নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- ভীড় নেই একেবারেই, তবুও প্রতিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা। অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় থাকলেও তিনি আর শিক্ষা দিতে চান না, শান্তিপুর জলেশ্বর মন্দিরের পাশে বসবাসকারী বিজ্ঞানের শিক্ষক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । শিক্ষক দিবসের দিনে চাইছেন স্বেচ্ছা মৃত্যু। হয়তো অভিমানেই। সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন অনেক ছাত্রছাত্রীকে, কিন্তু এত বছর বাদে মূল্যায়নে তার কথায় হয়তো মানুষ করতে পারেন নি। যদিও ব্যতিক্রমী দুই একজন খোঁজখবর নেন মাস্টারমশাইয়ের। তারাই মাস্টারমশাইয়ের জন্য চৌকি রান্নার সামগ্রী কিনে দিলেও তা গরিবদের বিতরণ করে দিয়েছেন তিনি।
মা বাবার মৃত্যুর পর, বিবাহ না করার কারণে বছরের পর বছর চিড়ে মুড়ি খেয়ে কাটাচ্ছেন তিনি। মাসে দুই এক দিন সব রকম আনাজ ডাল দিয়ে সেদ্ধ করে খেয়ে থাকেন পুষ্টির জন্য।
পেশায় গৃহশিক্ষক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর আদি বাড়ি ছিল পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামে। এরপর তারা চলে আসেন নদীয়ার শান্তিপুরে সপরিবারে। তার বাবা নিজেও ছিলেন খুব ভালো ছাত্র পড়তেন সরকারি চাকরি। এরপর তিনিও তার বাবার মতই ছিলেন মেধাবী ছাত্র স্কুলে পড়ার সময় থেকেই পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রথম স্থানাধিকারী ছিলেন তিনি। এরপর কলেজে বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর, স্নাতকে ভর্তি হন ফিজিক্স নিয়ে, তবে বাবার অসুস্থতার কারণে সংসারের দায়ভার কাঁধে এসে পড়াতে তিনি তা সম্পন্ন করতে পারেননি।
এরপরেই চলে জীবন সংগ্রাম। ২০০৭ সালে বাবা এবং 2010 সালে মা মারা যাওয়ার পরে সম্পূর্ণ একা তিনি শান্তিপুরের ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। পুরনো স্যাঁতস্যাঁতে একটি ছোট বাড়ি যেখানে না আছে কোন আসবাবপত্র না আছে বসা কিংবা শোয়ার মত একটু জায়গা। সাপ, ব্যাঙ অন্যান্য কীটপতঙ্গের সাথে সহ অবস্থান। অগোছালো ঘরে, বস্তা বন্দী বই এবং পুরনো মা-বাবার আমলে ছড়ানো ছিটানো জিনিসপত্র এখনো একইভাবে।
তবে ওই বাড়িতে যেই সম্পদ রয়েছে যা হয়তো সাধারণত অন্যান্য বাড়িতে অনেকেরই থাকে না। তার বাড়িতে রাখা রয়েছে সারি সারি বইয়ের স্তুপ। তিনি জানান এখনো সময় পেলে ১৮ থেকে ১৯ ঘন্টার টানা তিনি পড়াশোনা করেন। বিজ্ঞান এবং অংক হল তার প্রাণ!
তবে খই চিরে মুড়ি খেয়ে থাকার পেছনে অবশ্য শুধুমাত্র আর্থিক অনটন দায়ী তা নয় , তার শরীরে অসুস্থতাও একটা কারণ। তবে তার থেকেও বড় কারণ তার মনের। তিনি মনে করেন অন্যান্য পশু পক্ষী প্রাণী জন্মগ্রহণ করে খাদ্য খাবার গ্রহণ এবং বংশবিস্তারের জন্য। একমাত্র মানুষেরই অনেক দায়বদ্ধতা এবং কর্তব্য সবচেয়ে বড় কথা হলো জ্ঞান সঞ্চয় করে, আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলা।
তিনি এও জানান দু একটি টিউশন তিনি এখনো পড়ান তাই দিয়েই তার চিকিৎসা এবং জীবন ধারণের সামগ্রীর খরচা বহন করেন। তবে তার আক্ষেপ মানুষ ধীরে ধীরে নৈতিক শিক্ষা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন বর্তমানে। বেশিরভাগ শিক্ষকই অত্যন্ত হয়ে গিয়েছেন প্রফেশনাল। সেই কারণে আগামী প্রজন্ম রয়েছে বিপদে। আর সেই কারণেই নিজের আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক কষ্টের সম্মিলিত বেদনাতেই তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন স্বেচ্ছায় মৃত্যুর।
Leave a Reply