হিমাদ্ৰী শেখর মণ্ডল,দিব্যেন্দু সরকার ও রাজীব দত্ত, সন্দেশখালি,কামারপুকুর, কলকাতা : – অবিভক্ত চব্বিশ পরগনার ৫২টি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বিনোদ বিহারী গায়েনের কনিষ্ঠ পুত্র মহীতোষ।পঞ্চম শ্রেণিতে হাফ প্যান্ট পরে বন্ধুর সঙ্গে নদী তীরে মাছ ধরার আনন্দ,অন্যের দোকান ঘর পাহার দেওয়া, নদীতীরে মোটর বোট তুলতে বড়দের সঙ্গে শ্রমের শরিক হয়ে ৪টাকা উপার্জন ছিল বড়ই আনন্দের,
এটিই ছিল তার জীবনের প্রথম উপার্জন,তখন ৪টাকা মানে বেশ খুশি হওয়ার মত।ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্যের বাড়িতে থেকে মাঝে মধ্যে গোয়াল ঘরে শোওয়ার নিয়তি যার কৈশোরে । পঞম শ্রেণিতে বাবা ভর্তি করেন বাবারই প্রতিষ্টিত স্কুল সন্দেশখালি রাধারাণী হাইস্কুলে।সন্দেশখালিতে বাবার হাতে গড়া শিক্ষক হরিবিলাস সিংহের বাড়িতে বাবা রেখেছিলেন। সেখানেই পড়া শুরু। জ্বর অবস্থায় একা একা বাড়িতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে তার বাবা ষষ্ঠ শ্রেণিতে
ছোট মোল্লাখালি স্কুলে ভর্তি করেন,সেখানে জামাইবাবুর বাড়িতে থাকা, কিন্তু রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে পুণরায় সন্দেশখালিতে, আবার অষ্টম শ্রেণিতে কালীননগর স্কুলে বাবা ভর্তি করেন, সেখানে হস্টেলে থেকে পড়াশোনার জন্য।
অর্থ সঙ্কটের কারণে অষ্টম, নবম ,দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় খিদের জ্বালায় স্কুল সংলগ্ন যাত্রাপালার মাঠে বাদাম কুড়িয়ে খেতে হয়েছে, সকাল বেলায় প্রার্থনার পর হস্টেলের অবস্থাপন্ন দাদাদের টিফিন এনে দেওয়ার বিনিময়ে খাবারের ভাগ পাওয়ার আনন্দের লড়াই ছিল অবশ্য তার বেদনার তৃপ্তি।
যদিও এই অর্থ সংকটের মধ্যে পড়াটাও এক নির্মম নিয়তি। বাবা ছিলেন সুন্দরবনের স্থানীয় এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
মাত্র ৮বছর শিক্ষকতা করে সুন্দরবন তথা অবিভক্ত ২৪ পরগনার মানুষদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে,সমাজ গড়ার কাজের জন্য স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলেন, সংসারে নেমে এলো তীব্র অর্থ সংকটের কালোমেঘ। তীব্র প্রতিকূলতাকে জয় করে একে একে ৫২টি স্কুল গড়ে তুললেন তিনি।
মহীতোষের কথায়- “আমাদের সব কষ্ট জল হয়ে গেল মানুষের কল্যাণে বাবার এই ব্রত ও সমাজকল্যাণকর কাজে।জমি জমা এক এক সব বিক্রি হয়ে গেল,কাজের বিনিময়ে কোন অর্থ নিতেন না বাবা।কালীনগর হস্টেলে অষ্টম শ্রেণি থেকে থাকতাম,স্টাইপেন্ড পেতাম,সে টাকা থেকে হস্টেলে মাসের থাকা খাওয়ার খরচের টাকা কেটে নেওয়া হত,কারণ বাবার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না মাসের টাকা দেওয়ার মতো,কারণ তিনি যে পরোপকারী সংসার সন্ন্যাসী।একদিন এক রুমমেট এর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তুচ্ছ এই কারণে সুপারের ঘরে ডেকে আমাকে বেত দিয়ে ভীষণ প্রহার করা হয়,মারতে মারতে সেই শিক্ষকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক অদ্ভুত বাণী,”বিনা পয়সায় খেতে লজ্জা করে না, টাকা দিতে পারিস না আবার বাহাদুরি?” তিনি ছিলেন জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক,নামটি আর বলছি না,
সেদিন থেকেই আমার তীব্র জেদ বাসা বাঁধে রক্তে, রক্ত গরম হয়ে যায়,মুখ বুজে নির্মম প্রহার সহ্য করেছি, সেদিন থেকেই শপথ নিলাম আমাকে কিছু একটা করে দেখাতে হবে।
মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা অংকে মাত্র ১৩পেয়েছিলাম (Unlike thirteen ).। বাবাকে ডেকে পাঠানো হয়। প্রধান শিক্ষক বলেন,” স্যার ,(প্রধান শিক্ষক ছিলেন শশাঙ্ক শেখর মন্ডল, যিনি বাবারই ছাত্র ছিলেন) আমরা কোন বিষয়ে ফেল করা ছাত্রদের হস্টেলে রাখি না,কারণ এতে স্কুলের বদনাম হয়। বাবা বলেছিলেন, ছেলেকে আমি নিয়ে যাব ঠিকই, কিন্তু যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই,” শশাঙ্ক, আমার মাথা খারাপ(বুদ্ধি) তা আমার ছেলের মাথা আর কত ভালো হবে?” আর ঠিক সেদিন মাথায় বিদ্যুৎ চমকে ওঠে, কঠিন প্রত্যয়ে মনে মনে স্থির করি, কিছু একটা করতেই হবে, প্রধান শিক্ষককে ছাপিয়ে যেতে হবে ।মনের অগোচরে তীব্র জেহাদ কষ্টের মধ্যে থেকে বাড়তে লাগলো । যথারীতি মাধ্যমিক পাশ করলাম ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে, অংকে ৪৫ পেলাম, গুরুদেব শিক্ষক দিলীপ দেববর্মণ এর কাছে শিখলাম গ্রাফ ও মিডল টার্ম ফ্যাক্ট, ভালো করে রপ্ত করলাম, এই গুরুদেবই আমার কৈশোরের মন্ত্রদাতা পুরোহিত।তখন জীবনের অংকে সমানে পীড়া দিচ্ছে, বিজ্ঞান নিয়ে পাটানখালি কলেজে ভর্তি হলাম,তখন থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ড্র,পরে Re Counting ১ভোটে হারিয়ে দেওয়া হলো, পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলো অগত্যা বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পালাতে হলো,৩/৪ দিন পর মা এর কান্না আর দাদার সন্ধ্যানে ধরা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
এবার নতুন উদ্যমে তৈরি হওয়ার জন্য আদা জল খেয়ে লাগার পালা। দক্ষিণ বারাসত কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়ে মেসের মালিক দিলীপ পুরকাইতের বদান্যতায় ভোটের সময় সেক্টর অফিসে এক দিনের হোম গার্ড হয়ে ৩৫০ টাকা আমার দ্বিতীয় উপার্জন, কাউকেই যেন সেই তৃপ্তি পেতে না হয়,ঈশ্বরের কাছে এ আমার করুণ আর্তি!!! এক জামা এক প্যান্ট অর্থাৎ ছেঁড়া স্কুল ড্রেস পরে শীত গ্রীষ্ম অতিবাহিত করা, পুজোর সন্ধ্যায় রাস্তার ধারে বসে নতুন পোশাকের এর আশায় অশ্রু মিশ্রিত স্বপ্নময় আনন্দরা মিছিল করে মন ও মননে আজও ধাক্কা দেয়,এখনো বঞ্চনা ও মর্যাদার লড়াই চলছে আজও এবং অবিরত।” তাই মরমী
কবি জয় গোস্বামীর কবিতার লাইন মনে পড়ে আজও বারবার….
” ঝাড় খেতে খেতে শেষ হয়ে গেছি
ঝাড় খেতে খেতে শুরু;
অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়েছি গুরু”।
তবে আমার এই উঠে দাঁড়ানো কারো ঈর্ষা ও হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ,যা কাম্য নয়, মাঙ্গলিক বীণার তারটা বারবার ছিঁড়ে যাচ্ছে , ভুবনভাঙার মাঠে একটি পঞ্চম শ্রেণির ছোট্ট ছেলের কান্না কেউ না শুনতে পেলেও চরাচর,আকাশ,বাতাস, বাংলার মাঠ -ঘাট ,ফুল,পাখি ও নদী আজও স্বাক্ষ্য বহন করে চলছে।অনন্ত গোধূলিতে আজও সে সুর অদৃশ্য হয়ে বেড়ায়।”
“সবার জন্য শুভকামনা জানিয়ে বলতে হয়…
আমি ঈশ্বরের সৃষ্টি ,কালের রাখাল। তবে মানুষের মঙ্গলের জন্য দরকার রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্থাৎ জন প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ, যদি তার সারবত্তা কতখানি তার হদিস হয়তো ঈশ্বরেরও জানা নেই।
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রথিতযশা কবি সুবোধ সরকারের কবিতা মনে পড়ে “দুঃখ ছিল গ্রামেও কিন্তু রাগ ছিল না নিশীথ কালে/যে দুঃখটা ভারত জুড়ে,সে দুঃখটা চালে ডালের” সেই দুঃখ কীভাবে মোচন হবে জানি না,তবে অপেক্ষায় রইলাম কালের রাখালের মত”
মহীতোষ উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এম.এ পাস করে। ছাত্র রাজনীতিতে তখন তার দাপট,পর পর দু’বার ছাত্র সংসদের নির্বাচিত হয়েছেন।এরপর কর্মসংস্থান এর খোঁজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিলে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েও চান্স না পেয়ে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে, আন্দোলন করে ভর্তি হলেন এম.ফিলে ,সোনারপুর মেসে থেকে চাকরির পড়াশোনা করতে করতে অন্ন সংস্থানের জন্য দিশা না পেয়ে বাণীপুর বিএড কলেজ ভর্তি,এম.ফিল ডিগ্রি অর্জন আর হলো না দৈব দুর্বিপাকে।বাণীপুর বিএড কলেজ থেকে ফাস্ট ক্লাস পেয়ে বন্ধুর সহায়তায় অশোকনগরে একটি এক কামরার ছোট্ট ঘরভাড়া নিয়ে নিজের হাতে রান্না করে খেয়ে সারা দিন রাত টিউশনি করে খরচ চালাতে থাকলেন, ইতোমধ্যেই এম.এ ক্লাসের সহপাঠী মৌসুমীকে রেজিস্ট্রি করে বন্ধনে জড়িয়ে পড়লেন। টিউশনি করে খরচ চালাতে শুরু করলেন। এভাবেই দিন কাটছিল, হঠাৎ এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে কল পেয়ে অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান ১৯৯৭ এর নভেম্বরে,তার আগেই এপ্রিল মাসে সামাজিক ভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়। অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলে সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন দীর্ঘ সাড়ে ১২ বছর, শিক্ষক রাজনীতিতে পূর্ণমাত্রায় জড়িয়ে পড়লেন, স্কুল শিক্ষকতা করতে করতে সেট পরীক্ষায় ইতিহাসে ৩৯জনের মধ্যে ১৩তম স্থান পেলেন ২০০৮ এ , কলেজ সার্ভিস কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১০- এর এপ্রিলে হুগলির শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামহাপীঠ (কামারপুকুর কলেজ) অধ্যাপনা শুরু করেন, ইতিহাসের অধ্যাপক হিসেবে। ২০১৫-১৬ কামারপুকুর কলেজ তখন ছাত্র রাজনীতির গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে জেরবার। মারামারি রক্তপাত দেখে স্থায়ী প্রিন্সিপাল চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে পুরানো কলেজ চলে গেলেন,তখন ছাত্র ভর্তি চলছে। কেউ ভয়ে টিচার ইনচার্জ হতে চাইলেন না,সবাই Un Willing দিলেন, অগত্যা ১৪নম্বর সিনিয়র হিসেবে মহীতোষ দায়িত্ব নিলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের,২০১৬ এর ৫অক্টোবর,১০ মাস সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করলেন, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সূকৌশলে বন্ধ করে কলেজের স্থিতাবস্থা ফেরালেন, উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা অনুদান যোগাড় করলেন, কলেজে সিসি ক্যামেরা বসালেন, নতুন বিল্ডিং হলো সেই অর্থে, ৮ জন
শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী দীর্ঘ ৮বছর ধরে কাগজপত্রের সমস্যার জন্য পেনশন পাচ্ছিলেন না, তারই অদম্য প্রয়াসে তাঁরা পেনশন পেলেন, ফুলের বাগান করলেন,আজকের কামারপুকুর কলেজের যে সাজানো পরিপাটি রূপ,তা তাঁর অবদান,মাত্র ১০ মাস ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন বাড়ির পাশে আসার জন্য ।কলেজ সার্ভিস কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে ২০১৭ সালের ৬জুলাই সিটি কলেজ এ জয়েন করলেন,২০২২ এর মে মাসে হায়ার এডুকেশন কাউন্সিল বিলের এক ধারা অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে ভাইস প্রিন্সিপাল এর নিয়োগপত্র পেলেন। ভাইস প্রিন্সিপাল হওয়াতে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন তার কলেজের প্রিয় শিক্ষিকা শর্মিলা রায় ও প্রিয় শিক্ষক প্রথিতযশা কবি সুবোধ সরকার। বর্তমানে মহীতোষ সেখানেই কর্মরত ,২০২৫ এ দীর্ঘ ২৮ বছর তার এই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা।
এবার আসি তার সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক জীবনের বর্তমান দ্বিতীয় অধ্যায়ের। তার বাবা কংগ্রেস রাজনীতি করতেন ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর সন্দেশখালি ইউনিয়ন বোর্ডের দায়িত্ব সামলেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ছিলেন আলিপূর জাজেস কোর্টে জুরির বিচারক। এরপর পর কংগ্রেস রাজনীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মনোরঞ্জন শূরের আহ্বানে সিপিআই তে যোগ দেন।১৯৭১ সালে হিঙ্গলগঞ্জ কেন্দ্রে টিকিট পান। কিন্তু সিপিএম -এর ভোট জালিয়াতির শিকার হন, বিনোদ বিহারীর পক্ষে পড়া ভোটের ব্যালট বাক্স সিপিএম পুকুরে ফেলে দিয়ে মাত্র একহাজার ভোটে জালিয়াতি করে বিনোদ বিহারীকে হারায় । ২০১১-র জানুয়ারিতে মহীতোষ এর পিতা প্রয়াত হন।২০১১ তে ভোট আসন্ন, বাংলায় পালা বদলের বছর এটি। সিপিআই এর সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত সিপিআই এর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জীকে প্রস্তাব দিলেন ,বিনোদদা এতগুলো স্কুল করেছেন, দক্ষ রাজনীতিবিদ, ভালো মানুষ তার কনিষ্ঠ পুত্র কামারপুকুর কলেজের অধ্যাপক, ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতিতে দক্ষ, সুবক্তা ও বিনয়ী তাকে এবার হিঙ্গলগঞ্জ কেন্দ্রের টিকিট দেওয়া হোক ।স্বপন ব্যানার্জী বললেন, ওনার ছেলে সিপিআই এর পার্টি মেম্বার নয় , সিপিএম এর পার্টি মেম্বার নয়,পত্রপাঠ খারিজ হলো প্রস্তাব। বিনোদ বিহারীর রাজনৈতিক শিষ্য পার্টি মেম্বার আনন্দ মন্ডল যথারীতি টিকিট পেলেন, মন্ত্রী গৌতম দেবও বলেছিলেন সিপিআই নেতাদের, ‘আপনাদের প্রার্থী নির্বাচন ঠিক হয়নি, আনন্দ মন্ডল এর নামে কেসও আছে।তাই মহীতোষকে টিকিট দেওয়া হোক ,সে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লড়াকু অধ্যাপক’, সিপিআই নেতৃত্ব আরো রেগে আনন্দ মন্ডলকেই টিকিট দিলেন। আনন্দ মন্ডল অবশ্য বিনোদ গায়েনের ভাবমূর্তি ভাঙিয়ে খুলনা অঞ্চলের ১হাজার ভোটে জয়ী হন।
মহীতোষ বামফ্রন্টের প্রতি তীব্র অসন্তুষ্ট হয়ে
