মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও সরস্বতী পূজা : স্বামী আত্মভোলানন্দ।।।

ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়।

আমাদের মূল্যবান মানুষের জীবনে আমরা প্রথম নিজের পরিবারের পিতামাতা ও পরিবারের সদস্যগণের  সাথে পরিচিত হই। তারপর বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে আমরা দেবী সরস্বতীর সাথে পরিচিত হই। জীবনে প্রথম দেবী পূজার শুরু হয়। বিদ্যার দেবী হলেন মা সরস্বতী। এই দিনে প্রথম অক্ষর পরিচয় করানো হয়। একে হাতেখড়ি বলা হয়ে থাকে। পড়াশোনা শুরু করার আগে বই এর সামনে হোক বা মা সরস্বতী দেবীর মূর্তির সামনে ভক্তিভরে প্রনাম করে দৈনিক শিক্ষা ছাত্রজীবন শুরু হয়।
মা সরস্বতীর প্রনাম মন্ত্র: –
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমস্তুতে।।
*২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি (বাংলায় ১লা ফাল্গুন)  বুধবার সরস্বতী পুজো পড়েছে।*   .
সরস্বতী (সংস্কৃত: सरस्वती) হলেন  জ্ঞান, সঙ্গীত, শিল্পকলা, বাক্য, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী।

সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী হিন্দুধর্মে “ত্রিদেবী” নামে ও পরিচিত। দেবী রূপে সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে।
বসন্ত পঞ্চমীর উৎসব ও সরস্বতী  পুজো প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে পালিত হয়। বসন্ত পঞ্চমীর আগমনে শুরু হয় বসন্ত ঋতু। বসন্ত পঞ্চমীর দিনটি জ্ঞানের দেবী সরস্বতীকে উৎসর্গ করা হয়। এই দিনে মা সরস্বতী  জ্ঞান ও বাক শক্তির রূপ হিসেবে পূজিত হন।  এই দিন দেবী সরস্বতীর পুজো করলে বুদ্ধি ও জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। বসন্ত পঞ্চমী শ্রী পঞ্চমী, সরস্বতী পঞ্চমী, ঋষি পঞ্চমী নামেও পরিচিত।

শীতের পর আসে বসন্ত ঋতু, বসন্তকে বলা হয় ঋতুর রাজা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় নিজেই বলেছেন আমি ঋতুতে বসন্ত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে সৃষ্টির শুরুতে, ব্রহ্মা ভগবান বিষ্ণুর আদেশে মানুষকে সৃষ্টি করে ছিলেন। ঋগ্বেদ অনুসারে, ব্রহ্মা তাঁর নিজের সৃষ্টিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। তারপর তিনি তার কমন্ডল থেকে জল ছিটিয়ে দিলেন, যার ফলে একটি চতুর্ভুজা দেবী তার হাতে বীণা নিয়ে হাজির হলেন। এই চেহারাটি ছিল এক হাতে বীণা এবং অন্য হাত মুদ্রার ভঙ্গিতে রাখা চর্তুভুজ এক সুন্দরী নারীর। তাঁর অন্য দুই হাতে ছিল বই ও মালা। ব্রহ্মা দেবীকে বীণা বাজানোর অনুরোধ করলেন। দেবী বীণা বাজানো শুরু করার সাথে সাথে সারা বিশ্বে একটি সুমধুর ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে। ব্রহ্মার আদেশে, দেবী বীণার উপর একটি সুমধুর সুর বাজিয়েছিলেন, যা বিশ্বকে শব্দ ও বাণী প্রদান করেছিল। এর পরে ব্রহ্মা  দেবী সরস্বতীর নাম রাখেন, যিনি সারদা এবং বাগদেবী নামেও পরিচিত। তাই বসন্ত পঞ্চমীর দিন দেবী সরস্বতীর পুজো করা হয়।

দেবী সরস্বতীর শুভ্র মূর্তি নিষ্কলুষ চরিত্রের প্রতীক,এটা এই শিক্ষা দেয় যে, প্রত্যেক ছেলে মেয়েকে হতে হবে নিষ্কলুষ নির্মল চরিত্রের অধিকারী। দেবী সরস্বতীর সাথে রাজহাঁস থাকে, রাজ হাসেঁর মধ্যে এমন ক্ষমতা আছে যে, এক পাত্রে থাকা জল মিশ্রিত দুধের থেকে সে শুধুমাত্র দুধ শুষে নিতে পারে। রাজহাসেঁর এই তথ্য শিক্ষার্থীদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, সমাজে ভালো মন্দ সবকিছুই থাকবে, তার মধ্যে থেকে তোমাদেরকে শুধু ভালোটুকু শুষে নিতে হবে। দেবী সরস্বতীর হাতের বীণা হচ্ছে সেই সঙ্গীত, গীত, বাদ্য, নৃত্য ও শিল্পকলার প্রতীক। পুস্তক হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার বা জ্ঞানের বাস হলো পুস্তকে। যেহেতু সরস্বতী হলো জ্ঞানের দেবী, তাই তার হাতে থাকে পুস্তক বা পূজায় পাঠ্যপুস্তক দিতে হয়। অনেক কাঠামোতে দেখা যায়, সরস্বতী দেবী হাঁসের উপর বসে আছেন, আবার কোনো কাঠামোয় দেখা যায় পদ্মফুলের উপর। পূর্ণ প্রস্ফুটিত পদ্মফুল হলো সফল ও সমৃদ্ধ জীবনের প্রতীক। বিদ্যার দেবী  মা সরস্বতীকে ভক্তিভরে প্রনাম নিবেদন করি।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *