সোনারপুর একটি শহর ও প্রশাসনিক ব্লক যা পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত এবং এটি রাজপুর সোনারপুর পৌরসভা হিসেবে পরিচিত। এটি একটি শান্ত আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনকালে পরাধীন ভারতে ১৯২৩ সালে রাজপুর পৌরসভা গঠিত হয়েছিল, এবং পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে এর পরিধি বিস্তৃত হয়ে বর্তমান রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৮, ৯,১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ,১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ড। সোনারপুর সম্প্রদায় উন্নয়ন ব্লকের কালিকাপুর-১, কালিকাপুর-২, লাঙ্গলবেড়িয়া, পোলেঘাট, প্রতাপনগর এবং সোনারপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত। সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রটি ২২ নং যাদবপুর (লোকসভা কেন্দ্র) -এর একটি অংশ । বর্তমানে সোনারপুর দক্ষিণ কেন্দ্রের স্বাক্ষরতার হার ৯০.১৪ শতাংশ। কিন্তু তা তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা কতখানি সার্থক করেছে তা সময়ের প্রশ্ন।
১৯৯৪ এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ পরীক্ষা দিয়ে বন্ধুর সাহায্যে সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের চাঁদমারি মাঠের কাছে একটি মেস ভাড়া নিই, সেখানে থেকেই চাকরি ও ভবিষ্যৎ- এর পরিকল্পনা শুরু করি। সারাদিন পড়াশোনার পর রাতে ২/৩ জন বন্ধুকে নিয়ে গোটা এলাকা চষে বেড়াতাম।৩০ বছর আগের সোনারপুরের মানুষের মধ্যে ছিল এক অপূর্ব প্রাণচঞ্চলতা ও গতিশীলতা ।
চাঁদমারি সংলগ্ন পুকুরে পূর্ণিমার চাঁদের ছায়ায় ছিল এক অদ্ভুত অনুভূতি ও মাদকতা।
সোনারপুরের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের অনিন্দ্যসুন্দর যোগ আছে। পৈত্রিক সূত্রে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু -র নাম জড়িয়ে আছে সোনারপুরে, সেই অর্থে সোনারপুর একটি ঐতিহাসিক স্থান। সোনারপুর দক্ষিণের সাথে যেন এক ঘনিষ্ঠ যোগ গড়ে উঠেছিল আমার। প্রায় এক বছর মতো সেখানেই ছিলাম, সেই অর্থে সমূহ এলাকা ছিল হাতের তালুর মত চেনা।ঠিক করলাম জমি কিনবো। অবশেষে ধার দেনা করে ৩ কাঠার মত জমি কিনলাম ১৪ হাজার টাকায়। ভেবেছিলাম ঘর বাঁধবো,হল না।
সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র এর নম্বর ১৪৭ , সিডিউল কাস্ট অর্থাৎ SC দের জন্য নির্ধারিত নির্বাচনী ক্ষেত্র। এখানকার পূর্বতন বিধায়ক ছিলেন প্রয়াত জীবন মুখোপাধ্যায়, তিনি বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাসের স্বনামধন্য অধ্যাপক ছিলেন, বর্তমান বিধায়ক অরুন্ধতী মৈত্র, যিনি লাভলি মৈত্র নামে পরিচিতি।এই নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ১০৭ জন।ব্লক এর সংখ্যা ৭টি ব্লক,১১টি পঞ্চায়েত এর মধ্যে কামারাবাদ অন্যতম, এখানেই ছিল আমার জমি। লোকসভা কেন্দ্র যাদবপুর,২০২৪ এ যাদবপুর কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সায়নী ঘোষ, তার হয়ে ওয়েবকুপা থেকে আমরা নির্বাচনী মহা মিছিলে হেঁটেছি। এখানেই জমি কিনেছিলাম।অর্থ সংকটের জন্য কয়েক বছর পর জমিটি বিক্রি করতে হয় বাধ্য হয়ে ,বাস আর হলো না কিন্তু এখানের বিপত্তারিণী চন্ডী বাড়ি ছিল জাগ্রত, এখানেও ছিল আমার আনাগোনা ও হৃদয়ের টান,এই ধর্মীয় স্থানটি ছিল এলাকার মানুষের কাছে স্বপ্নপূরণের পীঠস্থান । এই বিধান সভা কেন্দ্রের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন এখানে অবস্থিত, রাজ্যের এক সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। গতবার এখানে মক পার্লামেন্টের কলেজ স্তরের প্রতিযোগিতায় অন্যতম বিচারক ছিলাম।
এই কেন্দ্র তথা এলাকায় সুন্দরবন অঞ্চলের বহু মানুষ এসে জমি কিনে বসত বাড়ি করেছেন। সন্দেশখালি,কোঠাকাঠি,শুকদোয়ানি,ভান্ডারখালি ,
ধুচনিখালি থেকে অসংখ্য পরিবারের বাস এখন সোনারপুর দক্ষিণ কেন্দ্র,আমার অসংখ্য আত্মীয় স্বজন এখানে বাড়ি করেছেন, নিজের দাদা, ভগ্নিপতি,তাদের পুত্র, ভাইপোদের বাস এখানে, আমি নিজেও তফসিলি জাতি ভুক্ত, বর্তমানেও এখানে সেই সূত্রে প্রায়ই আসতে হয়।তাই এখানকার সাথে যেন আমার নাড়ির যোগ যা প্রতিনিয়ত স্মৃতিকে উচাটন করে। বর্তমানে এলাকার উন্নয়নের গতিধারা যথার্থ হয়নি বলে জনমানসে সে গুঞ্জন শোনা যায়। তবে স্মৃতি বিজড়িত সোনারপুর এর সমূহ উন্নয়ন যেন
সব মানুষের মনের মণিকোঠায় প্রজ্বলিত হয়, স্মৃতির সোনারপুরের সেই স্বপ্ন যা মাঝে মাঝে মধ্যরাতের ঘুম ভাঙ্গায় ,তা যেন সার্থক ও অত্যুজ্জ্বল হয়,সেই প্রত্যাশা ও কামনা করি,দুচোখ ভরে তার মেদুরতা যেন তাড়িয়ে বেড়ায় ।
(লেখক পরিচিতি:ইতিহাসের অধ্যাপক ও উপাধ্যক্ষ সিটি কলেজ ,সহ -সভাপতি ওয়েবকুপা রাজ্য কমিটি, WhatsApp -7797551405)
Leave a Reply