কংগ্রেস দলে যোগ দেন ২০১২ তে এবং সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লক কংগ্রেসের সহ সভাপতি পদ দেন সভাপতি অনিল সরকার। তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করলো,৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মহীতোষ অবশ্য ২০১২ র ডিসেম্বরে ওয়েবকুপার প্রথম রাজ্য সম্মেলনের থেকে অর্থাৎ ওয়েবকুপার শুরু থেকেই ওয়েবকুপা করছেন। ওয়েবকুপার তখন তত্ত্বাবধায়ক, শিক্ষা সেলের দায়িত্বে মুকুল রায়, কৃষ্ণকলি বসু হলেন প্রেসিডেন্ট। শিক্ষামন্ত্রী তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মহীতোষ ইতিমধ্যেই কামারপুকুর কলেজের ওয়েবকুপার ইউনিট কনভেনার নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে গেল, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য্যের নজরে আসেন মহীতোষ, তিনি বলেন, “আপনি ভালো অধ্যাপক, এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন, আপনি আমাদের প্রার্থী হন’
পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হিসেবে টিকিট দিলেন মহীতোষকে, কংগ্রেস সংগঠন তখন খুব দূর্বল জেনেও ভালো ফল করলেন, দীর্ঘ বছর জেতা সিপিএম প্রার্থী তপন প্রামাণিক সেই কারণেই পরাজিত হন,ফলে তৃণমূল জয়লাভ করলো। তখন
সন্দেশখালি তৃণমূল কংগ্রেসের ২নম্বর ব্লক সভাপতি লক্ষ্মন অধিকারী, তিনি মহীতোষকে ও কংগ্রেসের স্থানীয় শিক্ষক সঞ্জয় মন্ডলকে তৃণমূলে যোগ দিতে আহ্বান জানান, তিনি ভালো ফল করার জন্যে মহীতোষকে ও সঞ্জয়বাবাবুকে সন্দেশখালিতে এক বিরাট সমাবেশে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা দুজনের হাতে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তুলে দিলেন ,মহীতোষকে জয়েন্ট সেক্রেটারি ও সঞ্জয়বাবাবুকে সহ সভাপতির পদ দিলেন। মহীতোষ তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবাদর্শে উদ্দীপ্ত হয়ে চুটিয়ে মিটিং, মিছিল পথসভা করে যাচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে পার্টি অফিসে বসছেন। ইতিমধ্যে বছর অতিক্রান্ত হলো, একদিন পার্টি অফিসে গিয়ে জানতে পারলেন তাকে সহ আরো ১৩ জনকে ব্লক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনা নোটিশে না জানিয়ে বিনা কারণে এই ঘটনায় খুব দুঃখ পেলেও অসন্তোষ প্রকাশ না করে পার্টি অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলেও দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতেন মহীতোষ,দলকে ভালোবেসে ,জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আকর্ষণ ও মুগ্ধতা থেকে দল ছাড়েন নি, সেই থেকেই আজও একনিষ্ঠ ভাবে দলের কাজ করে যাচ্ছেন অক্লেশে। মহীতোষ অবশ্য মনস্থির করলেন স্থানীয় রাজনীতিতে আবিষ্ট না থেকে অধ্যাপক সংগঠনটা ভালো করে করি,যা ভাবা তাই কাজ, সেই ২০১২ থেকেই শুরু করে ২০১৩ থেকে রাত দিন এক করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তৈরি লোগো, দলনেত্রীর স্বপ্নের ওয়েবকুপার তিনি আজও অতন্দ্র নিষ্ঠাবান স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সৈনিক, মিটিং মিছিল,দলের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে সদা ব্যস্ত তিনি, নিজের কর্নিমষ্ঠার দ্বারা রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেন, সমস্ত সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তিনি আজও সক্রিয়। ২০২১ এর নতুন রাজা কমিটিতে অ্যাসোসিয়েট সেক্রেটারি হলেন মহীতোষ। শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান তখন অধ্যাপক ব্রাত্য বসু।২০২৪ সালে অধ্যাপক ব্রাত্য বসু দায়িত্ব পেলেন ওয়েবকুপার নতুন সভাপতির, তার নেতৃত্বে ওয়েবকুপায় এলো প্রাণের সঞ্চার,রাজ্য সম্মেলন হলো গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে।সহ সভাপতি তখন মণিশঙ্কর মন্ডল ও সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়, মণিশঙ্কর মন্ডল নানান সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলায় যুক্ত,নতুন রাজ্য কমিটি গঠিত হলো। নতুন রাজ্য কমিটিতে মণিশঙ্কর মন্ডল তার সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অবমাননার জন্য বাদ পড়লেন ,সহ সভাপতি হলেন্ সেলিমা বক্স মন্ডল ও সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।। ২০২৫ এর ৭ ফেব্রুয়ারি নবরূপে অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর নির্দেশনায় নতুন রাজ্য কমিটি পুনর্গঠন হলো দলের অনুমোদনে, জেনারেল সেক্রেটারি হলেন কৃষ্ণকলি বসু, যিনি আজ প্রয়াত, নতুন সভাপতি অধ্যাপক ব্রাত্য বসু ,সহ সভাপতি বাড়ালেন তিনি ,৩জন সহসভাপতির মধ্যে জায়গা পেলেন মহীতোষ।ওয়েবকুপায় এলো নবজাগরণ,
১মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৫হাজার অধ্যাপকদের নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা ও সেমিনার।
যা ওয়েবকুপার ইতিহাসে প্রথম নিদর্শন।
সেদিনের ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দেয়, অধ্যাপক ব্রাত্য বসুর উপর হলো হুলিগানদের আক্রমণ, তিনি আহত হলেন।মহীতোষ, অধ্যাপকদের নিয়ে মিছিল করলেন।অতি অল্প সময়ে ৩৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি ও ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠিত হলো। সভাপতির নির্দেশনায়। হঠাৎ করে ২৫সেপ্টেম্বর দল নানা অভিযোগে শিক্ষা সেল ভেঙে পুজোর পর নতুন রাজ্য ও জেলা কমিটি গঠনের ঘোষণা করলো দলীয় ভাবে।
মহীতোষ ২০১৪ থেকেই ২০২৪ এর সমস্ত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর হয়ে মিটিং, মিছিল, জনসভায় পথসভায় বক্তব্য রাখা, দলের হয়ে নিরবধি কাজ করে যেতে থাকলেন বিভিন্ন জেলায় জেলায় বিভিন্ন দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে নিবেদিতপ্রাণ মহীতোষ । দলের কাছে কখনোই কোনো পদের জন্য দাবি করেন নি। অত্যন্ত বিনয়ী, বিচক্ষণ, দক্ষ এহেন অধ্যাপক দলের ও সংগঠনের সব কাজে ঝড়,জল, বৃষ্টিতে দিবারাত্র তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করেও অবিরাম অবিরত দীর্ঘ ১২ বছর ধরে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলীয় আদর্শকে পাথেয় করে একনাগাড়ে আজও করে চলেছেন দল ও সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগৎ -এ এক নিষ্ঠাবান, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সুপরিচিত মুখ তিনি ,এজন্যই সংগঠনের অধিকাংশ অধ্যাপকের প্রিয় ও ভালোবাসার পাত্র তিনি।
শুধুমাত্র এই আত্মতুষ্টিতে থাকবেন তিনি?শিক্ষা, সংগঠন, দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ বা জনপ্রতিনিধিত্ব করার দাবি কখনো করেন নি বা চান নি তিনি বা সে বিষয়ে কোনো প্রস্তাবও দলীয় ভাবে আসে নি কখনো। জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,দল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ও সাংগঠনিক ঊর্ধ্ব নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে তার। তাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দলীয় ও সাংগঠনিক কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে এক যুগ ধরে তিনি।এই আত্মতুষ্টি নিয়েই কী কাটবে কর্মযোগী জনহিতৈষী এই অধ্যাপকের বাকিটা জীবন? নাকি ২৯৪ এর কোন কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে তাকে বা কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে, মা মাটি -মানুষের গুঞ্জনে ,সেই প্রশ্ন ভুবন ডাঙার মাঠে অনুরণিত।
Leave a Reply