জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকের নানাই নদী একের পর এক গিলে খাচ্ছে বসতবাড়ি, কৃষি জমি – তাতেই রাতের ঘুম কেড়েছে এলাকাবাসীর।

ধুপগুড়ি, নিজস্ব সংবাদদাতা:- উত্তরের সেভাবে এখনো বর্ষা নামেনি। তার আগেই যেভাবে রাতভর বৃষ্টি ও তারপরে প্রখর রোদে গোটা দিন কাটছে। এতেই নদীর পাড় ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকের নানাই নদী একের পর এক গিলে খাচ্ছে বসতবাড়ি, কৃষি জমি। আর তাতেই রাতের ঘুম কেড়েছে এলাকাবাসীর।

উত্তর খট্টিমারি ডুয়ার্সের বনজঙ্গল লাগোয়া একটি ছোট্ট গ্রাম। কৃষিকাজি একমাত্র ভরসা এই গ্রামের মানুষ জনের। অত্যন্ত উর্বর ত্রিফসলা কৃষি জমির কারণে কৃষি কাজে ব্যাপক ফুলে ফেঁপে ওঠে এই এলাকার মানুষ। কিন্তু গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে নানাই নদীর ভাঙ্গন। বিগত কয়েক বছর ধরে বিঘার পর বিঘা জমি নদীর তলায়। ভাঙ্গনের ফলে নদী গতিপথ পরিবর্তন করে বসতবাড়ির সামনে দিয়ে বইতে চলেছে। গত কয়েক সপ্তাহের বৃষ্টিতে নতুন করে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে নদীতে। এই মুহূর্তে পাট চাষে লাভের আশা দেখছে কৃষকেরা। আর সেই পাট খেতের জমিও এই নানাই নদীর বক্ষে চলে যেতে বসেছে। আতঙ্কে কৃষকের গোটা পরিবার।

অভিযোগ একাধিকবার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এমনকি ব্লক তরেও তাদের এই সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। প্রত্যেক বছর ভোটের আগে স্থানীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে ইরিগেশন দপ্তরের একাধিক আধিকারিক নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় আসেন, পরিদর্শন করেন, প্রতিশ্রুতি দেন আর ভোট মিটে গেলেই আরও সেই চেনা ছবি দেখতে হয় এই এলাকার মানুষকে। কার্যত আসন্ন ২৬ এর নির্বাচনে ভোট বয়কট না করে, গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়েছেন তাদের এই জলজ্যান্ত সমস্যার সমাধান যে রাজনৈতিক দলের দ্বারা সুরাহার পথ দেখাবে, এবারের ভোট তাদের জন্যই হবে।

শুধু নদী ভাঙ্গন নয় পাশাপাশি এই নানাই নদীর উপর ব্রিজের দাবিও রয়েছে এলাকাবাসীর। গত কয়েক মাস আগে গ্রামবাসীরা নিজেরাই বাঁশ দিয়ে নানাই নদীর উপর বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছিলেন। এবারের বর্ষার আগেই নদীতে জল বাড়তেই সেই বাঁশের সাঁকো ভেসে গিয়েছে। বর্তমানে গ্রামবাসীরা এক বুক জল দিয়েই বিপদজনকভাবে পারাপার করছেন। একটি স্থায়ী ব্রিজের দাবিও তারা রেখেছেন।

এর পাশাপাশি এই গ্রামের মধ্যেই রয়েছে বর্গির কুড়ায় হিন্দুদের একটি ধর্মীয় স্থান। যেখানে বছরের বিভিন্ন সময়ে গোটা গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন পূজা করেন। ধর্মীয় উৎসবে মেতে উঠেন। সেই বর্গির কুড়ার গোটা মন্দিরটি নানাই নদীর গর্ভে চলে যাবে বলেই আতঙ্কিত রয়েছেন এই এলাকার বাসিন্দারা।

এদিকে গোটা গ্রামের এত বড় সমস্যা থাকার পরেও স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে আমরা গেলে তিনি কোনরূপ মন্তব্য করতে চাননি বরঞ্চ দায়িত্বে তিনি থাকলেও তার হাজবেন্ডকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।

এদিকে আবার গোটা বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ধুপগুড়ি গ্রামীণ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মলয় কুমার রায়। তবে ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে সমস্যার সমাধানের আবেদন জানানো হয়েছে বলে দাবি। যতটা দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার নিবারণ করবে বলেই জানানো হয়।

তবে শাসকদলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব মহন্ত কুমার রায়। জলপাইগুড়ি বিজেপি বিধায়ক ডক্টর জয়ন্ত কুমার রায়কে গোটা বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত স্থায়ী বাধ নির্মাণের কথা তুলে ধরেছেন বিজেপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *