বাংলা চলচ্চিত্র জগতে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ(Rituparno Ghosh) একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ঋতুপর্ণ ঘোষ ১৯৬৩ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতায় একটি বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং চিত্রকর। তিনি সাউথ পয়েন্ট স্কুলে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন এবং কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও লাভ করেন।

তিনি ভারতীয় সিনেমায় প্রকাশ্যে এলজিবিটি ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং ভারতের কুইয়ার সম্প্রদায়ের আইকন হিসেবে বিবেচিত হন।
ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, লেখক এবং গীতিকার। অর্থনীতিতে ডিগ্রী অর্জনের পর, তিনি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থায় সৃজনশীল শিল্পী হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি তার দ্বিতীয় ফিচার ফিল্ম ইউনিশে এপ্রিলের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছিলেন যেটি সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল। তাঁর সমসাময়িক অপর্ণা সেন এবং গৌতম ঘোষের সাথে ১৯টি জাতীয় পুরস্কার জিতে, ঋতুপর্ণ সমসাময়িক বাংলা সিনেমাকে আরও উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। ঘোষ ৩০ ​​মে ২০১৩ কলকাতায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ঘোষ ভারতীয় সিনেমায় প্রকাশ্যে সমকামী ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন। ঘোষ সত্যজিৎ রায়ের রচনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একজন আগ্রহী পাঠক ছিলেন। ঠাকুরের কাজ প্রায়শই তার চলচ্চিত্রে উল্লেখ করা হয়। তিনি ঠাকুরের জীবনের উপর জীবনস্মৃতি নামে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করেন। প্রায় দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি ১২টি জাতীয় এবং অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন। তাঁর অপ্রকাশিত বাংলা চলচ্চিত্র সানগ্লাস (তাক ঝাঁক নামেও পরিচিত) ১৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানিত এবং মুক্তি পায়। তার চলচ্চিত্র নির্মাণ অপর্ণা সেন, তপন সিনহা, সত্যজিৎ রায়, সঞ্জয় লীলা বনসালি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।
১৯৯৪ থেকে ২০১৩, মাত্র ১৯ বছর। এর মধ্যেই ঋতুপর্ণ ঘোষের মেধা এবং প্রতিভার ফসল মোট ১৯টি ছবি। প্রত্যেকটি ছবিই সতন্ত্র,অনবদ্য। ১৯টি ছবির মধ্যে ১২টি জাতীয় পুরষ্কার জয় করেছিল। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক পরবর্তী বাংলা সিনেমার নতুন এক ধারা তৈরি করেছিলেন ঋতুপর্ণ। ‘হীরের আংটি’-র হাত ধরে পথ চলা শুরু। শেষ হয়ে গেল ‘চিত্রাঙ্গদায়’-য় এসে।তিনি মারা যাওয়ার ঠিক আগে, তিনি বাঙালি গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর উপর ভিত্তি করে তার শেষ চলচ্চিত্র সত্যান্বেষীর নির্মাণ কাজ শেষ করেছিলেন।
অভিনেতা ঋতুপর্ণ—
২০১১- আর একটি প্রেমের গল্প
২০১১- মেমরিস ইন মার্চ
২০১২- চিত্রাঙ্গদা
পরিচালক ঋতুপর্ণ—
১৯৯৪- হীরের আংটি, উনিশে এপ্রিল (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক, জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী- দেবশ্রী রায়), ১৯৯৭- দহন (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ স্ক্রিন প্লে, জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী- ইন্দ্রাণী হালদার, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত), ১৯৯৯- বাড়িওয়ালি (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী-কিরণ খের, শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রী- সুদীপ্তা চক্রবর্তী), অসুখ (জাতীয় পুরস্কার – বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ সিনেমা), ২০০০- উৎসব (শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার), ২০০২- তিতলি, ২০০৩- শুভ মহরত (জাতীয় পুরস্কার – বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ সিনেমা, শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রী- রাখী), চোখের বালি (জাতীয় পুরস্কার – শ্রেষ্ঠ বাংলা সিনেমা), ২০০৪- রেনকোট (হিন্দি ভাষায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার), ২০০৫- অন্তরমহল, ২০০৬- দোসর (জাতীয় পুরস্কার, বিশেষ জুরি পুরস্কার – প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী), ২০০৭- দ্য লাস্ট লিয়র (ইংরেজি ভাষায় শ্রেষ্ঠ ছবির জাতীয় পুরস্কার), ২০০৮- খেলা, সব চরিত্র কাল্পনিক (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ বাংলা সিনেমা), ২০১০- আবহমান (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক, বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ ছবির জাতীয় পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার), নৌকাডুবি, ২০১২- সানগ্লাস, চিত্রাঙ্গদা (বিশেষ জুরি পুরস্কার, অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষ), জীবনস্মৃতি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত তথ্যচিত্র)।
ঋতুপর্ণ ঘোষ ৩০ ​​মে ২০১৩ তারিখে তার কলকাতার বাসভবনে মারা যান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। তার পরিচারক দিলীপ এবং বিষ্ণু তাকে বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৪৯ বছর।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *