ডুয়ার্স, নিজস্ব সংবাদদাতা:- জঙ্গল বন্ধের প্রভাব টুরিস্ট গাইড, জিপসি চালক, পর্যটকদের মনোরঞ্জনের কৃষ্টি সংস্কৃতি নৃত্যশিল্পী থেকে শুরু করে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের। আজ ১৬ জুন থেকে পর্যটকদের জন্য বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের সমস্ত জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্গত গরুমারা, নেওরাভ্যালি, চাপরামারি, আলিপুরদুয়ার জেলার জলদাপাড়া, বক্সা সহ অন্যান্য বনাঞ্চলও থাকছে এই তালিকায়।
প্রতি বছর ১৬ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালকে বনদপ্তর বন্যপ্রাণীদের প্রজননকাল হিসেবে বিবেচনা করে। সেই কারণে এই সময়টিতে জঙ্গলে মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বর্ষার সময় জঙ্গলে গাছপালা ঘন হয়ে যায়, রাস্তাঘাটও হয়ে পড়ে বিপজ্জনক। এছাড়াও, বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা ও নিরবচ্ছিন্ন জীবনচক্র বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই সময় জিপ সাফারি, হাতির পিঠে চড়া বা বনবাংলোয় রাত্রিযাপন—সবই বন্ধ । ফলে কিছুটা মন খারাপ পর্যটকদের, কারণ জঙ্গলের গভীরে গিয়ে গন্ডার, হাতি, বাইসন বা ময়ূর দেখার সুযোগ আপাতত মিলবে না।
ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।
আর এরই মাঝে ডুয়ার্সের জিপসি চালক,টুরিস্ট গাইডরা এই তিন মাসের জন্য বিকল্প কাজের দাবি করছেন বন বিভাগের কাছে।এই তিনমাস কর্মহীন হয়ে যায় প্রত্যেকে।পাশাপাশি সরকারি সব রকম ট্যাক্স পে করেও নিজেদের জিপসি গুলো বসিয়ে রাখতে হয় তাদের। গাইডরা এই তিনমাস কেউ ভিনরাজে তো আবার কেউ মজুরি করে কোনভাবে সংসার চালায়।
এর পাশাপাশি জলপাইগুড়ি বন বিভাগের তরফে ও লাটাগুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জার সঞ্জয় দত্তের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই সরকারি বন বাংলো কিংবা জঙ্গল ক্যাম্পে আসা পর্যটকদের জন্য অতিরিক্ত মনোরঞ্জন দিতে স্থানীয় আদিবাসী মহিলা পুরুষ কচি কাচাদের একত্রিত করে তাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও বাইরের দুনিয়ায় তাদের নাচ গানকে বাঁচিয়ে রাখার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সেই নৃত্য শিল্পী মহিলা ও বাদ্যযন্ত্র বাদক পুরুষেরাও এই তিনমাস কাজ হারায়।কেননা সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও জাতীয় উদ্যানে এই তিনমাস কেউ আসেনা।কার্যত বিকল্প কাজ হিসাবে অন্য গ্রামে মাজদুরি করতে হয়।কারণ এরা ফরেস্ট ভিলেজার হওয়ার দরুন চা বাগানে কাজ পায় না। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট জায়গা গুলোর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এই তিন মাস একদম সব কিছু বন্ধের কারণে বিপাকে পড়ে যায়।
এত সবের মাঝেও তবে জলপাইগুড়ি বন বিভাগের তরফে জঙ্গলের বাইরে থাকা ওয়াচ টাওয়ার এবং বন বাংলো গুলি খোলা রাখার জন্য রাজ্য বনদপ্তরের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে। যেমন—কালিকাপুর, ধূপঝোরা, পানঝোরা, হর্নবিল ক্যাম্প ও চুকচুকি ওয়াচ টাওয়ার গুলি খোলা রাখার জন্য দাবি জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা।
বনদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ফের খুলে দেওয়া হবে সব জাতীয় উদ্যান ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তখন থেকেই পর্যটকরা আবার উপভোগ করতে পারবেন ডুয়ার্সের জঙ্গল সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণীর সমাগম।
Leave a Reply