মন্দির প্রাঙ্গনে চলছে পাড়ার শিক্ষালয়।

সুভাষ চন্দ্র দাশ,ক্যানিং – মন্দিরের বারান্দায় মাতৃ স্নেহে এক শিক্ষিকা আপন মনে পড়িয়ে চলেছেন। কখনও ছাত্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন,কখনও আবার নিজের কোলে টেনে নিয়ে শিশুদের পাঠদান করে চলছেন।এমন অভিনব ভাবে চলছে পাড়ায় শিক্ষালয়।
ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কবে খোলা হবে তার নিশ্চয়তা নেই। তবে রাজ্য সরকারের নির্দেশে শুরু হয়েছে পাড়ায় শিক্ষালয়।কোথাও গাছ তলায় আবার কোথাও বা খোলা মাঠের নীল আকাশের নীচে শিশুদের নিয়ে ক্লাস করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষিকারা। এবার ক্যানিংয়ের প্রত্যন্ত হেড়োভাঙ্গা গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে পাড়ায় শিক্ষালয় চলছে এক ভিন্ন ধরনের।হেড়োভাঙ্গা কাছারী পাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়।ওই বিদ্যালয়ে রয়েছে শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৫০ জন। লিপিকা নস্কর,বনাণী নস্কর,অজয় রাউৎ,সিন্টু রাউৎ সহ মোট ৯ জন শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছে।বিদ্যালয়ের একেবারে পাশে রয়েছে শিতলা মন্দির,শনি ও কালি ঠাকুরের মন্দির।সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের আলাদা আলাদা করে বসিয়েছেন মন্দিরের বারান্দায় এবং গাছতলায়। সুন্দর এক অভিনব পরিবেশের মধ্যে চলছে ক্লাসের পঠন পাঠন।
খোলা মন্দিরের বারান্দায় এবং আকাশের নীচে ক্লাসের পঠনপাঠন প্রসঙ্গে শিক্ষক শিক্ষিকারা জানিয়েছেন ‘করোনা পরিস্থিতিতে খোলামেলা স্থানে পঠন পাঠন খুব ভালোই চলছে। বিশেষ করে মন্দির চত্বরে পড়াশোনা এক অন্য অনুভূতি। তবে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করায় আমাদের কে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।কারণ শিশুরা মাঝে মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে রাস্তার উপর চলে যেতে পারে।ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। পাশাপাশি স্কুলের ছুটি হয়ে গেলে অভিভাবকদের কে আসতে বলা হয়। তাঁদের হাতে শিশুদের তুলে দেওয়া হয়।
দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষক,শিক্ষিকারা চিন্তায় ছিলেন। কবে খুলবে স্কুল।চিন্তায় ছিলেন অভিভাবকরাও । পাড়ায় শিক্ষালয় শুরু হতেই সকলেই খুশি।তবে তাঁরা এ ও চাইছেন খুব শীঘ্রই বিদ্যালয় খুলুক।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী স্বপ্না প্রামাণিকের কথায় অনেকদিন পর স্কুল খোলায় আমাদের আনন্দ হচ্ছে। টিফিনের সময় খেলা করতে পারছি। বাড়িতে থাকলে খেলাধূলা করতে পারতাম না। স্কুল খোলায় আমরা খুশি।’
শিউলি দেওয়ান নামে এক শিশুর অভিভাবক জানিয়েছেন ‘স্কুল বন্ধ থাকায় চরম উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম।বাড়িতে শিশুদের পড়াশোনা ঠিকঠাক হচ্ছিল না। তারপর অনলাইন ক্লাসে শিশুরা ঠিকমতো শিখতে পারতো না।পাড়ায় শিক্ষালয় চালু হতে শিশুরা হাতে কলমে শিখতে পারছে। আমাদের সন্তানরা কিছু হলেও শিখতে পারবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *