নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর, ২৪জানুয়ারী:- মেদিনীপুর শহরের চার প্রান্ত থেকে চার জন যুব শহীদের নামাঙ্কিত চারটি ব্রিগেড মিছিল যেন আছড়ে পড়লো সমাবেশ স্থলে। দুটো হাতে একটা কাজ চাই, অধিকৃত শিল্প তালুকে শিল্প কারখানা চাই, স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সামনের পঞ্চায়েত ভোটে দুই শাষকদলের চোর ডাকাত দের তাড়িয়ে মেরুকরনের রাজনীতি রুখে দেওয়ার শপথ সহ জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে এই সমাবেশ হয়। যুব সমাজের ভীড়ে মেদিনীপুর শহর স্তব্ধ হয়ে যায়। পুলিশের অনুমোদন একটি লেন ছাপিয়ে দুইটি লেন সহ পাশের ঘরের ছাদে বসে সমাবেশে আসা যুব কর্মীরা সামিল হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলার বাম আন্দোলনের নেতৃত্ব সুশান্ত ঘোষ, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদিকা মীনাক্ষী মুখার্জী, রাজ্য নেতা অপূর্ব প্রামানিক সহ জেলা সম্পাদক সুমিত অধিকারী। সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি শুভদীপ সেন।
বক্তাদের বক্তব্যকে যুব সমাজ এই সময়ের তাদের কাজ বুঝে নিলেন শপথে উদীপ্ত শ্লোগানে। সনাবেশ মঞ্চের ঘোষনা এবার বুথে বুথে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের শপথ, দুই দূর্নীতিবাজ শাষক দল তৃণমূল ও বিজেপির মেরুকরনের রাজনীতি রুখে দেওয়ার শপথ সহ লুটেরা চোর ডাকাতদের পঞ্চায়েত থেকে হঠিয়ে জনগণের পঞ্চায়েত গড় তোলার লড়াই শেষ পর্যন্ত জনগণকে সংগে নিয়ে আপোষহীন ভাবে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেদিনীপুর শহরে যুব সংগঠনের সমাবেশ সংগঠিত হলো। একদিকে জেলার শিল্প তালুকে একের পর শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, শালবনীর জিন্দাল প্রকল্পে কলা আনারস সবজি চাষ, খড়্গপুর বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে কারখানার পরিবর্তে স্টেডিয়াম আবার গোয়ালতোড়ে এশিয়ার বৃহতম বারো হাজার একর জমির বীজ খামারকে বন্ধ করে সেখানে বিদেশী সংস্থাকে জমি তুলে দেওয়ার চক্রান্ততে জেলার হাজার হাজার জমি দাতা পরিবার সহ ক্ষেতমজুর পরিবার ও তাদের বাড়ীর পড়ুয়া সহ যুবদের শিক্ষা কাজ সহ জীবন জীবিকায় সংকোট মোকাবিলা করার লড়াইকে তীব্র করার শপথ নিয়ে এই সমাবেশ হয়।
মীনাক্ষী মুখার্জী কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারের জন বিরোধী মানুষ মারা পদক্ষেপ ও কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার দালালির তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য তুলে ধরেন। তার সংগে এরাজ্যে তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতিতে মাথাও যুক্ত, তাকেও গ্রেপ্তার না করার পিছনে আর এস এস পরিচালিত দুই সহদর শক্তি তৃণমূল ও বিজেপির বোঝাপড়া করে চলার নানান উদাহরন তুলে কটাক্ষ করেন। দল বদলু সংস্কৃতির পিছনে তৃণমূল ও বিজেপি চোর ডাকাতদের পুষ্ট করে নিজেরাও পুষ্ট হচ্ছে এমন বিষয়ে জনগণের সামনে এদের মুখোশ আরোও বেশী করে খুলে দিতে হবে বলেন যুব কর্মীদের।
তিনি বলেন চোর ডাকাতদের মতো মন জয় করার জন্য সাধারণ মানুষকে অনুদান বিলানোর মতো ঘটনা এরাজ্যে। মহামারির সময় যখন সংকোট তখন ডিম সোয়াবিন বড়ি, ডাল, ভোজ্য তেলের বরাদ্দ লুঠ করায় অপুষ্টি জনিত অসুখে আক্রান্ত প্রসূতি সহ শিশুরা তখন নীরব থেকেছে। এখন সেই জালিয়াতি ধরা পড়ায় পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এরাজ্যের তৃণমূল সরকার এখন মিড ডে মিলে মাংস খাওয়ানো ঘোষনা করেছে। এর জন্য কি বরাদ্দ বাড়ানো সহ বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে। এখল লুটের টাকা হজম করতে না পারায় ফন্দি ফিকির করছে বলে চাঁচা ছোলা ভায়ায় রাজ্য সরকারের তীব্র
