুধাকে বলেছিল – আহা ছেলে মানুষ, ওকে মাটি থেকে তুলে বিছানায় শুইয়ে দাও ?
বসুধার কঠিন উত্তর -এটাই বাচ্চাদের প্রকৃতি। আর ওদের সমাজে এসব নিয়ে আদিখ্যেতা দেখানোর সময় নেই গো দিদিমণি।
সব বাস্তবতা চোখের সামনে ফুট ফুট করলেও তবুও মনিকার কোথায় যেন বাজে।
শিশু তো সব সমান, সে, যে কোন ধর্মেই হোক না কেন। ওরা তো নারায়ন। চন্দ্রমুখীর দিকে তাকালেই মণিকার সব দুঃখ কোথায় যেন উবে যায়। মনে হয় এতো মায়ার জিনিস তবুও ধূলোয় গড়াগড়ি খায়,ওর মা তো একটু যত্ন করলে পারে।
মণিকার শূন্য বুকটা কেমন কষ্টে কঁকিয়ে উঠে।
চন্দ্র এখন একটু বুঝতে শিখেছে তাই বুঝি মুখের ভিতরেই গুনগুনিয়ে আড়ি করে । প্রথম প্রথম মায়ের যাওয়ার সময় হলেই চিল চিৎকারে পাড়া মাথায় করত।

এই তো কদিন আগেই চৈত্রের দাবদাহের কটাক্ষ সহ্য করে ঝিমলি টুডুর কালিন্দী দুই সন্তানের জননী হলো। দুটোই কন্যা সন্তান। তাতেই খুশি ঝিমলি কাকিমা। বরং বলেছিল –বৌমা ছাগল পুষেই তো সংসারে দুটো ট্যাকা।এই বুড়ি বয়সে কোথায় আর কাজে যাই।
সে কথা মণিকার থেকে বেশি কে আর বোঝে।
সকাল হলেই বৌমা মেয়েকে শাশুড়ির জিম্মায় ফেলে সারা সারা দিন থাকে কাজে।
সারাদিন তার ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় ঐ বুড়িকেই। তাতেই কি আর শান্তি আছে,পান থেকে চুন খসলেই মুস্কিল।
কতো কটু কথা যে শুনতে হয় শাশুড়িকে।
ওদের ভাষা সব বোধগম্য হয় না ঠিকই,তবে ঝিমলির মুখটা দেখে বড়ো অসহায় লাগে।

কালিন্দী যেন মেয়ে প্রসব করেই মুক্তি পেয়েছে।
এবার সব দায়িত্ব চন্দ্রমুখীর। আবার আদর করে নাম দিয়েছে ডলু ও ভলু। নিজেকে সামলাতে একটি লোক চাই,সে নিজেই যেন কতো বড়োটি হয়ে গেছে।
আজকাল তার খেলা, আদর, ঘুম পাড়ানো, অভিমান সব ঐ ডলু ও ভলুর সাথে ।

মনিকা উঠি উঠি করবে এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো–জেঠিমা দরজা খোলো।
জেঠু তো ওর পায়ের পাতার শব্দটি পেলে হয়, দুধের মুখে টুঁ শব্দ শুনেই পড়ি মরি করে যাই রে সোনা যাই।
ছোট্ট আব্দার গুলো জেঠুর কাছে বলে চন্দ্র কি আনন্দ পায় তা মনিকা জানে না তবে তার জেঠু যে পৃথিবীর পরম আনন্দে আকুলিত হয় সে আর বুঝিয়ে বলতে হয় না।
কিরে এতো সকালে আবার কি আব্দার।
মা, বাবা কামি চলে গেল।
চন্দ্রের বগলে ছাগল বাচ্চা দেখে মনিকা হেসে বলে — হ্যাঁরে চন্দ্রমুখী ছাগল বাচ্চা এনে ছিস কেন?
এরা ছাগল বাচ্চা নয় গো জেঠু ,ডলু – ভলু ।
ও তাই নাকি।
এগুলো আমার ডলু ভলু ম্যারম।
ম্যারম ?
মানে, তুমি জানো না?
তোমাদের ভাষায় ছাগল।
আমাদের ভাষায় ম্যারম।
আচ্ছা, তাই বুঝি ? তুমি নিজেই তো ছেলেমানুষ, ওদের এনেছো কেন?
না আমি বড় হয়ে গেছি,দ্যাখো জেতিমা।
মনিকা ওর ছেলেমানুষী দেখে বলে- বাচ্চা গুলোর মা কাঁদবে, তুমি ওদের মায়ের কাছে দিয়ে এসো।
না আমার মা বকবে।
কেন বকবে ?
সারাদিন আমি কি নিয়ে খেলব?
মা বলেছে আমার ম্যারম ছেলেদের সাথে খেলতে।
তা না হলে কার কাছে থাকবো আমি?
চন্দ্র নাছোড় ছাগল বাচ্চাদের নিয়ে। অগত্যা মনিকা হার মেনে বলে- ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি, তোমাকে আর পাকা পাকা কথা বলতে হবে না।

দুধের দাঁত শক্ত হতে না হতেই চন্দ্রমুখী এটুকু বয়সেই বুঝে গেছে মা কাজে গেলে নিজেকে একলা থাকার উপায় বের করে নিতে হবে। শিশুদের বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা পরিবেশ পরিস্থিতিই শিখিয়ে দেয়। কতো অভিমান ঐ শিশু মুখে । মনিকা আর কথা বাড়ায় না।
জেতিমা তোমরা চা খেয়েছো ?
কেন, তুমি খাবে ?
আমার মা চা করে নে তো, বলেছে জেঠুর কাছে খাবে।
ম্যারম বাচ্চাদের নিয়ে তুমি কি করে চা খাবে?
ওরা কিছু করবে না, চুপ করে আমার কোলে বসে থাকবে।
মনিকা চন্দ্রের জেদের কাছে হার মেনে মিশ্র একটা খুশিতে জড়িয়ে ধরে শুধু শান্তির শ্বাস ফেলে বলে – ভারী দুষ্টু – মিষ্টি একটি মেয়ে ।

ছুটির দিন।সকাল থেকে কাজের গড়িমসি, স্কুল যাওয়ার তাড়া নেই বলেই বোধহয় আরও বেশ ভালো লাগে তাদের। সকালের দিকে যতো তাড়াই থাকুক চন্দ্রমুখী না এলে কেমন যেন সারা বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। সারাক্ষন ওর দুধেল দাঁত মুখে কথা যেন অমৃত সমান।চা মুড়ি ছড়িয়ে একসা করে, তবুও ভালো লাগার অনুভূতি। কেন এমন হয় সে কথা সে জানে না আর স্বয়ং ঈশ্বর তো অন্তর্যামী ।

চায়ের পাটি শেষ করে মণিকা চন্দ্রের সাথে কথা বলতে বলতেই হাতের কাজ গুছিয়ে নিচ্ছিল।
বৌমা দরজা খোলো।
ঐ বুঝি ঝিমলি এলো, ঘরের মোছামুছির কাজ চন্দ্রের ঠাকুমা ঝিমলি কাকিমাই করে।
বুঢি আমি বৃষ্টি দিদির কাছে যাবো।
ব্যালকনি থেকে দেখতে পেয়েছে বৃষ্টিকে।পাড়া থেকে আসে খেলতে। বাচ্চারা বাচ্চাদের সঙ্গই পছন্দ করে। শিশুমনের অনুভূতি যেন আদি অনন্তকালের।
দেখেছো বৌমা এর জ্বালা কি একটা,এই বলবে জেঠুর কাছে যাবো পরক্ষনেই আবার খেলব।
আর কি করবে, শিশুমন তো সদা চঞ্চল
তুমি বরং চন্দ্রকে দিয়েই এসো।

বেলা দুই প্রহর।মণিকার এতোক্ষণ খেয়াল ছিল না কাজের চাপে।সারা সপ্তাহের জামা কাপড় কাচা।ছাদে উঠে দেখে চন্দ্র একার মনে ছোট একটি বাটিতে ভাত বেড়ে খাচ্ছে।তরকারি ছাড়া ভাত।
বেচারিকে বড্ড ক্ষিদে পেয়েছে বুঝি।
এদিক ওদিক তাকিয়ে মণিকা দেখে কেউ কোথাও নেই। ঝিমলি হয়তো ছাগল বাঁধতে গেছে।
ছাদ থেকেই মনিকা জিজ্ঞেস করে-
চন্দ্রমুখী তোমার বুড়ি কোথায়?
ম্যারম নিয়ে মাঠ গেছে।
তুমি কি আমার কাছে আসবে?
না এখন নয়,বুঢি খুঁজে পাবে না আমায়।
মণিকা ওর পাকা কথা শুনে হাসছে দেখে লজ্জা পেয়ে যায়।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি খাও,ভয় পেলে জেঠুকে ডাকবে কেমন?

