কবে আর বিয়ে হবে? চাতকের মতো অপেক্ষায় বাসন্তীর দুই বামন ভাই।

সুভাষ চন্দ্র দাশ, বাসন্তী : – এই হয় এই হয় করে দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আজও সংসার করা হয়ে ওঠেনি দুই বামনের।ইতিমধ্যে তাদের বাবা ও প্রয়াত হয়েছেন। মা শয্যাশায়ী।তিন বোন ছিল। তারা শ্বশুরবাড়িতে। ফলে বৃদ্ধ মাকে ২৪ ঘন্টাই দেখভাল করতে হচ্ছে তাদের।
প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের জয়গোপালপুর নতুন হাট।সেই হাটসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী গ্রামেই বসবাস করেন দুই বামন ভাই।যেখানেই যায় দুজন একসাথে। যেন হরিহর আত্মা জগাই মাধাই।গণেশ আর ঈন্দুমতি নস্কর দম্পতির পাঁচ সন্তান।তিন মেয়ে ও দুই ছেলে।বছর চার বয়স থেকে দুই ছেলের কোন উচ্চতা না বাড়ায় চিন্তায় ছিলেন নস্কর পরিবার। অবশেষে দুই ছেলে যে বামন তা পরিলক্ষিত হয়।পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশী ছেলে ছোকরা’রা বামন দুই ভাইকে দেখে হাসি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো। প্রথম প্রথম রেগে গেলেও পরে আর সে সব কথায় কর্নপাত না করেই এড়িয়ে যায় তারা।এরপর এক এক করে তিন দিদির বিয়ে হয়ে যায়।মারা যায় তাদের বাবা গণেশ নস্করও।ভরত ও শরৎ বামন দুই ভাই মহাফাঁপরে পড়ে। তারা বিয়ে করার জন্য দৌড় ঝাঁপ শুরু করে।যাকে বলেছে সে আশার আলো দেখালেও শেষ পর্যন্ত কোন ফল মেলেনি। এমনকি বিয়ে না করলে শেষ জীবনে কে দেখবে সেই চিন্তায় চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ে দুই বামন ভাই। ইতিমধ্যে বৃদ্ধা মা রোগ শয্যায়!তাঁকেও দেখ ভাল করতে হয়।বন্ধু-বান্ধবদের কে করজোড়ে আবেদন করে দুই ভাই জানিয়েছিল পাত্রীর খোঁজ দিতে। এমনকি কয়েকজন কে পাত্রী খোঁজ দেওয়ার জন্য গাঁটের কড়িও দিতে হয়েছে।পাত্রী পাওয়া গেলেও উচ্চতায় খাঁটো হওয়ায় কেউ রাজী হয়নি।নিটফল শূণ্য।আশায় আশায় থাকলেও মেলেনি কোন কিছুই।
অসুস্থ মা কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য শরৎ নস্কর ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে পড়ে রয়েছে।মাকে সেবা শ্রুশ্রূষা করছে। তারই ফাঁকে যাকে দেখা পাচ্ছে তাকেই গোপনে জানাচ্ছে দেখো যদি একটা পাত্রী পাওয়া যায় তাহলে বিয়ে করি।সংসারে কেউ নেই গো!শরতের আশা,শেষ চেষ্টা করছি যদি পাওয়া যায় পাত্রী তাহলে, চল্লিশ বছর হলেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধা নেই।
অন্যদিকে সংসারের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে বড় ভাই ভরত নস্কর লাজুক ভাবে জানিয়েছে অনেক বয়স হয়েছে আর কি কেউ বিয়ে করবে?
বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা প্রাক্তন শিক্ষক আকবর সেখ জানিয়েছে ‘ভরত আর শরৎ দুই ভাই অত্যন্ত সৎ ও ভদ্র।যোগাযোগের অভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে পারে নি।কাউকে কিছু না বললেও আজও তার অপেক্ষায় রয়েছে। “
যদিও বাসন্তীর প্রত্যন্ত গ্রামের দুই বামন ভাই একবুক আশা ভরসা নিয়ে চাতকের মতো অধীর অপেক্ষায় বসে,হয়তো আগামী কোন একদিনে তাদের ভাগ্য সহায় হবে। মিলবে যোগ্য পাত্রী শুরু হবে সুখের সংসার। “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *