ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায়….!
প্রভু জগন্নাথস্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে ৷
পুরাণ অনুযায়ী জানা যায়,আমাদের এই মূল্যবান মনুষ্য জীবনে জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হয় প্রভু জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা। বিশ্বাস করা হয় যে স্নানের পর দেবতারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই, একান্তে সুস্থ হওয়ার জন্য এক বিশেষ কক্ষে দেবতাদের রাখা হয়, যা অনাসর বা ‘অবসর’ নামে পরিচিত। যখন প্রভু জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা অসুস্থ থাকেন তখন লোকচক্ষুর আড়ালে থাকেন। ১৪ দিন পর জ্বর থেকে সেড়ে উঠে মাসির বাড়ি ঘুরতে যান প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। সেই দিনই শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে হয় *মাসির বাড়ি যাত্রা বা জগন্নাথদেবের রথযাত্রা।* কিংবদন্তি অনুসারে, গুন্ডিচা মন্দিরটি জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি এবং এই সময়ে তিনি সেখানে বিশ্রাম নেন।
প্রভু জগন্নাথদেব রথযাত্রা উৎসবে গুন্ডিচা মন্দির বা মাসির বাড়ি যাত্রা করেন। রথযাত্রা উৎসবের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এটি কেবল একটি মন্দিরযাত্রা নয়, বরং ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে প্রেম, ভক্তি ও মিলনের এক মিলন ক্ষেত্র। রথযাত্রার সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা তাদের রথে করে গুন্ডিচা মন্দিরে যান, যা জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এই যাত্রা ভক্তদের জন্য আনন্দ ও উৎসবের এক বিশেষ উপলক্ষ। গুন্ডিচা মন্দির যাত্রা ভক্তদের জন্য ভগবান জগন্নাথের সান্নিধ্য লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। এই সময় ভক্তরা ভগবানকে নিজেদের কাছাকাছি অনুভব করতে পারে এবং তাদের ভক্তি নিবেদন করতে পারে।
রথযাত্রা একটি আনন্দময় উৎসব, যেখানে ভক্তরা ভগবান জগন্নাথকে তাদের হৃদয়ে স্থান দেয় এবং তার সাথে আনন্দ ভাগ করে নেয়। গুন্ডিচা মন্দির যাত্রা এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গুন্ডিচা মন্দির যাত্রা পুরীর একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, যা বহু বছর ধরে চলে আসছে। এই যাত্রা ওড়িশার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ভক্তদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। গুন্ডিচা মন্দির থেকে ফিরে আসার পর, জগন্নাথ দেব নতুন রূপে, নতুন উদ্যোমে ভক্তদের আশীর্বাদ করেন। এটি নতুন জীবন শুরু করার প্রতীক। মাসির বাড়ি যাত্রা জগন্নাথ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ভক্তদের জন্য আনন্দ, ভক্তি, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির এক বিশেষ উপলক্ষ। রথযাত্রায় ভগবান জগন্নাথের দর্শন করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। রথযাত্রা ভগবান জগন্নাথের প্রতি ভক্তি, মিলন, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
রথযাত্রার দিন পুরী জগন্নাথ মন্দির সহ বিশ্বের বিভিন্ন মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা মূর্তি মন্দির বাহিরে সর্বসমক্ষে বাহির করা হয়। তারপর তিনটি সুসজ্জিত রথে (কোনো কোনো স্থলে একটি সুসজ্জিত সুবৃহৎ রথে) বসিয়ে দেবতাদের পূজা সম্পন্নপূর্বক রথ টানা হয়। পুরীতে রথ টানতে প্রতি বছর লক্ষাধিক পূণ্যার্থীর সমাগম হয়। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব যেমন অপলক নয়নে বিভোর হয়ে রথে অবস্থিত জগন্নাথকে দেখতেন এবং আনন্দে নাচতেন সেভাবেই ভক্তকে হৃদয় দিয়ে ভগবানকে দেখতে হয় ও প্রণতি জানাতে হয় ৷ ভক্তকে দেখার জন্য ভগবানও আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করেন৷
পুরীতে নেই কোন জাতি বা বর্ণভেদ ৷ আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার এই যোগ হলো রথ দর্শন ৷ রথযাত্রা উচ্চ-নীচ, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ সবরকম ভেদাভেদ ভুলে মানুষের মধ্যে গোষ্ঠীভাব জাগায় এবং সবাইকে নিয়ে একসাথে বাঁচতে শেখায়৷ সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় ৷ পুরী ছাড়াও উড়িষ্যার বহু শহরে, পশ্চিমবঙ্গের মাহেশ, মহিষাদল, গুপ্তিপাড়া রথ সুপ্রাচীন ও বিখ্যাত৷ আর এখন ভারতবর্ষে সব গ্রামে শহরে ও পৃথিবীর সব বড় শহরে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়৷ পঞ্জিকা অনুসারে আগামী বাংলা ১২ আষাঢ় শুক্রবার -১৪৩২, (27.06.2025) শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে সারা পৃথিবী জুড়ে হবে শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রা। যার প্রধান আকর্ষণ শ্রীক্ষেত্র পুরীধাম৷
রথযাত্রার নদিন পরে মাসির বাড়িতে বিশ্রামের পর ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা তাদের রথে চড়ে মাসির বাড়ি (গুণ্ডিচা মন্দির) থেকে মূল মন্দিরে ফিরে আসেন। যা উল্টো রথ, বহুধা যাত্রা নামেও পরিচিত। উল্টো রথের দিন, জগন্নাথ দেবকে বিশেষভাবে অলঙ্কৃত করা হয় এবং ভক্তরা তাঁকে ভক্তিভরে গ্রহণ করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব যা রথযাত্রা উৎসবের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। ভগবান সবাইকে ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন। জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ ও প্রভু জগন্নাথদেবের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…! জয় শ্রী জগন্নাথ। জয় বলরাম ও সুভদ্রার জয় ৷
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।
স্বামী আত্মভোলানন্দ *পরিব্রাজক*
Leave a Reply