ক্যানিং স্টেশন বাস্তুঘুঘুর বাসা!ভাঙা যাবে না।

সুভাষ চন্দ্র দাশ, ক্যানিং: – সকাল থেকে রাত। রাত ফুরিয়ে সকাল। সারাক্ষণ হাতুড়ির ঠকঠক আওয়াজ পাশাপাশি স্টেশনে ট্রেনের বাঁশির আওয়াজ চলছে সমগ্র ক্যানিং স্টেশন জুড়ে।সাধারণ রেল যাত্রীদের কোলাহল লেগেই রয়েছে। চলছে ভাঙ্গাভাঙ্গির ও কাজ। শুধু কি তাই ! ঝেড়ে পরিস্কার করা হচ্ছে স্টেশনের আবর্জনাকে। যাত্রী সুবিধার জন্য লাইট পাখা সবই সাজানো চলছে নতুন করে। যাত্রী শেডের প্রতিটি লোহার কাঠামো ও এসবেস্টারে চলছে রং করার কাজ। প্রতিদিন যত মানুষের আগমন বাড়ে, ততোই বুক দুরুদুরু হয়ে কেঁপে ওঠে। এই বুঝি হাত পড়ল এবার আমাদের উপর। চারটি বাচ্চ এখনোও ছোট।সামান্য অল্প একটু জায়গায়ই সম্বল। মিস্ত্রিদের হাত যদি সেখানে পড়ে তাহলে তো সব শেষ।না স্টেশনের কোন অবৈধ হকার এর গল্প নয়।ক্যানিং স্টেশনের উপরে শেডের ঠিক নিচে সংকীর্ণ একটা বাসা করে থাকা নেহাতই দুটি ছোট প্রাণী।যাদের নাম ঘুঘু। বাংলা আমরা যাকে বলি বাস্তু ঘুঘু।
সভ্য মানুষের জনবসতি যতই গড়ে উঠেছে ততই হাত পড়েছে পশুপাখিদের আর বন্যপ্রাণীদের উপর। গাছ জঙ্গল ঝোপঝাড় সবই ধ্বংস চলছে নির্বিচারে। তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গল।  হারিয়ে যাচ্ছে এসব ছোট ছোট পশুপাখিদের বাসস্থান। আর তাই স্টেশন, পাকা ঘরের দেয়ালের কুঠুরী,খুপরি তে এখন বাসা বাঁধে পাখিরা। মানুষের অত্যাচারে কখনো কখনো হাত পড়েছে সেই বাসা গুলিতেও। সেই রকমই দুটো ঘুঘু বাসা বেঁধে আছে ক্যানিং স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের যাত্রী শেডের নিচে। ডিম দিয়ে তাতে ফুটেছে চারটি বাচ্চ। নিয়ম করে সেই বাসাকে পাহারা দিচ্ছে দুই ঘুঘু দম্পতি। পরিচর্যা করছে নবজাতকদের। মানুষের শত কোলাহলে তাদেরকে নড়াতে পারছে না সেই বাসস্থান থেকে। যখন বাসার কাছে মিস্ত্রিদের দাপাদাপি বাড়ে তখন দুই পাখনা দিয়ে মা ঘুঘু আগলে রাখে বাচ্চাদেরকে। সন্ধ্যা নামলেই স্টেশনের হ্যালোজেনের আলো তে খেলে তাদের বাচ্চারাও। মা ঘুঘু পরম যত্নে ঠোট দিয়ে বাচ্চাদের গায়ে আদর করে দেয়।
বিষয়টি জানার পর রেল কর্তৃপক্ষ মিস্ত্রিদের সযত্নে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে কেউ ওই বাস্তু ঘুঘুর বাসার ওই অংশ ভেঙে না ফেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *