নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা—মালদার হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের রঞ্জিতপুর কবিরাজপাড়া গ্রামে স্বাধীনতার প্রায় আট দশক পরেও হয়নি রাস্তা।আজো গ্রামের মেলেনি রাস্তা,গ্রামের বাসিন্দারা চাষের জমির আলপথ ধরে আজো চলাচল করছেন ।রাস্তার জন্য লড়াই কয়েক পুরুষ ধরেই চালিয়ে গিয়েছেন গ্রামের মহিলা পুরুষ সকলেই। অবশেষে প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে নিজেরাই গ্রামের রাস্তার জন্য জমি কিনে গ্রামের নামে। গ্রামের সকলেই নিজের সামর্থ্য মত চাঁদা দিয়ে প্রায় ১০০ মিটার জমি কিনে রাস্তা করেছেন। কিন্তু তারপরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ প্রায় ৩০ মিটার জায়গা প্রয়োজন। সেই জমির মালিক কোন মতেই বিক্রি করতে রাজী নন জমি। তাতেই বাসিন্দাদের স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্যামল হাঁসদা বলেন, আমরা রাস্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছি। অবশেষে আমরা বাসিন্দারা চাঁদা তুলে জমি কিনে কিছুটা রাস্তা করতে পেরেছি। আরো কিছুটা জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমির মালিক বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না। আমরা প্রশাসনের দারস্থ হয়েছি। কিন্তু সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না।
মালদার হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের রঞ্জিতপুর কবিরাজপাড়া গ্রাম। পাশের গ্রাম গান্ধিনগর পর্যন্ত রাস্তা রয়েছে। তারপর প্রায় দেড়শো মিটার চাষের জমি। তারপরের গ্রাম কবিরাজ পাড়া। পাশাপাশি দুটি পাড়া নিয়ে এই আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। গ্রামে প্রায় ৩০০ পরিবারের বসবাস। স্থানীয়দের দাবি স্বাধীনতার আগে থেকেই এই গ্রাম রয়েছে। কিন্তু রাস্তা হয়নি। এখনো তাদেরকে চাষের জমির আলপথ দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোন সুরাহা না মেলায় বাসিন্দারা নিজেরাই রাস্তার জন্য জমি কিনতে এগিয়ে আসেন। সকলে চাঁদা তুলে টাকা জমা করেন। কেউ দুই হাজার আবার কেউ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন। কিছু জমিও কেনা হয়েছে। গ্রামের দিক থেকে রাস্তা হলেও পাশের গ্রামের মুখের জমির মালিক বিক্রি করতে নারাজ। তাতেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না এই গ্রামের।গ্রামের বাসিন্দা উকিল হেমব্রম বলেন, সরকার রাস্তা করে দেয়নি। আমরা চাঁদা তুলে জমি কিনে কিছুটা রাস্তা করেছি। আমি দুই হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছি।
গ্রামের বাসিন্দারা জানান মোট তিন কাঠা জমি কিনেছেন। চওড়াই ছয় ফিট ও লম্বাই প্রায় একশো মিটার রয়েছে। লম্বাই আরো প্রায় ৩০ মিটার জমি পেলেই পার্শ্ববর্তী গ্রামের রাস্তার সঙ্গে জুড়ে যাবে। প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য জ্যোৎস্না সরেন বলেন, আমি পঞ্চায়েত সদস্য থাকাকালীন গ্রামবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে কিছুটা রাস্তা কিনেছি নিজেরাই চাঁদা তুলে। তবে সমস্যা থেকেই গিয়েছে। কারণ এক ব্যক্তি জমি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। আমরা প্রশাসনের কাছে বহুবার বিষয়টি জানিয়েছি।
গ্রামে রাস্তা না থাকায় উন্নয়ন থেকে অনেকটাই বঞ্চিত কবিরাজপাড়া গ্রাম। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে সমস্যায় পড়ছে। অন্যান্য কাজে করতে গিয়েও নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বিশেষ করে গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে খাটিয়ায় করে তাদের নিয়ে যেতে হয়। কারণ রাস্তা না থাকাই কোনরকম যানবাহন গ্রামে পৌঁছাতে পারেনা। অঞ্জলি টুডু বলেন, রাস্তা না থাকায় চরম সমস্যা আমাদের। বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে খাটিয়ায় করে নিয়ে যেতে হয়। গ্রামের ছোট ছোট শিশুরা পড়াশোনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। সমস্যার সমাধান কবে হবে জানি না।
যদিও গ্রামের এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান পাণ্ডব সিংহ। তাঁর বক্তব্য আমি নিজে গ্রামবাসীদের জমি কেনার সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আরো একজন জমির মালিক কোনোমতেই জমি বিক্রি করতে চাইছেন না। আমরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এই বিষয়ে। প্রয়োজন পড়লে? ঘুর পথে রাস্তার ব্যবস্থা করা হবে। এই বিষয়ে প্রশাসনের কর্তাদেরও জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান পান্ডব সিংহ।
৮০ বছর পরেও রাস্তা নেই, চাষের আলপথেই যাতায়াত রঞ্জিতপুর কবিরাজপাড়ার বাসিন্দাদের।

Leave a Reply