পশ্চিম মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- বর্ষা শুরু হতেই পিচ্ছিল রাস্তা আর কাদামাটি পেরিয়ে জীবন হাতে করে নৌকায় চেপে ওপারে পাড়ি দিচ্ছেন বহু মানুষ। এই ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ২ নম্বর ব্লকের পিয়াসালা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হুমগড় এলাকার। এখানে দৈনন্দিন জীবনের যাতায়াতের ক্ষেত্রে বহু সমস্যার মুখোমুখি হন শত শত মানুষ, তাদের কাছে যোগাযোগ বলতে আজও ভরসা মাত্র নৌকা।
হুমগড় থেকে জোগাড়ডাঙ্গা অঞ্চল,পাথরবেরিয়া পেরিয়ে বাঁকুড়া জেলার সিমলাপাল ব্লকের অন্তর্গত ভূতশহর, এই বিশাল অঞ্চলের মানুষের জন্য সংযোগের একমাত্র মাধ্যম হল শিলাবতী নদীর খেয়া পারাপার। কিন্তু এবারের চিত্র আরও ভয়াবহ। ১৯৭৭ সালের পর ২০২৫ সালের এই ভয়াবহ বন্যা এই অঞ্চলের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় পর এমন প্রলয়ঙ্করী বন্যার সাক্ষী হলেন স্থানীয়রা।
পূর্বে এই শিলাবতী নদীতে একটি শালকাঠের সাঁকো ছিল, যা প্রতি বছর বর্ষার আগে মেরামত করতে হতো। এলাকাবাসী ও প্রশাসনের দীর্ঘ আলোচনার পর, এই অস্থায়ী ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এখানে কংক্রিটের একটি নবনির্মিত সেতু নির্মাণ করা হবে, যা মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করবে। সেই সেতু নির্মিতও হয়েছিল। কিন্তু এবারের নজিরবিহীন বন্যায়, নদীর জলস্তর এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, সেই নবনির্মিত কংক্রিটের সেতুটি সম্পূর্ণভাবে ডুবে গেছে এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে, সম্প্রতি নির্মিত বাইপাসটিও বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।
ফলে, এখন এসব এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন সেই আদিম নৌকা। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রী, ব্যবসায়ী, এমনকি অসুস্থ রোগীকেও এই নদী পার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছতে না পেরে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার খবরও আসে।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, “ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এই একই দৃশ্য। আমাদের ছেলেমেয়েরাও এই নৌকাতেই পারাপার হচ্ছে। একটি স্থায়ী সেতু তৈরি হওয়ায় আমরা আশার আলো দেখেছিলাম, কিন্তু এই বন্যায় সব শেষ করে দিল।”
সরকার উন্নয়নের কথা বলে, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা বলে। কিন্তু আজও এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই অঞ্চলের মানুষেরা একটি স্থায়ী সেতুর অভাবে দৈনন্দিন জীবনে যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তা কি সমাজের চোখ এড়িয়ে যাবে? বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও, ক্ষতিগ্রস্ত সেতু কবে মেরামত হবে বা নতুন করে কবে স্থায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে হুমগড় থেকে ভূতশহর পর্যন্ত বিস্তৃত এই জনপদের মানুষের মনে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার,বন্যায় বিপর্যস্ত হুমগড় থেকে ভূতশহর।

Leave a Reply