কাঠ ফাটা রোদ।ঘেমে নেয়ে অস্থির হয়ে ছাগল বাচ্চাগুলোকে নিয়ে খেলছে তো খেলছেই।
একবার করে রাস্তা পানে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মায়ের অপেক্ষায়।
অবেলায় আর ধৈর্য নেই যেন, ঠাকুমাকে বলছে –মায়ের কাছে নিয়ে চলো।
আর গিয়ে কি করবি এবার তো মা চলে আসবে।
না আমি যাবো,কান্না আর জেদ মিলে মিশে একাকার।
কতো গুলো টুনটুনি পাখি পেয়ারা গাছে। ওরা কিচিরমিচির করতেই ঝিমলি সেদিকে তাকিয়ে বলে –ঐ দ্যাখ কাঁদছিস বলে ওরা তোকে দেখে জিজ্ঞেস করছে কাঁদছিস কেন? ওরা বলছে আমাদের মাও কাজে গেছে। ঠাকুমার কথা শুনে একটু যেন অবাক
হয়ে পাখির দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না কখন যেন থেমে গেছে। পাখিদের কলতানে চন্দ্র কি যেন বুঝল। তারপর রাস্তায় মাকে দেখতে পেয়েই ঠাকুমার কোল থেকে নেমে এক দৌড়ে মায়ের স্বর্গীয় কোলে।
কি যে সেই সুখ তা চন্দ্রই জানে।মা দুয়ারে বসতেই অমৃত সুধা পান করার যে হাকুলি বিকুলি তা চোখে না দেখলে অনুভব করা যায় না।

চারিদিকে কচি ধানের মেলা বসেছে। বৈশাখের দাবদাহের মাঝে এক পশলা বৃষ্টি কিছুই না।তবে বিকেলে ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়ায় ধান চারায় হিল্লোল দেখে মনে হচ্ছে কতো খুশি ওরা। আলতো বাতাসে সবুজের তরঙ্গ মাঠের পর মাঠ।যেন একরঙা ঢেউ খেলানো আলপনা। চন্দ্রমুখী ওর ডলু ভলু কে নিয়ে সবুজ লাবণ্যে মুখটি চেপে ধরে বলছে– জমমে সে লায় বি অয় জম মে ( খা না খা,পেট ভরে খা)। ঘাস খাওয়ার কোন ইচ্ছাই নেই ভলুর , তখনও দুধের ফেনা মুখে লেগে।কচি দূর্বা ঘাস একটু আধটু ছুঁতে শিখেছে সবে।তাতেই কৌতুহল চন্দ্রের।

মনিকা ব্যালকনি থেকে ডাক দেয়–চন্দ্রমুখী এদিকে এসো,জেঠু চকলেট এনেছে তোমার জন্য। চকলেটের কথা শুনেই ছাগল বাচ্চাদের টানতে টানতে ছুটে আসে।
অ্যাই দেখ ,আসতে এসো , পড়ে যাবে তো।
কৈ দাও চকলেট।জেঠু কুড়কুড়ে এনেছো ?
না তো সোনা,কাল এনে দেবোখন।
কতো অল্পেতেই সন্তুষ্ট হয়ে যায় চন্দ্র। ধনীর দুলালরা যে শুধুমাত্র চকলেট, কুড়কুড়ে নিয়েই শান্ত থাকে না, সেটা নিশ্চিত করে জানে অলোক। অনেকটা বয়স সে পার হয়ে এসেছে নিজের জীবন পরিক্রমার পথে।
কম দিন তো আর হলো না তার সংসার সমুদ্রে।

সারাদিন তাপ বিলিয়ে ক্লান্ত দেহে আকাশটা এবার আঁধারে ডুব দিতে চায়।আলো কমে আসছে দেখে চন্দ্র বলে– জেঠু মায়ের কাছে যাবো।
সে না হয় যাবি, কিন্তু তোর ডলু ভলুকে নেবো কি করে।
সে তো জেঠুর কোলে আগেই চেপে বসেছে। মুখের দিকে বুল বুল করে তাকিয়ে বলে ওঠে–
দাও না আমার কোলে।
মনিকা হেসে বলে–তুমি ভারী দুষ্টু হয়েছো।

সকাল থেকেই মনিকার মন মেঘাচ্ছন্ন। স্কুল যাবে না ঠিকই করেছে।অলোক খুব সকালেই গ্রামের বাড়ি বেড়িয়ে গেছে পারিবারিক কাজে।আকাশে এক ফোঁটা মেঘ নেই। চন্দ্রমুখী করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ের চলন্ত পায়ের দিকে। সে জানে অপেক্ষা এই শুরু। মায়ের যাওয়ার সময় ডলু ভলু কেন পৃথিবীর আশ্চর্যতম কিছু চোখের সামনে থাকলেও তাকে সে পাত্তা দেয় না। এমনি তার মনের অবস্থা।সে কথা বোঝে কেবল মা ছাড়া এক শিশু অন্য শিশুকে।ডলু ভলু স্বাধীন মেজাজে ছুটোছুটি করছে উঠোনের এদিক থেকে ওদিকে। চন্দ্রমুখীর কচি পায়ের কাছে কচি মুখ ঘষে বলছে –আয়না আমাদের খেলা শুরু করি।

চন্দ্রের মনেও আজ যেন সুখ নেই। মনিকারও খাপছাড়া মন চন্দ্র কাছে আসে নি বলে। ঝিমলি একাই এলো ঘর মুছতে।কাকি চন্দ্র এলো না?
উ এখন খেইলছে।
ব্যালকনি থেকে মনিকা– চন্দ্র এখানে এসো।
মুখের দিকে তাকিয়ে আবার খেলায় মগ্ন হোলো দুটি ছাগল বাচ্চাদের সাথে।
ওদের কানে কানে কি বলছে মনিকা সঠিক বুঝতে পারছে না।তবে মা যেমন অনেকক্ষন অদর্শনের পর সন্তানকে চুম্বনে ভরিয়ে দেয় চন্দও তাই করছে।

ঠা ঠা রোদ্দুর দুপুরে ভাত খেতে বসবে মনিকার বুকের ভেতরটা টন টন করে ওঠে।ব্যালকনি থেকে চন্দ্রকে দেখার চেষ্টা করে। কোথাও নেই, উঠোন ফাঁকা। দক্ষিণের জানালায় উঁকি দিয়ে– চন্দ্র বাঁশ বনে পটি করে ওখান থেকে বেরিয়ে জল বাহিত ড্রেনের দিকে জল ছোঁচ করবে, পিছন থেকে জামা টেনে ধরে ডলু ভলু।
জলে পড়ে গেলে বিপদ হতে পারত।
মনিকা চিৎকার করে– চন্দ্র জলে নেমো না, এখানে এসো।
সে সময় মিনি থেকে জল নিতে আসে এক আদিবাসী মহিলা। চন্দ্রের হাত ধরে জলে বসায় ছোঁচ করার জন্য।মণিকার বুকের ভেতর একটা ঝড় যেন হঠাৎ থেমে গেল। বুকের ভেতর অপার শান্তি। ভাগ্যিস এ যাত্রায় ডলু ভলু আর ঐ মহিলাটি ছিল।
ওর মা, ঠাকুমা জানতেই পারল না কতো বড় বিপদের মুখ থেকে চন্দ্র ফিরে এলো। কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো আজ সব তছনছ হয়ে কি বিপদটাই না হতে পারত।
মনিকা চন্দ্রকে ডাকে – চন্দ্র তুমি বারান্দায় খেলবে এসো।
না আমি এখন যাবো না। এখানেই খেলব।
তাহলে যেন জলে নেমো না।
মনিকা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। দেখতে পায় ঝিমলি পেতে ভর্তি শাক নিয়ে আসছে হেলে দুলে।চন্দ্রকে কি যেন জিজ্ঞেস করতেই ও মাথা নাড়ল। হয়তো খাওয়ার কথাই হবে। কখন খেয়েছে কে জানে।

