বালুরঘাট, নিজস্ব সংবাদদাতা : – মাত্র আট বছর বয়স। চোখে একরাশ স্বপ্ন, হাতে কাদামাটি ও রংতুলি। আর সেই হাতেই এখন রূপ পাচ্ছে মহাকালী। বালুরঘাটের আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মোহিত মহন্ত এখন শহরের ছোট্ট আকর্ষণ। পাড়ার মানুষও অবাক হয়ে দেখছেন, কী নিপুণ হাতে এই খুদে শিল্পী গড়ে তুলছে দেবীমূর্তি।
মোহিতের হাতে এখন প্রায় দেড় ফুট উচ্চতার কালী প্রতিমা। নিজেই তৈরি করেছে, নিজেই রঙ দিচ্ছে। তবে এই প্রতিমায় পুজো নয়, শুধু দর্শনের জন্যই রাখবে সে বাড়ির সামনে। মোহিত হাসিমুখে বলে, ‘এটা আমার প্রথম কালী। পুজোর পরেও রাখব, বিসর্জন দেব না।’ এর আগে গণেশ, কার্তিক, শিব—অনেক প্রতিমাই তৈরি করেছে সে, কিন্তু সেগুলো জলে মিলিয়ে দিয়েছিল। শিল্পের সূত্রপাত অবশ্য পরিবারের ঐতিহ্যেই। মোহিতের দাদু বিপিন কামেত ছিলেন প্রতিমা শিল্পী। দাদুর কাছ থেকেই ছোটবেলায় শেখা সেই মাটির টান। পাঁচ বছর বয়স থেকেই শুরু। এখন দাদু আর নেই, কিন্তু দাদুর শেখানো হাতের কাজ যেন আজও বেঁচে আছে এই ছোট্ট নাতির মধ্যে। বর্তমানে মোহিত থাকে তার মাসি ও দিদার সঙ্গে। বাবা কৈলাস মহন্ত দিল্লির এক কুরিয়ার অফিসে কাজ করেন। মা শ্রাবণী কামেত মহন্তও রয়েছেন সেখানে। তবুও দূরে থেকেও ছেলের প্রতিভার খবর তাদের কাছে প্রতিদিনই পৌঁছে যায়। বাড়িতে এখন রং-তুলি, কাদা, বাঁশ—সব মিলিয়ে উৎসবের গন্ধ। কালীপুজোর আগে ব্যস্ততার মধ্যেই বলে মোহিত, ‘বড় হয়ে আমি বড় প্রতিমাশিল্পী হতে চাই। দাদুর মতো।’
মোহিতের মামা রোহিত কামেত নিজেও প্রতিমাশিল্পী। তিনি বলেন, ‘আমি এখন বালুরঘাটের একাধিক পুজো উদ্যোক্তার বড় প্রতিমা তৈরি করছি। আমার খুড়তুতো দিদির ছেলে মোহিত ছোটবেলা থেকেই প্রতিমা গড়ার প্রতি ভীষণ আগ্রহী। আমি যেমন আমার জেঠু অর্থাৎ মোহিতের দাদু বিপিন কামেতের কাছেই প্রতিমা তৈরির শিক্ষা পেয়েছি। ঠিক তেমনি দাদুর শেখানো শিল্পই ও এখন বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এত অল্প বয়সেই ওর আগ্রহ দেখে সত্যি অবাক লাগে।’
মোহিতের কথায়, ‘আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে প্রতিমা বানাচ্ছি। দাদুর কাছ থেকে শেখা প্রতিটি ধাপ এখনও মনে আছে। এই প্রথম কালী প্রতিমা বানাচ্ছি, যা পুজোর পরও রাখব। বড় হয়ে আমি এই শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
বালুরঘাটের মানুষের চোখে মোহিত যেন কেবল এক খুদে শিল্পী নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিমাশিল্পীর প্রাথমিক রূপ। তার মাটির হাত, দাদুর শেখানো শিল্প আর মনোবল—সব মিলিয়ে এখন গড়ছে নতুন সম্ভাবনার ছবি। কেউ জানে না, হয়ত একদিন এই খুদের হাত থেকে জন্ম নেবে শহরের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রতিমা।
Leave a Reply