স্মরণে লোকশিক্ষা ও নারীশিক্ষার বিস্তারে অন্যতম ব্যক্তিত্ব – অতুলচন্দ্র সেন।।।

ভূমিকা:- অতুল চন্দ্র সেন ছিলেন একজন ছাত্রপ্রেমী এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক ও সমাজকর্মী, স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং শিক্ষার উন্নয়নে, বিশেষ করে লোকশিক্ষা ও নারী শিক্ষার বিস্তারে অন্যতম ব্যক্তিত্ব।

জন্ম——-

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ১লা এপ্রিল বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুরের বাহেরক গ্রামে অতুলচন্দ্র সেনের জন্ম ।

পিতা কালীপ্রসন্ন সেন ছিলেন স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে আগ্রহী।

শিক্ষা জীবণ——

ঢাকায় অতুলচন্দ্রের স্কুল ও কলেজের পড়াশোনা । ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে বৃত্তি পেয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষা, ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত ও দর্শনে অনার্স সহ বি.এ.পাশ করেন। এর পরে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ. পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ।

কর্মজীবন——

এমএ পাশ করার পর তিনি ১৮৯৯ সালে বিক্রমপুরের স্বর্ণগ্রামের রাধানাথ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে আইন পাস করে কুমিল্লার জজ-কোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯০৮ সালে, তিনি আবার বার ত্যাগ করেন এবং বীরভূমের হেতমপুর রাজ কলেজের অধ্যক্ষ হন। শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তিনিও অধ্যাপকদের সঙ্গে পদত্যাগ করেন। পরে ১৯১১ সালে তিনি পাবনার এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবং তারপর রিপন কলেজের কলা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক হন।

স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা—

অধ্যাপক প্রমথ মুখোপাধ্যায় (স্বামী প্রত্যগাত্মানন্দ), নৃপেন দে এবং জগদ্রীন্দ্র রায়ের সাথে, ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। তারপর অতুলচন্দ্রের কর্মজীবন ব্যাহত হয়। তাঁর কৃতি ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন শ্রীকুমার ব্যানার্জী, রাজকুমার চক্রবর্তী, বিপ্লবী কালীচরণ ঘোষ প্রমুখ। স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত নিজ গ্রামের ‘সত্যশ্রম’ সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৩০ – ৩১ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানজ্ঞান নিয়োগী এবং শরৎ ঘোষের নেতৃত্বে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রবাসী পত্রিকার কয়েকটি সংখ্যায় স্বদেশী আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন—

পরে কলকাতায় এসে ‘উমা প্রেস’ নামে এক ছাপাখানা ও ‘সেনগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি” নামে এক প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন করেন। সেখান থেকে তার লোকশিক্ষা মূলক পুস্তক “চরিতমালা”, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দ কাশীতে ছিলেন। সেখানে অবস্থান কালে বাঙালিটোলায় প্রাথমিক স্কুল ও গরুড়েশ্বরে উচ্চ ইংরাজী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি স্কুলের অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক হন। তার প্রতিষ্ঠিত ‘নারী শিক্ষা মন্দির’ই পরে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পরিণত হয়। কাশীর মদনপুরাতে ‘শাস্ত্রপ্রচার কার্যালয়ে’ তিনি “গীতা” সম্পাদনায় কাজ শুরু করেন। সেই কাজের সূত্রে তিনি প্রমথনাথ তর্কভূষণ ও অন্নদাচরণ চূড়ামণির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসেন।
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে মুন্সীগঞ্জে থাকার সময় তার বৃহৎ গ্রন্থ “শ্রীমদ্ভগবদগীতা” ব্যাখ্যা সহ প্রকাশিত হয় এবং এখানে সমাজসেবামূলক কাজে লিপ্ত ছিলেন।

মানব কল্যাণকর কাজ—

গরীবদের সেবা, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, দরিদ্র ছাত্রদের শিক্ষার ব্যবস্থা ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত বিপ্লবী অমূল্য অধিকারীর সাথে “কল্যাণ সমিতি” গঠন করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় থাকার সময় তিনি কাঠোপনিষদের উপর একটি ব্যাখ্যামূলক বই প্রকাশ করেন। বিহারের আরাতে দুই বছর অবস্থানকালে তিনি সেখানকার বাঙালিদের জন্য ১৯৪৩ সালে ‘সাহিত্য সমাজ ও পুস্তকালয়’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগার স্থাপন করেন। ১৯৪৫ সালে, মধুপুরে তার অসুস্থ ছেলের সাথে থাকার সময়, তিনি বাঙালি মেয়েদের প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। পুত্রের মৃত্যুর পর তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং উপনিষদের অবশিষ্ট অংশ ভাষ্য সহ প্রকাশ করেন।

মৃত্যু—

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই জুন প্রয়াত হন অতুলচন্দ্র সেন ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *