স্মরণে – ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মী অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী।।।।

অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী (পরবর্তীতে স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী) (১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯০৪ — ১৩ আগস্ট ১৯৬৮) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কর্মী , মানভূম এলাকায় সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বিপ্লবী কাজের সঙ্গে সমাজসেবা, সাহিত্য ও আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ ছিলেন তিনি। অন্নদাপ্রসাদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা। তারা পুরুলিয়ার পঞ্চকোট রাজ পরিবারের কূলপুরোহিত হয়ে আসেন এবং রাজ পরিবারের দাক্ষিণ্যে রামচন্দ্রপুরের জমিদারি প্রাপ্ত হন। কিন্তু তারা ভালবাসতেন সামাজিক কাজকর্ম ও দুঃস্থদের সেবাকার্য। বাল্যকালেই অন্নদাপ্রসাদের অন্তরে বিপ্লবী চেতনার প্রকাশ পায়। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের মহানিষ্ক্রমণের পর অন্নদাপ্রসাদ ‘মন্দির’ কাব্যের কবি ও কাশীর শ্রীশ্রীবিজয়কৃষ্ণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী কিরণচাঁদ দরবেশের কাছে দীক্ষা নেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্মগুরুর নির্দেশে নেন সন্ন্যাস এবং তার নতুন নাম হয় স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী।

তার বয়স যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে স্বদেশপ্রেম আর ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি মানভূম থেকে বর্ধমান পর্যন্ত বিস্তৃত করেন তাঁর বৈপ্লবিক ক্রিয়াকলাপ আর সেই সঙ্গে দুঃস্থদের সেবা ও সমাজসেবা। নিরক্ষরকে অক্ষর জ্ঞান দিতে নৈশ বিদ্যালয় আর নারীশিক্ষার প্রসারে খুললেন মহিলা স্কুল।

পরে তিনি আদিবাসী সাঁওতালদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন।  ১৯১৮ সালে রামকৃষ্ণপুরে বিপ্লবীদের একটি গোপন সংগঠন আর্য আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৮ সালের মার্চ মাসে তিনি রামচন্দ্রপুরে একটি রাজনৈতিক সভার আয়োজন করেন।  সুভাষ চন্দ্র বসুর নির্দেশে অন্নদাপ্রসাদ অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি হন।  দুই দিনের কর্মশালায় বাংলার আদিবাসীরা উপস্থিত ছিলেন এবং সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং সুভাষ চন্দ্র।  সভায় মানভূম কর্মী সংসদ নামে একটি নতুন সংগঠনের জন্ম হয়।  সুভাষ চন্দ্র বসু রাষ্ট্রপতি এবং অন্নদাপ্রসাদ সচিব হন।  অন্নদাপ্রসাদের ব্যবস্থাপনায় সভার আয়োজন, বিভিন্ন প্রান্তের বিপ্লবীদের অংশগ্রহণ, সভায় সুভাষের উপস্থিতি ব্রিটিশ শাসককে ভাবিয়ে তোলে।  ব্রিটিশ শাসকরা তাকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করে এবং তরুণ শক্তি নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনার জন্য তাকে কারারুদ্ধ করে।  দেড় বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলে দ্বিগুণ উদ্যমে দেশ ও দেশের কাজে নিয়োজিত হন।  ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের আইন অমান্য আন্দোলন সংগঠিত।  তার ওপর ব্রিটিশ সরকারের আক্রমণ ক্রমশ নৃশংস হয়ে ওঠে।  তার দেশবাসীর বই পুড়িয়ে দেয়, মাটিতে ফেলে দেয় এবং তাকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেয়।  এতে রাজি না হওয়ায় বেদমকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয়।  ব্যথায় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।  এরপর তাকে ঘোড়ায় টানা রথের পিঠে বেঁধে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে একটি পুকুরে লাশ ফেলে দেয়।  অবশেষে অনুসারী ও প্রতিবেশী গ্রামবাসীর সহায়তায় এবং হাজারীবাগের কলেজের অধ্যাপক শরৎচন্দ্র ভট্টাচার্যের সহায়তায় তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়ে ওঠেন।  সুভাষ ব্রিটিশদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলনের ডাক দেন এবং তার ডাকে মানভূম উত্তাল হয়ে ওঠে।  লাগাতার বিক্ষোভে সামিল হন জনজাতির মানুষ।  ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের এক শীতের রাতে, সুভাষ চন্দ্র বসু অন্নদাপ্রসাদের সাথে একটি গাড়িতে করে কলকাতায় আদ্রা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাচ্ছিলেন।  রাস্তার মাঝখানে একজন দরিদ্র অন্ধ গাড়ির সামনে পড়ে গেল।  সুভাষ চন্দ্র দরিদ্র নিপীড়িত মানুষের জন্য একটি দাতব্য চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য অনুরোধ করেন।

সন্ন্যাস গ্রহণ—

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্রের মহানিষ্ক্রমণের পর অন্নদাপ্রসাদ ‘মন্দির’ কাব্যের কবি ও কাশীর শ্রীশ্রীবিজয়কৃষ্ণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী কিরণচাঁদ দরবেশের কাছে দীক্ষা নেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্মগুরুর নির্দেশে নেন সন্ন্যাস এবং তার নতুন নাম হয় স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী।

সমাজসেবা—-

রামচন্দ্রপুরের আশ্রমে তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনার পাশাপাশি স্বদেশী আন্দোলনের জন্য বিপ্লবী দলের গোপন ঘাঁটির সাথে সমানভাবে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ চালিয়ে যান।  পঞ্চাশের মন্বন্তর ও নানা দুর্যোগে দুস্থ মানুষের সেবা করেছেন।  শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ রিলিফ সোসাইটি ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কুলগুরু বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে দরিদ্র চক্ষু রোগী ও অন্ধদের চিকিৎসা শুরু করেন।  পরবর্তীতে ২৩ জানুয়ারী ১৯৫৩-এ তিনি দুস্থ চক্ষু রোগীদের জন্য রামচন্দ্রপুরে নেতাজি চক্ষু হাসপাতাল খোলেন এবং প্রায় এককভাবে হাসপাতালটির উন্নয়ন করেন।

জীবনাবসান–

অন্নদাপ্রসাদ তথা বিপ্লবী সন্ন্যাসী স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী ১৩ আগস্ট, ১৯৬৮ সালে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *