নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা :-শোনা যায়, বাসুবেদ কৃষ্ণকে নন্দরাজের কাছে রেখে আসার পর গোকুলে কৃষ্ণের আবির্ভাব উপলক্ষে নন্দ উৎসবেই প্রথম খাওয়া হয়েছিল তালের বড়া। কৃষ্ণের অতি প্রিয় এই খাবারটি ভালবাসেন সকলেই।
প্রচলিত রীতি রয়েছে,ভাদ্র মাসে কৃষ্ণের জন্ম মাস, অন্যান্য ফল খুব বেশি না থাকলেও, তাল গাছে তাল হয়ে থাকে প্রচুর৷ তাই কৃষ্ণের ৫৬ ভোগে তালের পদ দেওয়া হয়। এটা ছাড়া ভোগ অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। আর শ্রীকৃষ্ণেরও পছন্দ তালের বড়া, ক্ষীর ও তালের লুচি ।
জন্মাষ্টমী পুজোর রীতি শুরু হয় সূর্য ডোবার পর। ভজন, পুজো, মধ্য রাতে উপবাস ভাঙার পরের দিন পালিত হয় নন্দ উৎসব। এই দিন গোপালকে ৫৬ পদে ভোগ দেওয়ার নিয়ম। কৃষ্ণের প্রিয় মাখন, মিছরির সঙ্গে ফল, লুচি সুজি, বিভিন্ন ভাজা তরকারি, সুজি মালপোয়া, বিভিন্ন ধরনের পিঠে পায়েস, অন্নের সাথে দেওয়া হয়, তার প্রিয় অড়হর এবং মটরের ডাল, কচু শাক, আরো কত কি।
এ বছর জন্মাষ্টমী চলবে ২ দিন ধরে। পঞ্জিকা অনুসারে ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর পড়েছে জন্মাষ্টমীর তিথি। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হচ্ছে ৬ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩.৩৭ মিনিটে। অষ্টমী তিথি শেষ হবে পরদিন বিকেল ৪.১৪ মিনিটে।
তবে হ্যাঁ জন্মাষ্টমী এবার বেশ কিছুদিন পিছিয়ে। তাতেই তাল হয়ে উঠেছে তালেবর।
আর সেই কারণেই তাল খুঁজতে বেতাল হয়ে পড়ছেন গৃহস্থরা।
১৫-২০ টাকার তাল বিকোচ্ছে ২০০- ৫০০ টাকায়। ভোজ্য তেল নারকেল অন্যান্য উপকরণেরও দাম অগ্নি মূল্য তাই গৃহিণীরা তালকানা হয়ে ছুটছেন মিষ্টির দোকানে।
এই সুযোগে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরাও, মালপোয়া তালক্ষীর, তিলের নাড়ু নারকেলের নাড়ু তালবড়া সহ নানান মিষ্টান্নর সাথে পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসে আছেন। সন্ধ্যা থেকেই তালের বড়া বিক্রি করা বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে মাছি গলারও জায়গা নেই।
শান্তিপুর কাশ্যপ পাড়ার বহু পুরানো পশুপতি মিষ্টান্ন ভান্ডারের দোকানে অনিতা ইন্দ্র বলেন, ইদানিং ছোট ছোট পরিবারে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট তার ওপর, সমাজে ইঁদুর দৌড়ে সময়ের অভাব, নারকেল নাড়ু তালের বড়া নানান পিঠে কেনার তাগিদে দোকানে আসেন। তার কথায় তালের দাম সহ উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি যাই হোক, গতবারের মতন 40 টাকা সব হিসাবে এবারও বেচছেন। এবারে প্রায় কুড়িটি তাল কোনটা ১০০ টাকা কোন টা বা দেড়শ টাকা এভাবেই পাইকারি কিনে, সকাল থেকে ভেজে প্রতীক্ষায় রয়েছেন সন্ধের অপেক্ষায়। তবে সন্ধ্যে থেকে দোকানে যা পরিমাণ ভিড় তাতে আশাবাদী, তার যদি মেলে তাহলে আরো একবার আগামীকাল তিল থেকে তাল বানাবেন তারা।
শান্তিপুরের গৃহবধূ টুম্পা সরকার জানাচ্ছেন, প্রথম যখন তাদের পরিবারে গোপাল এসেছিলো তখন থেকেই জন্মদিন পালন এই তালবড়া দিয়ে। তাই দাম যাই হোক গোপালের বায়না, মেটাতেই হবে।
তালের বড়া মিষ্টির দোকানে কিনতে আসা অতসী প্রামাণিক জানালেন, ঠাকুরের জিনিস বাড়িতে বানালে ছোঁয়াছুয়ি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই মিষ্টির দোকান থেকে কেনা নিরাপদ।
অর্চনা সাধুখাঁ জানালেন, তালের বদলে আটার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে শক্ত হয়ে যায়, বাড়িতে বানালে নরম তুলতুলে আর সুস্বাদু বেশি হয় কিন্তু বাড়িতে বানালে উদ্বৃত্ত হয় অনেকটাই। তাই দোকানেই ভালো। তবে এই দোকানের তালের বড়া খারাপ হয় না।
রানাঘাটের বাসিন্দা মলয় কুমার নন্দী আজ সকালে বাজারে গিয়ে, তালের স্বাদ নিয়েছেন চোখে, পরবর্তীতে হাতে কিন্তু দাম শুনে জিভে নেওয়ার সামর্থ্য হয়নি। তাই এবার তালবিহীন গোপাল ভোগ দিতে চলেছেন তিনি। এর পেছনে অবশ্য তিনি ঘরে ঘরে গোপালপুজো বৃদ্ধির কারণ দেখিয়েছেন ।
যদিও ওই বাজারেরই ফল বিক্রেতা বিশ্বজিৎ কুন্ডু জানান এবারে জন্মাষ্টমী কিছুটা দেরিতে তাই গাছে তাল নেই, দাম তো বাড়বেই।
ফুলিয়ার ফল বিক্রেতা অমর বিশ্বাস বলেন 30 বছর ধরে ফলের ব্যবসা করছি, দোকানে আপেল আঙ্গুর নাশপাতি আঙ্গুর কিসমিস বিক্রি করি তবে এবারে সংযোজন হয়েছে তাল। ফুলিয়া বাজারের আর এক বিক্রেতা অসীম সিকদার বলেন, দাম বৃদ্ধি নিয়ে খরিদ্দারকে বোঝাতে গিয়ে মাথা খারাপ সকাল থেকে। বরং কলকাতা গেলে, এখানকার দু আড়াইশো টাকার তাল সেখানে অনায়াসে 500 টাকায় বিক্রি হতো।
শান্তিপুর রেলবাজারের, ফল বিক্রেতা তারক বৈরাগী বলেন, কয়েকদিন আগেও, ফুটপাতে তাল দোকানে উঠবে তা ভাবি নি একবার, বর্তমানে দোকানের সবচেয়ে মূল্যবান ফল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাল।
বাইগাছি মোড়ের বিক্রেতা প্রিয়তোষ মুখার্জি অবশ্য বলেন, দাম বেশি কারণে অনেকেই খোঁজ করছেন ছোট তাল, এভাবে চললে হয়তো আগামী দিন তাল ভাগ করেও বিক্রি করতে হতে পারে।
Leave a Reply