সাহিত্য জগতে এক অতি পরিচিত নাম রমেশচন্দ্র সেন।তিনি ছিলেন একজন বাঙালি প্রগতিশীল লেখক ও আয়ুর্বেদিক পণ্ডিত। লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবিরাজ হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ করেছিলেন। মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত আয়ুর্বেদ সম্মেলনে সংস্কৃত ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে বিদ্যানাধি উপাধিতে ভূষিত হন, ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে।
জন্ম ————-
১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ আগস্ট বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির কলকাতায় রমেশচন্দ্র সেনের জন্ম । পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরের কোটালীপাড়ার পিঞ্জরী গ্রামে। কলকাতার খ্যাতনামা কবিরাজ ক্ষীরোদচন্দ্র সেন ও তার স্ত্রী বরদাসুন্দরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান এই রমেশচন্দ্র।
শিক্ষা জীবন——
সংস্কৃত শিক্ষা শুরু হয় পিতার কাছে। প্রথমে তিনি পিতার কাছে ও পরে হাতিবাগানের পণ্ডিত সীতানাথ সাংখ্যতীর্থের চতুষ্পাঠীতে সংস্কৃত শিক্ষা নেন। সংস্কৃত ব্যাকরণের দ্বিতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে। যখন তিনি টোলে পাঠরত, সেই অবস্থায় তিনি প্রাইভেট ছাত্র হিসাবে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন (১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে) । এর পরে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ বি.এ পাশ করেন ( ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে )। বাংলা সাহিত্যের পত্রে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। কিন্তু এরপর আবার হঠাৎ পিতার মৃত্যুতে (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দ) তাকে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ পড়া স্থগিত করে পৈতৃক আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসাতে আত্মনিয়োগ করতে হয়, যদিও এই পেশায় তার অতোটা আগ্রহ ছিল না।
পারিবারিক জীবন——
১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বনলতাকে বিবাহ করেন রমেশচন্দ্র সেন। তাদের পাঁচ পুত্র ও নয়টি কন্যাসন্তান ছিল।
কর্মজীবন—
চিকিৎসাশাস্ত্রের চেয়ে তার সাহিত্যচর্চায় বেশি আগ্রহ ছিল। তিনি বাংলা সাহিত্যে শুধু নিজের অবদান রাখেন নি, তিনি তৈরি করে গেছন বহু বাঙালি সাহিত্যিককে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু কাল অবধি তিনি নিয়মিত লিখে গেছেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে (১৩৫২ বঙ্গাব্দে) প্রকাশিত তার প্রথম রচিত উপন্যাস শতাব্দী বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিল। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হল—–
চক্রপাক (১৯৪৫), কুরপালা (১৯৪৬), কাজল (১৯৪৯), গৌরীগ্রাম (১৯৫৩), মালঙ্গীর কথা (১৯৫৪), পূব থেকে পশ্চিম (১৯৫৬), সাগ্নিক (১৯৫৯), নিঃসঙ্গ বিহঙ্গ (১৯৫৯), অপরাজেয় (১৯৬০), পূর্বরাগ (১৯৬১)।
ছোটগল্প হল – ‘মৃত ও অমৃত’, ‘তারা তিন জন’, ‘সাদা ঘোড়া’, ‘রাজার জন্মদিন’, ‘ডোমের চিতা’ ইত্যাদি।
তার রচিত কিছু গল্প ইংরাজি, হিন্দি ও চেকোশ্লোভাক প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছিল।
জীবনাবসান——-
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্থপতি রমেশচন্দ্র সেন ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১জুন কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।
Leave a Reply