
পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- সামনেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। এই সময়টায় শহর থেকে গ্রাম সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে পূজার প্রস্তুতিতে। তবে পূজার এক অন্যতম অঙ্গ হলো প্রতিমার সাজ। আর এই সাজের খ্যাতি এখন শুধু রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর ২ নং ব্লকের ঝুরিয়া গ্রামের গৃহবধূ সুমিতা গিরিও তেমনই একজন শিল্পী, যিনি নিজের গায়ে গহনা না জুটলেও, মায়ের জন্য গহনা তৈরি করেই আনন্দ পান। তাঁর হাতে তৈরি ডাকের সাজের গহনা এখন শুধু বাংলা নয়, বিদেশেও জনপ্রিয়। বছরের পর বছর ধরে তিনি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, যা তাঁর ভালোবাসা ও নিষ্ঠার প্রতিফলন। সামনেই গণেশ পুজো, বিশ্বকর্মা পুজো এবং তারপর দুর্গাপূজা, লক্ষ্মী ও কালীপূজা। এই উৎসবগুলির জন্য এখন থেকেই দম ফেলার ফুরসত নেই ঝুরিয়া গ্রামের সুমিতা গিরির। শোলার কাজ করা তাঁর নেশা, ভালোবাসা এবং তাঁর পরিবারের আয়ের অন্যতম উৎস। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে যখন অভাব নিত্যসঙ্গী, তখনো তিনি তাঁর এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। শোলার টুকরোগুলো দিয়ে তিনি তৈরি করেন নানা ধরনের গহনা, যেমন মুকুট, কানপাশা, নথ, হার, চুড়ি ইত্যাদি। তাঁর স্বামী ও ছেলে-মেয়েরাও তাঁকে এই কাজে সাহায্য করে। তাঁদের ছোট বাড়িটি এখন যেন এক কর্মযজ্ঞের কেন্দ্র। নিজেদের সংসারের অভাব-অনটন থাকলেও, মায়ের প্রতিমার জন্য গহনা তৈরি করতে তাঁদের ক্লান্তি নেই। যখন তিনি দেখেন, তাঁর হাতে গড়া গহনায় মায়ের প্রতিমা সেজে উঠেছে, তখন তাঁর সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে যায়। তাঁর এই ভালোবাসা ও নিষ্ঠা এখন তাঁর শিল্পের প্রধান শক্তি।
পারিবারিক সমর্থন সুমিতা গিরির এই সফলতার অন্যতম কারণ। তাঁর স্বামী বলেন, “আমার স্ত্রী একজন গৃহবধূ হয়েও যে এত সুন্দর কাজ করে, তাতে আমি খুব খুশি। এই কাজ আমাদের সংসার চালাতে সাহায্য করে, কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হলো, এই কাজ তার ভালোবাসা। তাই আমরা সবাই তাকে সহযোগিতা করি।” অভাবের মাঝেও শিল্প বেঁচে থাকে, এই কথাটি যেন সুমিতা গিরির জীবন দেখে সত্যি মনে হয়। তিনি একজন সাধারণ গৃহবধূ হয়েও তাঁর শিল্প দিয়ে অসাধারণ কিছু করে চলেছেন। তাঁর এই নিষ্ঠা, ভালোবাসা এবং পরিশ্রম আগামী প্রজন্মের কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।












Leave a Reply