দুপুরের আহার সেরে বিছানায় গা দিতে না দিতেই সাঁই সাঁই আওয়াজ। বাইরে তাকিয়ে দেখে কখন যেন আকাশটা মেঘে ঢেকে গেছে। ভীষণ জোরে বাতাস বইছে।এই তো রোদে ঝলসে দিচ্ছিল,এরই মধ্যে এতো পরিবর্তন। অবাক হওয়ার সময় তার নেই।এখনই সব বন্ধ না করলে মেঝেতে এক পুরু ধূলো জমে যাবে। জানালার কাঁচ বন্ধ করতে করতে বসুধাদের দুয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখে চন্দ্র নেই।
ঝড় উঠেছে বেতাল। রাস্তায় মানুষ ঊর্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছে। গাছের ডাল মড় মড় করে ভেঙে পড়ছে এদিকে ওদিকে।ঝিমলির উঠোনে পেয়ারা গাছ ঝড়ের তোরে মাথা ঠুকছে মাটিতে।হয়তো ধরিত্রীকে শান্ত হওয়ার আকুতি জানাচ্ছে এই ভাবেই।বাড়িতে অলোকও নেই,কি নিদারুন চিন্তা চন্দ্রটার জন্য।
সব বাধা উপেক্ষা করে মনিকা চাবি খুলে চলে যায় ঝিমলির উঠোনে। অগোছালো বসন, মাথায় কোন কাপড় নেই, এটুকু আসতেই চোখ মুখ ধূলোধূসরিত।
কাকিমা, ও কাকিমা।
কোন সাড়া নেই।
চন্দ্র, ও চন্দ্র।
সবাই যেন ঝড়ের তোড়ে দিক বিদিকে ছড়িয়ে গেছে।
সাহসের সাথে ঘরে প্রবেশ করে মনিকা।ঘর অন্ধকার,তেল চিটে গুমোট গন্ধ।জামা কাপড় এখানে ওখানে ছড়ানো। ভালো করে খুঁজে দেখে মনিকা ।এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে চন্দ্র,ওর কোলের কাছে ডলু ও ভলু কতো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে। উতপ্ত প্রকৃতির সমস্ত রোষ আছড়ে পড়ছিল চারিদিকে। ভ্রুক্ষেপ ছিল না মনিকার, তার বুকে যে ঝড় বইছিল এতোক্ষণ তার তুলনায় এ ঝড় নগন্য। ওদের দেখতে পেয়ে মণিকার বুকের ভেতর দুঃশ্চিন্তার পাহাড়টা যেন হঠাৎ নেমে গেলো। শত আনন্দে চোখের কোণ জলে ভিজে গেল।মনেতে যেন কতো জন্মের পূর্ণপ্রাপ্তি। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে ঝড় থেমে গেছে। চন্দ্রের মা বসুধা সেই সবে উঠোনে কাজ সেরে এসে দাঁড়িয়েছে, তখনও ওর মাথায় এক বোঝা শুখা কাঠ।

sobkhabaradmin

Website:

Related Story
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
গঙ্গারামপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে কাটিহারের ডিআরএম।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলগুলির অংশগ্রহণ করা উচিত বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা বিনোদন বিবিধ রাজ্য
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে রীতিনীতি মেনে প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হলো ঐতিহ্যবাহী বিদ্যেশ্বরী কালী মাতার পুজো।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
অল্প বৃষ্টিতেই রেলের আন্ডারপাসে জল জমতে শুরু করল, অভিযোগ দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থা।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured আলিপুরদুয়ার উত্তর বাংলা দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
হাতির হানা ক্ষতিগ্ৰস্থ বাসিন্দারা।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা জলপাইগুড়ি দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
বানারহাটে তিরঙ্গা যাত্রায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, শুভেন্দুর হাত ধরে ধুপগুড়ি র ঈশ্বর সিপিআইএম ছেড়ে বিজেপিতে।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured কলকাতা দক্ষিণ বাংলা দেশ বিবিধ রাজ্য
বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষক শিক্ষিকারা যেভাবে আন্দোলনে নেমেছেন তাতে তারা দিশেহারা : ব্রাত্য বসু।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured দক্ষিণ বাংলা দেশ বিবিধ রাজ্য হাওড়া
হাওড়ায় তৈরী হল ভারতবর্ষে সর্বোচ্চ উঁচু টাওয়ার।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা জলপাইগুড়ি দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
জলপাইগুড়িতে বেসরকারি বাস থেকে বাজেয়াপ্ত ৫৩ কেজি গাঁজা, গ্রেপ্তার ৫।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা জলপাইগুড়ি দেশ বিবিধ রাজ্য
জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির ডাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন সভায় অংশগ্রহণ করে বহু মূল্যবান বক্তব্য রাখলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
sobkhabaradmin May 19, 2025

Leave a Reply
Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

YOU MAY HAVE MISSED
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
গঙ্গারামপুর রেল স্টেশন পরিদর্শনে কাটিহারের ডিআরএম।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলগুলির অংশগ্রহণ করা উচিত বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা বিনোদন বিবিধ রাজ্য
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরে রীতিনীতি মেনে প্রতি বছরের মতো এবারও শুরু হলো ঐতিহ্যবাহী বিদ্যেশ্বরী কালী মাতার পুজো।
sobkhabaradmin May 19, 2025
Featured উত্তর বাংলা দক্ষিণ দিনাজপুর দেশ বিবিধ রাজ্য লাইফস্টাইল
অল্প বৃষ্টিতেই রেলের আন্ডারপাসে জল জমতে শুরু করল, অভিযোগ দুর্বল নিষ্কাশন ব্যবস্থা।
sobkhabaradmin May 19, 2025

Copyright © 2025 | Powered by WordPress | Newsio by ThemeArile