দিনহাটায় পৌরসভা কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল নিল তৃণমূল।

মনিরুল হক, কোচবিহারঃ দিনহাটা পুরসভা কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল নিল তৃণমূল কংগ্রেস। আজ ছিল মনোনয়নপত্র স্কুটনি করার দিন। স্কুটনি শুরু হওয়ার আগেই সিপিআইএম যে চারটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল, তা প্রত্যহার করে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করে। অন্যদিকে বিজেপি গতকাল যে ৮ টি ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিতে সক্ষম হয়েছিল, এদিন তার থেকে ৫টি বাতিল হয়ে যায়। তাই ১৬ ওয়ার্ডের দিনহাটা পুরসভায় ১৩টিতে তৃণমূল কংগ্রেস কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে গিয়েছে। বাকি ৬, ৮ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও স্কুটনির কাজ সম্পূর্ণ হয় নি। ওই ৩ টি ওয়ার্ডের স্কুটনির কাজ শেষ হওয়ার পর জানা যাবে আদৌ দিনহাটায় কোন ওয়ার্ডে নির্বাচন হওয়ার প্রয়োজন হবে কিনা।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুরসভা দখল নেওয়ার পর সবুজ আবির মেখে, বাজি পুড়িয়ে উৎসবে মেতে উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। অন্যদিকে তৃণমূলের এই জয়কে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা। সিপিআইএমের দিনহাটা এড়িয়া কমিটির সম্পাদক দেবাশিস দেব বলেন, “এর আগে আমরা ৪ টি ওয়ার্ডের আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেই। গতকাল শেষ দিনে আরও ৪ জন প্রার্থীকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাই। তখন পুলিশের স্যামন থেকে আমাদের প্রার্থী কাউকে তুলে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। কারো মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে নেওয়া হয়। সব ঘটনা ঘটে। পুলিশের সামনে। কিন্তু পুলিশকে বললে পুলিশ বলে কিছুই হয় নি। এই অবস্থায় নির্বাচন এখানে প্রহসনে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিধান্ত নেই। আমরা যে ৪ টি ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি তার ‘এপিটেপিট’ জমা দেব না। আমাদের যারা কর্মী সমর্থক রয়েছে। তাঁদের ভোট দান থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করবো।” সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শুভ্রালোক দাস বলেন, “ আমরা গত কয়েকদিন ধরে দিনহাটায় গণতন্ত্রের যে ধর্ষণ দেখলাম। তা অবর্ণনীয়। দিনহাটার মানুষ সুযোগ পেলে একদিন নিশ্চিত ভাবে এর জবাব দেবে।” ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অক্ষয় ঠাকুর দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহকে ‘সাহেনসা’ বলে জানিয়ে বলেন, “কোচবিহার জেলার ৬ টি পুরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। কোথাও কোন দলের প্রার্থীকে হুমকি দেওয়া, মনোনয়নপত্র জমা না দিতে দেওয়া, বিরোধী দলের প্রার্থী হলে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। শুধু একমাত্র দিনহাটায় এসব করে মানুষকে তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হল। কারণ এখানে একজন ‘সাহেন্সা’ বাস করেন। উনি সবত্র চেয়ার নিয়ে বসে তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে এখানে গণতন্ত্রের ধর্ষণ করলেন উনি।”
বিরোধীদের এসব অভিযোগকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দিনহাটা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সাবির সাহা চৌধুরী বলেন, “ বিরোধীদের কোন লোক নেই। তাই প্রার্থী দিতে পারেনি। এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে পার পাইতে চাচ্ছে। কিন্তু দিনহাটার মানুষ ওদের সম্পর্কে খুব ভালো ভাবেই জানে। আর আমরা বাধা দিলে যে কয়েকটি বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে, সেগুলি কি করে হল তাহলে?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *