তান্ত্রিক বিদ্যা সরাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পরল দুই মহিলা।

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা :—-তান্ত্রিক বিদ্যা সরাতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পরল দুই মহিলা। দীর্ঘদিন ধরে জামাই নিরুদ্দেশ। আর জামাইকে সংসারে ফিরে পেতেই গুনিনের নিদান অনুযায়ী তিনমাথার মোরে রোজ ফেলা হতো লাল কাপড়, জবা ফুল। কখনো আবার কাগজের মোড়া পান সুপারি, জলন্ত ধূপকাঠি। এই ঘটনা শুরু হওয়ার পর থেকেই নাকি পাড়ায় নানান অঘটন ঘটছিল। কারা করছে এরকম কাজ, তা জানতে ফাঁদ পেতে অবশেষে দুই মহিলাকে হাতেনাতে ধরে ফেলল পাড়ার বাসিন্দারা ধরাপরতেই দেওয়া হয় গণধোলাই। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মালদা শহরের কৃষ্ণপল্লী এলাকায়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে অবশেষে পুলিশ ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই মহিলার নাম ঝুমা দাস (৪৫) এবং অঞ্জলি দাস (৪৪)। এরা সম্পর্কে দুই বোন । ঝুমা দাসের মেয়ে সীমা দাসের বিয়ে হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। তাদের এক নাবালিকা কন্যা সন্তানে রয়েছে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে মেয়ে সিমার কোন সম্পর্ক নেই। বিবাহ বিচ্ছেদের কথা বলেই নাকি জামাই খোকন দাস ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে হঠাৎই নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে। এরপরই বাড়ির একমাত্র জামাইকে ফিরে পেতেই শাশুড়ি ঝুমা দাস ও তার বোন অঞ্জলি দাস গুনিন , ওঝার দ্বারস্থ হয়। সুজাপুর এলাকার এক গুনিন নিদান দেয় যে, প্রতিদিন নিয়ম করে যে এলাকায় বসবাস করেন তারা সেখানকার তিনমাথা মোড়ে নানান ধরনের জিনিস অন্ধকার রাতে রেখে দিয়ে আসতে হবে। তাহলেই নাকি জামাই ঘরে ফিরবে । গুনিনের এমনই কুসংস্কারের খপ্পরে পড়ে শাশুড়ি ঝুমা দাস জামাইকে ফিরে পেতে কৃষ্ণপল্লী এলাকার তিনমাথার মোড়ে প্রায় দিনই নানান ধরনের জিনিস রাখতে শুরু করে। যার মধ্যে কখনো লাল কাপড়, কখনো জবা ফুল মিষ্টি, আবার কখনো কাপড়ের মোড়া সুপারি ও ধূপকাঠি।
এদিকে এলাকার একাংশ বাসিন্দাদের বক্তব্য , তিন মাথার মোড়ে এরকম ভাবে যত্রতত্র মন্ত্রপুত সামগ্রী ফেলতেই পাড়াতেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কখনো কারোর এক্সিডেন্ট হচ্ছে। আবার কেউ অসুস্থ হচ্ছেন। কারা এই কাজ করছে তা নিয়ে ফাঁদ পেতে ছিল ওই এলাকার মহিলারা। অবশেষে শুক্রবার রাতে এই দুইজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে এলাকারই মহিলারা। শুরু হয় কিল, চর ঘুষি। অবশেষে পুলিশ সময় মত এসে ক্ষিপ্ত প্রমীলা বাহিনীর হাত থেকে ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করে।
কৃষ্ণ পল্লী এলাকার বাসিন্দা রাখি ঘোষ জানিয়েছেন, এই দুই মহিলা অন্য কোনও এলাকার বাসিন্দা। তারা এই পাড়াতেই একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল। প্রতিদিনই তারা তিনমাথার মোরে তুকতাক করে নানান জিনিসপত্র ফেলেছিল। আমাদের ধারণা এর ফলে পাড়াতে অঘটন ঘটছে। তাই এদিন ওই দুই মহিলাকে ধরে তাদের বিষয়টি কাছে জানতে চাওয়া হয়। তখন তারা পুরো ঘটনাটি খুলে বলে। কোন এক গুনিনের পরামর্শ অনুযায়ী ঝুমা দাস জামাইকে ফিরে পেতে এইভাবে কাজ করছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্পূর্ণ বিষয়টি একটি কুসংস্কারচ্ছন্ন । ওই দুই মহিলাকে আটক করা হয়েছে । এলাকার মানুষ নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে গুনিনের খোঁজে চালানো হবে। প্রয়োজনে তাকে গ্রেফতার ও করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *