গঙ্গারামপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা :- দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার “গঙ্গারামপুর”এক সময়কার তাঁতশিল্পের এক গর্বিত নাম। সাতের দশকে ওপার বাংলা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষের হাতে গড়ে উঠেছিল এই শিল্পভিত্তিক সমাজ। তাঁদের পরিশ্রম আর মেধায় গঙ্গারামপুরের তাঁতের শাড়ি হয়ে উঠেছিল এক বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড। নিখুঁত বুনন, টেকসই রং এবং ঐতিহ্যবাহী নকশার জন্য অল্প সময়েই এই শিল্প রাজ্য জুড়ে পরিচিতি পায়।
নয়ের দশকে পশ্চিম দিনাজপুর জেলা বিভাজনের পর, গঙ্গারামপুরে তাঁতশিল্প যেন নবজীবন লাভ করে। এক সময় ঘরে ঘরে তৈরি হত তাঁতের শাড়ি।বেগম,ধনেখালি, টাঙ্গাইল, জামদানি, সিল্ক সহ নানা ধরনের কারুকার্যময় শাড়ি। চাহিদাও ছিল তুঙ্গে।
এই শিল্পকে আরও সুসংগঠিত ও সহায়তা করতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গঙ্গারামপুর ব্লকের ঠেঙ্গাপাড়া এলাকায় ২০১৯ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হয় কোটি টাকার ‘তাঁত হাব’।
বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৎকালীন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ মহা ধুমধামে উদ্বোধন করেছিলেন এই প্রকল্প। উদ্দেশ্য ছিল— তাঁতশিল্পীদের একটি নির্দিষ্ট ও আধুনিক পরিকাঠামো দেওয়া, যাতে তাঁতশিল্প আরও প্রসারিত হতে পারে।
কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই নানা সমস্যা ঘিরে ধরে এই হাবকে। ঠেঙ্গাপাড়া এলাকা ডিটল ও গঙ্গারামপুরের মাঝামাঝি এক প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে হওয়ায় সন্ধ্যার পর থেকে মানুষের চলাফেরা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যাতায়াতের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এই হাবে যেতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন। যার ফল— আজ সেই কোটি টাকার হাব প্রায় অচল, নিঃসঙ্গ। ভিতরে পড়ে রয়েছে অসংখ্য শাড়ি — যেগুলো পৌঁছাতে পারছে না বাজারে।
বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি তাঁতের চাকা টিমটিম করে ঘুরলেও, উৎসবের পর থেকে বরাদ্দ বন্ধ থাকায় তা-ও ঝিমিয়ে পড়েছে। কলকাতার বড় হাব কোম্পানিগুলিতে কিছু কিছু ডিজাস্টার ও মাটা শাড়ি বিক্রি হলেও গঙ্গারামপুরের আসল কারিগরদের প্রাপ্য সুযোগ বা মূল্য তারা পাচ্ছেন না।
স্থানীয় তাঁত শ্রমিক ও হাব কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, যেখানে রাজ্য সরকার বিভিন্ন আধা-সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে আর্থিক অনুদান দিয়ে বাঁচিয়ে রাখছে, সেখানে তাঁতশিল্পীদের দিকে কোনও নজরই দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি প্রকল্প থাকলেও, বাস্তবে নেই কোনও সহায়তা।
তাঁতশিল্পীদের স্বার্থে তন্তুজের পক্ষ থেকে একটি অফিস গড়ে তোলা হলেও, সেটিও এখন কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এক সময়কার গর্ব, গঙ্গারামপুরের তাঁতশিল্প আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। প্রয়োজন সরকারি সদিচ্ছা, নতুন উদ্যোগ, সঠিক বিপণন এবং আধুনিক লজিস্টিক পরিকল্পনা। নয়তো খুব তাড়াতাড়ি ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে গঙ্গারামপুরের তাঁতের শাড়ি।
Leave a Reply