সমালোচনা করেন মীনাক্ষী মুখার্জী।
সুশান্ত ঘোষ বলেন চোর ডাকাতদের জড়ো করে আর এস এস টাকায় এরাজ্যে একটা রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে ক্ষমতায় এসেছে। এখন কর্পোরেট ঢংএ সেই চুরি ডাকাতি লুঠ চলছে রাজ্যের প্রতিটি বিভাগে। শুধু স্কুল শিক্ষায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। পাহাড় সমান টাকা উদ্ধার এর আগে এমন ভূভারত কেনো বিশ্বেও কোথাও হয়নি। কেন্দ্রীয় তদন্ত কারী সংস্থা গুলো কি করছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা কি আজ পরিষ্কার। তৃণমূলের চোররাও আজ বিজেপি দলের নেতা ও সম্পদ। আর এরাজ্যে এক দেউলিয়া সরকার চলছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই তথ্য প্রকাশ করেছে। সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বকেয়া রেখেছে শুধু নয়, এক দুই মাস অন্তর লক্ষ কোটী টাকা নিয়ে বেতন দিচ্ছে।
আর দেশে এমন একটা সরকার চলছে, কৃষক শ্রমিক সহ জনসাধারণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। আচ্ছে দিন আদানি আম্বানি সহ বৃহত পুঁজিপতি দের জন্য কালা কানুন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা আবারও রাজধানীতে সামিল হবেন বিজেপি সরকারকে হুঁশিয়ারী দিতে। কৃষককের ফসলের ন্যাহ্য দাম নেই, এখানে সার কীটনাশক ঔষধে কালোবাজারী হয়। আর কর্পোরেটের ঔষধে ছাড় দেওয়ায় হয় তার বহুগুন দাম বাড়িয়ে। দশ টাকা বাড়িয়ে দুটাকা ছাড় এমন নীতি এদেশে।
তৃণমূল ও বিচ্ছিন্ন বাদী শক্তির হাতে এই সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় চার জন যুব নেতা খুন হয়। শহিদ নন্দ সামন্ত, শহিদ জুলফাই মল্লিক, শহিদ রোহিন পাতর ও শহিদ গৌতম মিত্র নামাঙ্কিত চারটি ব্রিগেড মিছিল মেদিনীপুর শহরের চার প্রান্ত থেকে দীর্ঘ পথে মিছিল করে এসে মেদিনীপুর শহরের গান্ধী মূর্তির পাদদেশে সমাবেশে যেন আছড়ে পড়ে। সেই সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত এমন চার শহিদ পরিবারের কে সংগ্রামী স্মারক তুলে দেন যুব সংগঠন।
সমাবেশে সংগঠনের রাজ্য নেতা অপূর্ব প্রামানিক বলেন এরাজ্যে যারা তৃণমূল করে তারা কামিয়ে নেওয়ার জন্য। তৃণমূলের যুবনেতা গ্রেপ্তার হয় কোটীআকোটী টাকা চাকরির নামে কাটমানি তোলায়। ওরা কি না খায়, বালি কয়লা, পাথর, এমনকি জঙ্গলের গাছও। ওরা মানুষ নয়, তৃণমূল করে। তোলাবাজি ওদের স্বপ্ন, গণতন্ত্র হরণ ওদের লক্ষ। এবার এর বিরুদ্ধে বাংলার যুব সমাজের জনরোষ ছড়িয়ে দিতে যুব সংগঠনের কর্মীদেরই দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান।
জেলা সম্পাদক সুমিত অধিকারী বলেন ওরা সিঙ্গুর, নয়াচর আটকিয়েছে যেমন তেমনি হলদিয়া, খড়্গপুর শিল্প তালুক, বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকেও ধ্বংস করেছে। গত ১২ বছরে জেলায় ১৩ টি কারখানা বন্ধ করে ১৭ হাজার পরিবারের মুখের গ্রাস কেড়েছে। জমিদাতা সহ ক্ষেতমজুরদের কান্না শোনা যায়। আমরা আর নীরব থাকতে পারিনা। এশিয়ার বৃহতম ইস্পাত নগরী শালবনীতে জিন্দাল প্রকল্পের ১২০০ একর জায়গায় এক কোনে সিমেন্ট কারখানা চালু হলেও কাজ পেয়েছে বহিরাগতরা ঠিকাদারদের মাধ্যমে। জমিদাতা পরিবার গুলি এখন অসহায় জীবন জীবিকায়। এমন পরিবারের সাথে নিবিড় যোগাযোগ সহ আন্দোলন গড়ে তোলা এবং হয় কারখানা করো নইলে জমি ফেরত দাও আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নেওয়া হয় এই সমাবেশ থেকে।
Leave a Reply